নিষিদ্ধ ঘোষিত চরম ডানপন্থি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকায় এক তরুণী ও তিন তরুণকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত৷ ২৪ বছর বয়সি তরুণী ‘মিস হিটলার' সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
‘মিস বুশেনভাল্ড’ নামে ‘মিস হিটলার’ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন এক রেস্তোরাঁর ওয়েট্রেস অ্যালিস কার্টার৷ মঙ্গলবার তিনিসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ডানপন্থি সংগঠন ন্যাশনাল অ্যাকশন (এনএ)-র সঙ্গে জড়িত থাকায় শাস্তি ঘোষণা করেছে বার্মিংহামের ক্রাউন কোর্ট৷
অ্যালিস কার্টারের তিন বছর, তার ২৫ বছর বয়সি সাবেক বয়ফ্রেন্ড মার্ক জোন্সের সাড়ে পাঁচ বছর এবং গ্যারি জ্যাক ও কনর স্কোদার্ন নামের অন্য দুজনকে যথাক্রমে চার বছর ও ১৮ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ একই মামলায় গত বছর আরেক ব্যক্তিকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷
‘মিস হিটলার’ প্রতিযোগিতা আয়োজনসহ অনেক ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ডানপন্থি ভাবাদর্শ প্রচার করছিল ন্যাশনাল অ্যাকশন৷ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১৬ সালে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়৷
অ্যালিস কার্টারের সাবেক বয়ফ্রেন্ড মার্ক জোন্স তারপরও সংগঠনটির হয়ে কাজ করে যান৷ সাজা পাওয়া বাকি তিন তরুণও সংগঠনের সদস্য হিসেবে জোন্সকে সহায়তা করেছেন৷ তবে আদালত জানায়, ‘মিস বুশেনভাল্ড’ নামে ‘মিস হিটলার’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অ্যালিস সদস্য না হলেও নিষিদ্ধ সংগঠনটির ‘বিশ্বস্ত অনুসারী’৷
কিছু স্বৈরশাসক সামরিক শক্তি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকেন, কেউ আবার টিকে থাকেন তথাকথিত গণতন্ত্রের আবরণে৷ আজকের ছবিঘরে থাকছে ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর কয়েকজন স্বৈরশাসকের কথা৷
নিষ্ঠুরতার তালিকায় নিঃসন্দেহে সবার আগে থাকবে জার্মানির আডল্ফ হিটলারের নাম৷ হিটলারের অপরাধের তালিকাও বেশ বড়৷ এক কোটিরও বেশি মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ এর মধ্যে ৬০ লাখই ছিলেন ইহুদি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার কারণেই শুরু হয়, সে যুদ্ধে প্রাণ হারান সাত কোটি মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP
মাও সে তুং
মাও-কে বলা যেতে পারে আধুনিক চীনের রূপকার৷ তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বহু মানুষকে হত্যার অভিযোগ৷ ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুসরণে অর্থনৈতিক মডেল দিয়ে উন্নয়নের কথা বলেন৷ হত্যা করা হয় সাড়ে চার কোটি মানুষকে৷ ১০ বছর পর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে আরো প্রায় তিন কোটি মানুষকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে মাও-এর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/AFP
জোসেফ স্টালিন
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ভ্লাডিমির লেনিনের মতে স্টালিন ছিলেন অনেক কঠোর স্বভাবের মানুষ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার নেতৃত্বে হিটলারের জার্মানিকে হারাতে ভূমিকা রাখে সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ কিন্তু স্টালিন নিজেও ছিলেন স্বৈরাচারী৷ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদেরই নয় শুধু, তার ৩১ বছরের শাসনামলে হত্যা করা হয় অন্তত ২০ লাখ মানুষকে৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/TopFoto
বেনিতো মুসোলিনি
ফ্যাসিজমের প্রণেতা হিসেবে মনে করা হয় ইটালির এই স্বৈরশাসককে৷ ১৯২২ সালে ফ্যাসিস্ট শক্তি কিংডম অব ইটালির ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি৷ তার থেকেই জার্মান ফ্যাসিস্ট শাসক হিটলার অনুপ্রেরণা পান বলে ধারণা করা হয়৷ ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে ক্ষমতাচ্যূত হন মুসোলিনি৷ ১৯৪৫ সালে স্পেনে পালানোর সময় তাকে হত্যা করা হয়৷
ছবি: AP
ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো
স্পেনের গৃহযুদ্ধে জয়ী হয়ে ১৯৩৯ সালে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো৷ গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অন্তত দেড় লাখ বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ যুদ্ধের পরও কমপক্ষে ২০ হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অক্ষশক্তির অন্যসব শাসকের পতন ঘটলেও ফ্রাঙ্কো ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৭৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
পল পট
কম্বোডিয়ার খেমার রুজ আন্দোলনের নেতা ছিলেন পল পট৷ ক্ষমতায় আরোহণের পরবর্তী ১০ বছরে ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় তাকে৷ বেশিরভাগের মৃত্যু হয় শ্রম ক্যাম্পে অনাহারে অথবা কারাগারে নির্যাতনের ফলে৷ ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ার বনে পল পট গেরিলাদের উপস্থিতি ছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Chhin Sothy
ইয়াহিয়া খান
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পান ইয়াহিয়া খান৷ সে বছরই স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের কাছ থেকে পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করেন তিনি৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা ও দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি বাহিনী৷ পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশ গণহত্যা’ নামে পরিচিত এই নৃশংস ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় তাকে৷
ছবি: imago/ZUMA/Keystone
ফ্রাঁসোয়া দুভেলিয়ে
১৯৫৭ সালে হাইতির ক্ষমতায় বসেন দুভেলিয়ে৷ হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যার নির্দেশ দেন তিনি৷ কালো জাদু দিয়ে মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখেন, এমন দাবিও করতেন তিনি৷ হাইতিয়ানদের কাছে ‘পাপা ডক’ নামে খ্যাত ছিলেন এই স্বৈরশাসক৷ ১৯৭১ সালে মৃত্যুর পর তার ১৯ বছর বয়সি ছেলে জ্যঁ ক্লদ দুভেলিয়ে স্বৈরশাসক হন৷
ছবি: picture-alliance / United Archives/TopFoto
অগাস্তো পিনোশে
চিলির সামরিক বাহিনীর প্রধান অগাস্তো পিনোশে দেশটির সমাজতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করেন ১৯৭৩ সালে৷ ক্ষমতায় আসার পর দেশ থেকে বামপন্থা নির্মূলের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিরোধী কর্মীকে হত্যা নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে পিনোশের বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Llanquin
সাদ্দাম হোসেন
কুর্দি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের ঘৃণা কারো অজানা ছিল না৷ ১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে তিন লাখ কুর্দিকে ইরাকে হত্যা করা হয়৷ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও ছিল সাদ্দামের বিরুদ্ধে৷ মার্কিন বাহিনী ইরাক দখলের পর সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০০৬ সালে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/INA
ইদি আমিন
আফ্রিকার দেশ উগান্ডার ক্ষমতায় সাত বছর ছিলেন ইদি আমিন৷ তার বিরুদ্ধে আড়াই লাখ মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে৷ জাতিগত নিধন, হত্যা ও নির্যাতনের এক অধ্যায় রচনা করেছিলেন ইদি আমিন৷ ‘উগান্ডার কসাই’ আখ্যাও পেয়েছিলেন তিনি৷ উৎখাত হওয়ার পর সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিলাসী জীবনযাপন করেছেন এই একনায়ক৷
ছবি: Getty Images/Liaison
মেঙ্গিস্তু হাইলে মারিয়াম
ইথিওপিয়ার এই সমাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নির্যাতন চালান৷ ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮— এই এক বছরেই পাঁচ লাখ মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর গণহত্যার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ তবে মারিয়াম পালিয়ে যান জিম্বাবোয়েতে৷
ছবি: AP
কিম ইল সুং
উত্তর কোরিয়ার এই নেতাই দেশটিতে কিম বংশের শাসন চালু করেন৷ ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়া দখল করে দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিযান চালালে শুরু হয় কোরিয়ান যুদ্ধ৷ এই যুদ্ধে মার্কিন সেনা এবং জাতিসংঘের সেনারাও জড়িয়ে পড়ে৷ এ যুদ্ধে উভয় পক্ষে মারা যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: AP
মুয়াম্মার গাদ্দাফি
৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি৷ হাজার হাজার মানুষকে, বিশেষ করে গণতন্ত্রকামীদের নির্বিচারে হত্যা ও নারীদের ধর্ষন, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার শাসনামলে৷ ২০১১ সালে এক অভ্যুত্থানে তাকে উৎখাত ও হত্যা করা হয়৷ তারপর থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে দেশটিতে৷