ব্রেক্সিটের পর ‘অসাধারণ' বাণিজ্য চুক্তির টোপ দিলেন ট্রাম্প
৫ জুন ২০১৯
ব্রেক্সিট নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তার মাঝে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যামেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিলেন৷ ব্রিটেনের নানা অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কেও খোলামেলা বক্তব্য রাখলেন ট্রাম্প৷
বিজ্ঞাপন
ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের রাজনৈতিক কাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টেরেসা মে পদত্যাগ করতে চলেছেন৷ শুক্রবার দলের নেতা হিসেবে সরে দাঁড়াবেন তিনি৷ সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে টোরি দলে নেতৃত্বের লড়াই চলছে৷ বিরোধী লেবার দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্য নেই৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাবে আগামী ৩১শে অক্টোবর ব্রিটেন চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করতে পারে, এমন আশঙ্কা বেড়ে চলেছে৷
এমনই প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রীয় সফলে এসে ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অভূতপূর্ব হস্তক্ষেপের নজির গড়লেন৷ চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পক্ষে জোরালো সমর্থনের পাশাপাশি তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদারদের সম্পর্কে নিজস্ব ধারণা প্রকাশ্যে তুলে ধরলেন৷ সেইসঙ্গে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি নেতা বরিস জনসনকেই তিনি আগামী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান৷ জনসন-এর নেতৃত্বে ব্রিটেন চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করলে অ্যামেরিকার সঙ্গে ‘অসাধারণ' বা ‘বিস্ময়কর' বাণিজ্য চুক্তির টোপ দিলেন ট্রাম্প৷ এমন চুক্তির ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মাত্রা দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাবে বলে তাঁর ধারণা৷ ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ-এর সঙ্গেও আলাদা করে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প৷
ইইউ-র সঙ্গে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের প্রবক্তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এমন ‘লোভনীয়' দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সম্ভাবনা তুলে ধরে আসছেন৷ তাই ট্রাম্প-এর প্রস্তাব কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিদের জন্য সুখবর বয়ে আনছে৷ তবে জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো কিছু ‘স্পর্শকাতর' ক্ষেত্র উন্মুক্ত করার বিষয়ে ব্রিটেনে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে৷ ট্রাম্প বলেছিলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় কোনো বিষয়ই উহ্য রাখা যায় না। পরে অবশ্য তিনি স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রশ্নে সুর কিছুটা নরম করেন৷ তবে বরিস জনসন-ও এমন সার্বিক বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন৷
এতকাল ব্রিটেনের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে এলেও মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টেরেসা মে-র ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ ব্রেক্সিট নিয়ে ইইউ-র সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ অবদানের উল্লেখ করেন ট্রাম্প৷ তবে মে সম্ভবত কখনোই সেই প্রাপ্য কৃতিত্ব পাবেন না৷ ট্রাম্প বলেন, টেরেসা মে-র সঙ্গে এতকাল কাজ করে তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছেন৷ মে সম্পর্কে নরম সুরে কথা বললেও ট্রাম্প খোলাখুলি লেবার দলের নেতা জেরেমি কর্বিন ও লন্ডন শহরের মেয়র সাদিক খান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন৷
মঙ্গলবার লন্ডনে ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে৷ বিরোধী লেবার দলের নেতারাও তাতে যোগ দেন৷ ট্রাম্প নিজে অবশ্য বিষয়টিকে খাটো করে দেখিয়ে বলেন, বেশিরভাগ মানুষ ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উড়িয়েছেন৷ সামান্য কিছু মানুষ প্রতিবাদ দেখিয়েছেন মাত্র৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন যাঁরা
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ৭ জুন কনজারভেটিভ দলের নেতার পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এরপর অনেকেই সেই পদে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ আর যিনি ঐ পদে যেতে পারবেন তিনিই হবেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/L. Neal
বরিস জনসন
নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে বুকমেকারদের ফেভারিট তিনি৷ তিনি লন্ডনের সাবেক মেয়র ও টেরেসা মে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন৷ ৫৪ বছর বয়সি জনসন গতবছর বোরকা পরিহিত নারীদের নিয়ে বক্তব্য রেখে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা খুবই হাস্যকর যে, মানুষকে লেটার বক্সের মতো সেজে বের হতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/A. Yates
ডমিনিক রাব
সাবেক ব্রেক্সিটমন্ত্রী রাব সম্ভবত বরিস জনসনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন৷ রাব-এর বাবা ইহুদি শরণার্থী ছিলেন, যিনি নাৎসি জার্মানি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Dunham
মাইকেল গোভ
ব্রেক্সিট ক্যাম্পেইনের অন্যতম নেতা ছিলেন৷ ২০১৬ সালে ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে শামিল হয়েছিলেন৷ অবশ্য সেবার তিনি প্রথমে বরিস জনসনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নিজেই প্রার্থী হয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/C. J. Ratcliff
জেরেমি হান্ট
৫২ বছর বয়সি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য পক্ষ পরিবর্তন করেন৷ বরিস জনসনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে হান্ট একবার বলেছিলেন, ব্রেক্সিট আলোচনার সময় ব্রাসেলস ‘উদ্ধত’ আচরণ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Pezzali
এস্থার ম্যাকভে
মে’র পদত্যাগের অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন সাবেক এই টেলিভিশন উপস্থাপক৷ গত নভেম্বরে তিনি টেরেসা মে-র ব্রেক্সিট চুক্তির প্রতিবাদে কর্ম ও পেনশনমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন৷ অবশ্য মার্চে সংসদে ভোটাভুটির সময় তিনি ঐ বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ব্রেক্সিট কার্যকর করার এটিই একমাত্র উপায়৷
ছবি: Getty Images/L. Neal
রোরি স্টুয়ার্ট
বরিস জনসন ও ডেভিড ক্যামেরনের মতো স্টুয়ার্টও এটন কলেজে পড়াশোনা করেছেন৷ বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন৷ সাবেক এই কূটনীতিক দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার ট্রেকিং করেছেন৷ কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের বিপক্ষে তিনি৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
ম্যাট হ্যানকক
টেরেসা মে’র পদত্যাগের ঘোষণার পরদিন তাঁর আগ্রহের কথা ঘোষণা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হ্যানকক৷ ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের সময় তিনি ব্রিটেনের ইউরোপে থাকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন৷ তবে এখন তিনি মনে করেন, একটি চুক্তির আওতায় ব্রিটেনের ইউরোপ ত্যাগ করা উচিত৷
ছবি: Imago/P. Maclaine
আন্দ্রেয়া লিডসম
২০১৬ সালে টেরেসা মে’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি৷ তবে তখনকার একটি মন্তব্যের ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন তিনি৷ লিডসম বলেছিলেন, একজন মা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন৷ উল্লেখ্য, টেরেসা মে অতীতে মা না হতে পারায় যন্ত্রণার কথা বলেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/W. Szymanowicz
সাজিদ জাভিদ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিদের বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি বাস চালক হিসেবে কাজ করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনিও প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন৷ এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মোর্ডন্ট, প্রীতি প্যাটেল, লিজ ট্রুস, স্টিভ বেকারের নামও শোনা যাচ্ছে৷