ব্রুনাইয়ের শরিয়া আইনে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড যুক্ত করা হয়েছে৷ এই মৃত্যুদণ্ড আবার হতে হবে পাথর ছুড়ে ও বেত্রাঘাতে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো দেশটির এমন উদ্যোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুলতানি শাসনতন্ত্রের দেশ ব্রুনাই ২০১৪ সালে শরিয়া পেনাল কোড চালু করে৷ প্রথম পর্যায়ে ব্যভিচার বা শুক্রবারের জুম্মার নামাজে অংশ না নেয়ার জন্য জরিমানা ও জেলের বিধান চালু করা হয়৷
তবে শরিয়া পেনাল কোডের সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো ব্যভিচারী, সমকামী ও ধর্ষকদের বেত্রাঘাত ও পাথর ছুড়ে হত্যা, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার কারণে চালু করতে বিলম্ব করছে ব্রুনাই সরকার৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিশ্চিত করেছে যে, আগামী ৩ এপ্রিল নাগাদ এসব শাস্তি পুরোদমে চালুর পরিকল্পনা আছে তাদের৷
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার সংগঠন ‘দ্য ব্রুনাই প্রজেক্ট'এর কর্মী ম্যাথু উল্ফের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ তিনি বলেছেন যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে শরিয়া আইন চালু থাকলেও ব্রুনাইয়ের মতো এত কঠোর অবস্থানে কেউ নেই৷ ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু পকেট আছে যেখানে শরিয়া আইনের প্রয়োগ রয়েছে৷ যেমন মালয়শিয়ার কয়েকটি রাজ্যে এ ব্যবস্থা আছে৷ তবে কোথাও ব্রুনাইয়ের মতো এত কঠোর নয়,'' বলেন উল্ফে৷
ব্রুনাইয়ের এই আইন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন এই মানবাধিকার কর্মী৷ ‘‘ব্রুনাইতে সমকামের শাস্তি ব্রিটিশ ঔপনেশিবেশিক আমল থেকে৷ সেখানে সমকামের শাস্তি ১০ বছরের জেল৷ তবে আমার জানা মতে, এই আইন কখনো প্রয়োগ করা হয়নি,'' বলেন উল্ফে৷ ‘‘তবে এই নতুন আইন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে৷''
তিনি বলেন, হঠাৎ করে কেন ব্রুনাই সরকার এই আইন প্রয়োগের ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছে, তা পরিষ্কার নয়৷ ‘‘আমার মনে হয় না, ব্রুনাইয়ের জনগণ এই আইন চালুর ব্যাপারে কোনো চাপ দিয়েছে, এবং সরকারও এ ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেনি৷ অবশ্যই সেখানে অনেক মানুষ এই আইন ও তার প্রয়োগ নিয়ে উৎকন্ঠায় আছেন৷ তাই কেন এই আইনের ব্যাপারে সরকার আগ্রহী হয়ে উঠল তা পরিষ্কার নয়৷''
ইউরোপের কোন দেশে কত ধার্মিক?
ধর্মচর্চার দিক থেকে ইউরোপের দেশগুলো খুব একটা পিছিয়ে নেই৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ধার্মিক লোকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি৷
ছবি: Farzad Seifikaran
গবেষণা পদ্ধতি
২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপের ৩৪টি দেশে গবেষণাটি পরিচালিত হয়৷ মূলত তিন ক্যাটেগরিতে এটি করা হয়৷ এগুলো হলো: অত্যন্ত ধার্মিক, মাঝারি পর্যায়ের ধার্মিক ও কম ধার্মিক৷ নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ধর্মকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করেন, মাসে একবার ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন, দিনে অন্তত একবার প্রার্থনা করেন ও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন, তাঁদের ‘অত্যন্ত ধার্মিক’ ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছে৷
ছবি: rangizzz/Fotolia
রোমানিয়া
গবেষণা বলছে, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার্মিকের বাস রোমানিয়াতে৷ দেশটির শতকরা ৫৫ ভাগ লোক অত্যন্ত ধার্মিক৷ তবে নিয়মিত প্রার্থনার ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান তৃতীয়৷ গবেষণা বলছে, দেশটির ধার্মিকদের শতকরা ৪৪ ভাগ প্রতিদিন উপাসনা করে থাকেন৷
ছবি: DW
আর্মেনিয়া
ইউরোপের দেশগুলোতে ধার্মিকের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আর্মেনিয়া৷ দেশটির শতকরা ৫১ ভাগ লোক অত্যন্ত ধার্মিক বলে দাবি করছে গবেষণাটি৷ এর মধ্যে শতকরা ৪৫ ভাগ লোক প্রতিদিন প্রার্থনা করেন, যা ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়৷
ছবি: dpa
জর্জিয়া
দেশটিতে শতকরা ৫০ ভাগ লোক অত্যন্ত ধার্মিক৷ সে হিসেবে, ধার্মিকের সংখ্যার দিক থেকে ইউরোপের দেশগুলার মধ্যে জর্জিয়ার অবস্থান তৃতীয়৷ তবে প্রতিদিন প্রার্থনা করার সংখ্যার দিক থেকে দেশটির অবস্থান পঞ্চম (শতকরা ৩৮ ভাগ উপাসনাকারী)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Leemage/ L. Ricciarini
গ্রিস
শতকরা ৪৯ ভাগ অত্যন্ত ধার্মিক নিয়ে তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে দেশটি৷ তবে প্রতিদিন প্রার্থনা করার সংখ্যার দিক থেকে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে গ্রিসের অবস্থান নবম৷ পিউ রিসার্চ বলছে গ্রিসে ধার্মিকদের শতকরা ২৯ ভাগ লোক প্রতিদিন প্রার্থনা করেন৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Mehmet
মলদোভা
অত্যন্ত ধার্মিক ক্যাটেগরিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে মলদোভা৷ দেশটির শতকরা ৪৭ ভাগ লোক অত্যন্ত ধার্মিক৷ তবে এ ধার্মিকদের মধ্যে শতকরা ৪৮ ভাগ লোক প্রতিদিন প্রার্থনা করেন বলে জানায় পিউ রিসার্চ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Christoffersen
সবচেয়ে কম এস্তোনিয়াতে
উত্তর ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়াতে ধার্মিকের সংখ্যা সবচেয়ে কম৷ পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির শতকরা সাত ভাগ লোক অত্যন্ত ধার্মিক৷ এর মধ্যে শতকরা নয় ভাগ লোক প্রতিদিন প্রার্থনা করে থাকেন৷
ছবি: Farzad Seifikaran
ডেনমার্ক ও চেক প্রজাতন্ত্র
কম ধার্মিকের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক ও চেক প্রজাতন্ত্র৷ দেশ দুটিতে প্রতি এক’শ জনে আট জন অত্যন্ত ধার্মিক৷ ডেনমার্কে বসাবাসকারী ধার্মিকদের শতকরা ১০ ভাগ ও চেক প্রজাতন্ত্রের শতকরা নয় ভাগ প্রতিদিন প্রার্থনা করেন৷
ছবি: AP
জার্মানি ও ফ্রান্স
ইউরোপের দুই সমৃদ্ধরাষ্ট্র জার্মানি ও ফ্রান্সে অত্যন্ত ধার্মিকের সংখ্যা শতকরা ১২ ভাগ৷ সে হিসেবে গবেষণায় এই দুটি দেশের অবস্থান ২৬তম৷ একই অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ডও৷ গবেষণা বলছে, জার্মানির ধার্মিকদের শতকরা নয়ভাগ ও ফ্রান্সের ধার্মিকদের শতকরা ১১ ভাগ প্রতিদিন প্রার্থনা করেন৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
যুক্তরাজ্য
ধার্মিকতার দিক থেকে বিলেতের লোকজন অনেক পিছিয়ে৷ দেশটির শতকরা মাত্র ১১ ভাগ লোক অত্যন্ত ধার্মিক৷ আর ধার্মিকদের শতকরা ছয় ভাগ প্রতিদিন প্রার্থনা করেন বলে গবেষণা বলছে৷