ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া আইএস যোদ্ধার পত্নী শামিমা বেগম ব্রিটেনে ফিরতে পারবেন৷ তাকে দেশটিতে গিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানানোর সুযোগ দেয়া উচিত বলে রায় দিয়েছে আদালত৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামিমা বেগম পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী ছিলেন৷ ২০১৫ সালে দুই বান্ধবীকে নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় চলে যান৷ সেখানে ডাচ বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গি ইয়াগো রিদাইককে বিয়ে করেন৷ সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বছরই যুক্তরাজ্য সরকার শামিমার নাগরিকত্ব বাতিল করে৷
এক বৃটিশ সাংবাদিক গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে শামীমার সাথে কথা বলেন৷ সাক্ষাৎকারে শামিমা যুক্তরাজ্যে ফেরার আগ্রহের কথা জানান৷
কিন্তু ব্রিটেনের সরকার বলে আসছে, শামিমা জন্মগতভাবে বাংলাদেশি নাগরিক এবং সে সেখানে চলে যেতে পারে৷ এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে আবেদন করেন শামিমা৷ তিনি অন্য কোনো দেশের নাগরিক নন এবং সরকারের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছেন বলে আদালতকে অবহিত করেন তার আইনজীবী৷
বৃহস্পতিবারের রায়ে বলা হয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানানোর জন্য শামিমাকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেয়া উচিত৷ সেই সঙ্গে তিনি ব্রিটেনে ফিরলে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে৷
তার আইনজীবী ড্যানিয়েল ফার্নার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, শামিমা ব্রিটিশ বিচারের মুখোমুখি হতে ভয় পায় না এবং এই রায়কে তিনি স্বাগত জানান৷ কিন্তু সুযোগ না দিয়ে তার নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া কোনো ধরনের বিচার হতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
এফএস, এসিবি (ডিপিএ, এপি)
১৫ ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...
সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বন্দিজীবন
যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় আইএস জঙ্গিরা এখন সিরিয়ায় বন্দি৷ ১০ হাজারের বেশি জঙ্গি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রাখা হয়েছে সিরিয়ার হাসাকা শহরে৷ ছবিঘরে দেখুন সেখানে কেমন আছেন তারা৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
জঙ্গিদের বন্দিজীবন
২০১৪ সালে ইসলামি খেলাফত কায়েম করার কথা বলে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু করে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)৷ যুদ্ধের সময় অনেক মানুষ হত্যা করেছে তারা৷ কিন্তু গত বছর যুদ্ধে নিজেদের শেষ ঘাঁটিটিও হারানোর পর থেকে তারা বন্দি৷ সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের হাসাকা শহরে বন্দি আছে দশ হাজারেরও বেশি জঙ্গি এবং জঙ্গিদের স্ত্রী, সন্তান৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
কুর্দিদের কাছে বন্দি
যুদ্ধের সময় এই এলাকাটি ছিল কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে৷ পরাজিত আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে পুরেছে কুর্দিরাই৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
জায়গার অভাব
কোয়ামিশি শহরের কাছের এই এলাকাটিতে একটি কারাগার রয়েছে৷ সেখানে সব জঙ্গির জায়গা হয়নি৷ তাই স্থানীয় স্কুলেও রাখা হয়েছে আইএস যোদ্ধা এবং তাদের সহায়তাকারীদের৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
দুই হাজার বিদেশি
যুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মানুষ আইএস-এ যোগ দিয়েছিলেন৷ তারাও এখন বন্দি৷ হাসাকার দশ হাজারের মধ্যে অন্তত দুই হাজার জঙ্গিই বিদেশি৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
বিদেশিদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
কুর্দি যোদ্ধারা জানিয়েছেন, এত বন্দি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তায় রাখতে তারা হিমসিম খাচ্ছেন৷ বিদেশি বন্দিদের অনেকেই এসেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে৷কিন্তু কোনো দেশই তাদের ফেরত নিতে চায় না৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
‘আমাদের কী শাস্তি হবে?’
সিরীয় আইএস যোদ্ধা মাহমুদ মোহাম্মদ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমাদের কী হবে জানতে চাই৷ আমরা আমাদের পরিবার সম্পর্কে কিছু জানি না৷ তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, সিরিয়ায় আছে নাকি বাইরে, কিছুই জানি না৷ তাছাড়া কী শাস্তি হবে তা-ও আমরা জানি না৷’’
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
হাসপাতালে শতাধিক জঙ্গি
হাসাকার ৫০ শয্যার হাসপাতালে রয়েছে শতাধিক অসুস্থ এবং যুদ্ধাহত জঙ্গি৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
নারী, শিশু বাইরে
জঙ্গিদের স্ত্রী এবং সন্তানদের কারাগারের বাইরে রাখা হয়েছে৷ নারীরা ঘোরাফেরা করতে পারেন, শিশুরা খেলতে পারে মাঠে৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
‘দেশে ফিরতে চাই না’
কুর্দি যোদ্ধাদের অনুমতি নিয়ে নয়জন আইএস জঙ্গির সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স৷ তবে জঙ্গিদের স্ত্রীরা কথা বলতে রাজি হননি৷ হংকং থেকে আসা এক নারী কথা বললেও নাম প্রকাশ করতে চাননি৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা সন্তান৷ স্বামী মারা গেছে৷ আমি জানি এখানে পরিস্থিতি ভালো নয়৷ এটা কোনো ঘর নয়, স্রেফ একটা তাঁবু৷ তবু আমি দেশে ফিরবো না৷ সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হয়৷ আল্লাহ চাইলে সব ভালো হবে৷’’