শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশাবাদীদের মনে বিশ্বাস ছিল, ব্রিটেনের মানুষ ইইউ-তে থাকার পক্ষেই ভোট দেবেন৷ কিন্তু শুক্রবার সকালে স্পষ্ট হয়ে গেল, যে ব্রেক্সিট শিবিরেরই স্পষ্ট জয় হয়েছে৷ পুঁজিবাজারে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
How Brits voted
00:46
সরকারি ফলাফল ঘোষণার আগে বিবিসি জানিয়েছিল, যে বৃহস্পতিবারের গণভোটে ৫২ শতাংশ ভোটার ব্রেক্সিট-এর পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ইইউ-পন্থি শিবির পেয়েছে ৪৮ শতাংশ৷ অর্থাৎ ভোট গণনার শেষ লগ্নেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যে এই কঠিন বাস্তব এড়ানোর কোনো উপায় নেই৷
এমন একটি মৌলিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সমাজে ব়্যাডিকাল বিভাজন নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন অনেকে৷
গণভোটের এই রায়ের ফলে ব্রিটেন, ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বের পুঁজিবাজারকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল ব্রিটিশ ভোটারদের রায়৷ এশিয়ার পুঁজিবাজারে দরপতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ সকালেই ব্রিটিশ পাউন্ডের বিনিময় হার রেকর্ড মাত্রায় কমে গেছে৷ মাত্র ৬ ঘণ্টায় এই মুদ্রার ১০ শতাংশ দরপতন ঘটেছে৷
দেশ-বিদেশের প্রায় সব আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানই এর পূর্বাভাষ দিয়েছিল৷ আর্থিক লেনদেনের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে লন্ডনের গুরুত্ব এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাবে বলেও সাবধানবানী শোনা গিয়েছিল৷
রাজনৈতিক জগতেও গণভোটের রায়ের প্রতিক্রিয়া শোনা যাচ্ছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ইউরোপ ও ব্রিটেনের জন্য এটি একটি দুঃখের দিন৷
এডওয়ার্ড স্নোডেন সহ একাধিক খ্যাতিমান ও সাধারণ মানুষ টুইটারে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷
ব্রেক্সিট-এর সিদ্ধান্তের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চরম দক্ষণপন্থি শিবির বিপুল উৎসাহ পেয়েছে এবং এই প্রশ্নে গণভোটের দাবি করছে৷ ফ্রান্সের শক্তিশালী দল ন্যাশানাল ফ্রন্ট-এর নেত্রী মারিন ল্য পেন ব্রিটিশ ভোটারদের রায়কে স্বাগত জানিয়ে ফ্রান্স সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশে গণভোট আয়োজনের ডাক দিয়েছেন৷ নেদারল্যান্ডস-এর চরম দক্ষণপন্থি নেতা খেয়ার্ট ভিল্ডার্স-ও একই দাবি তুলেছেন৷
এসবি/জেডএইচ (রয়টার্স, এএফপি, এপি, ডিপিএ)
ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মুখে ব্রিটেন
ব্রিটিশ ভোটাররা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, যার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছেড়ে দেবার পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে দুই শিবির৷ দাঁড়িপাল্লায় সমর্থনের মাত্রা প্রায় সমান-সমান৷
ছবি: Reuters/T. Melville
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
একক বাজার ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের মতো লাভজনক সুবিধার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ব্রিটেনের কোনো আপত্তি নেই৷ কিন্তু শুধু পণ্য ও পরিষেবা নয়, নাগরিকদের অবাধ প্রবেশের অধিকার, অভিন্ন মুদ্রা, শরণার্থীদের আশ্রয়ের মতো বিষয় তাদের পছন্দ নয়৷ এই ভাবমূর্তি কতটা ঠিক, গণভোটে তার প্রমাণ পাওয়া যবে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
ব্রেক্সিট-এর প্রবক্তাদের যুক্তি
‘লিভ’ ক্যাম্পেন ভোটারদের উদ্দেশ্য ইইউ-র আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মের বেড়াজাল থেকে ব্রিটেনকে মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে৷ তাদের যুক্তি, নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ‘স্বাধীনতা’ ফিরে পেলে ব্রিটেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, বিশ্বে তাদের মর্যাদা বাড়বে৷
ছবি: Imago
‘ব্রেক্সিট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে’
ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে প্রবল অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্রিটেনের ব্যবসা-বাণিজ্য জগত৷ তাদের মতে, ভবিষ্যতে ইইউ-র সঙ্গে সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হলেও প্রথম কয়েক বছরে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Halle'n
মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ
ব্রেক্সিট শিবির ব্রিটিশ ভোটারদের সামনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷ যেমন তাদের দাবি, তুরস্কের নাগরিকরা নাকি অদূর ভবিষ্যতে দলে দলে ব্রিটেনে বসবাস করতে আসছে৷ ‘রিমেন’ শিবিরের বিরুদ্ধেও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. J. Ratcliffe
ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগের রূপরেখা
ইইউ-র বাইরে ব্রিটেনের বিকল্প সম্পর্কে স্পষ্ট চালচিত্র দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রেক্সিট শিবির৷ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেও এই দুই দেশকে যে বাধ্যতামূলকভাবে ইইউ-র অনেক নীতি কার্যকর করতে হয়, সেই সত্যটা গোপন রাখা হচ্ছে৷
ছবি: DW/B.Riegert
ইউরোপে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ
ভোটাররা ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে রায় দিলেও ব্রিটেন-এর সঙ্গে ইইউ-র সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ সংহতি দেখানোর বদলে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে আলাদা ছাড় দাবি করার ব্রিটিশ অভ্যাস নিয়ে বিরক্ত ইইউ-র বেশিরভাগ দেশ৷