গোপন এক সরকারি রিপোর্টের এই ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র সঙ্গে যে বাণিজ্য চুক্তিই করা হোক না কেন, তা থেকে ব্রিটেনের অর্থনীতির হানি ঘটবে৷ স্বভাবতই পুরো রিপোর্টটি প্রকাশ করার দাবি উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
গোপন এ রিপোর্টটি প্রস্তুত করা হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের ব্যবহারের জন্য, কিন্তু সোমবার তা ফাঁস হয়ে যায়৷ বাজফিড নিউজের খবর অনুযায়ী রিপোর্টে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার ফলে যাবতীয় ব্রিটিশ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
এ খবর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সরকারের পক্ষে আরো একটি বিড়ম্বনা হয়ে উঠেছে, কেননা মে সরকার এর আগেই অন্যান্য ইইউ নেতাদের কাছ থেকে সমালোচনা শুনেছেন যে, লন্ডনের কোনো সঙ্গতিপূর্ণ ব্রেক্সিট নীতি নেই৷
বাজফিড নিউজের খবর অনুযায়ী রিপোর্টে বলা হয়:
- ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের ‘ইইউ এক্সিট অ্যানালিসিস – ক্রস হোয়াইটহল ব্রিফিং' শীর্ষক রিপোর্টটিতে তিনটি সম্ভাব্য ব্রেক্সিট সিনারিও-র দিকে নজর দেওয়া হয়েছে;
- প্রোজেকশনে দেখা যাচ্ছে যে, ব্রিটেন যদি ব্রাসেলসের সঙ্গে একটি ভবিষ্যৎ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্রেক্সিট পরবর্তী ১৫ বছরে আট শতাংশ অবধি কমে যেতে পারে;
- সবচেয়ে ভালো সিনারিও-র ক্ষেত্রে, অর্থাৎ ব্রিটেন যদি ইইউ-এর সদস্য না হয়েও ব্লকের সিঙ্গল মার্কেটে থাকতে পারে, সে পরিস্থিতিতেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশ কমবে;
- যুক্তরাজ্য যদি ইইউ-এর সঙ্গে একটি সমন্বিত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারে, কিন্তু ইইউ-এর একক বাজার ও শুল্ক সংঘের বাইরে থেকে, সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হ্রাস ঘটবে বর্তমানে যা ধরা হচ্ছে, তার চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি;
২০১৭ সালে বিশ্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ, নির্বাচনের পর এখনও জার্মানিতে সরকার গঠিত না হওয়া, ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষা – এ সবই ২০১৭ সালের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷
ছবি: Reuters/KCNA
জানুয়ারি
ছবিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিন (২০ জানুয়ারি) তোলা৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বিদায় জানাচ্ছেন তিনি৷ যৌন হয়রানিসহ নানান অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ জরিপের ফল উলটে বিশ্বকে চমকে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী কাম টিভি তারকা ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/S. Loeb
ফেব্রুয়ারি
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ বা পিএসএলভি সি-৩৭ রকেটে করে সফলভাবে একসঙ্গে ১০৪টি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে, যা একটি রেকর্ড৷ এর আগে একটি রকেটে করে একসঙ্গে এতগুলো উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণের ঘটনা ঘটেনি৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
মার্চ
২৯ মার্চ ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ করার প্রক্রিয়া শুরু করে৷ ২০১৬ সালের জুনে এক গণভোটে ভোটাররা ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেন৷ দু’বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা৷ ইইউ-র লিসবন চুক্তির সনদ ৫০ অনুযায়ী কোনো সদস্য দেশ ইইউ ত্যাগ করতে পারে৷ ছবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেকে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS/C. Furlong
এপ্রিল
ক্ষমতার রাশ পাকাপাকিভাবে নিজের হাতে তুলে নিতে ১৬ এপ্রিল সংবিধান পরিবর্তন সংক্রান্ত গণভোটের আয়োজন করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান৷ গণভোটের ফল তাঁর পক্ষে যায়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবর্গ এর্দোয়ানের এই সংকীর্ণ জয় সম্পর্কে বিশেষ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন না করলেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে টেলিফোন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Kose
মে
নেপোলিয়নের পর ফ্রান্সের সবচেয়ে কমবয়সি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ ৭ মে অনুষ্ঠিত রান-অফ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর জয় নিশ্চিত হয়৷ মাক্রোঁর জয়ে ইউরোপপন্থিদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে৷ কারণ তিনি পরাজিত হলে চরম দক্ষিণপন্থি নেত্রী ল্য পেন প্রেসিডেন্ট হতেন৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
জুন
আধুনিক জার্মানির ইতিহাসের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রাক্তন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল ১৬ জুন পরলোকগমন করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর৷ দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণে বিশাল অবদানের জন্য তিনি ‘পুনর্মিলনের চ্যান্সেলর’ বলেও পরিচিত ছিলেন৷ এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাফল্যের পেছনেও তাঁর বেশ অবদান ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
জুলাই
জার্মানির হামবুর্গ শহরে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অর্থনীতির দেশের সংগঠন জি-টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৭ এবং ৮ জুলাই৷ সম্মেলনে উপস্থিত শীর্ষ নেতারা প্রতিবাদকারীদের অর্থহীন হিংসার তীব্র নিন্দার ক্ষেত্রে ঐক্য দেখালেও জলবায়ু সংরক্ষণ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিবাদ মেটাতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
আগস্ট
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার অভিযোগ এনে দেশটির সামরিক বাহিনী ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতনসহ তাদের ঘরবাড়ি, গ্রাম পোড়ানো শুরু করে৷ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধন’ বলেছে জাতিসংঘ৷ নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ ছবিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের শিবির দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Imago/photothek/U. Grabowsky
সেপ্টেম্বর
২৪ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেও শরণার্থী নীতির কারণে অনেক ভোট হারায়৷ শরণার্থী বিরোধী দল এএফডি তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে৷ তবে এখনও সরকার গঠন করতে পারেননি ম্যার্কেল৷ প্রথম এফডিপি ও সবুজ দলের সঙ্গে সরকার গঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দল এসপিডির সঙ্গে আলোচনা করছে সিডিইউ৷
ছবি: imago/S. Zeitz
অক্টোবর
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করত৷ দু’বছর ধরে সেই শহর মুক্ত করার চেষ্টা চলেছে৷ অবশেষে অক্টোবরের ১৭ তারিখ ‘ব্যাটেল অফ রাকা’ শেষ হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের সহায়তায় সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স বা এসডিএফ আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রাকাকে মুক্ত করে৷ ছবিতে এসডিএফ-এর দুই নারী সেনাকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/R. Said
নভেম্বর
দীর্ঘ চার দশক ক্ষমতায় থাকার পর ২১ নভেম্বর পদত্যাগ করেন জিম্বাবোয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে৷ তার সপ্তাহখানেক আগে স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে ক্ষমতায় বসাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বহিষ্কার করেছিলেন মুগাবে৷ তাঁর এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি দলের সদস্যরা৷ পরে ১৯ নভেম্বর মুগাবেকে দল বহিষ্কার করা হয় এবং নতুন নেতা হিসেবে নানগাগওয়াকে স্বীকৃতি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/J.Njikizana
ডিসেম্বর
প্রায় সারা বছর উত্তর কোরিয়া বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে ছিল৷ কারণ আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ২০১৭ সালে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় দেশটি৷ নভেম্বরে দূরপাল্লার একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়া দাবি করে, এটি অ্যামেরিকা মহাদেশের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম৷ সেপ্টেম্বরে প্রকাশ করা এই ছবিতে কিম জং উনকে একটি রকেট পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/KCNA
12 ছবি1 | 12
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও অপরাপর দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বটে, কিন্তু ইইউ থেকে যে পরিমাণ আয় হতো, সে লোকসান মেটানো এই বহির্বাণিজ্যের পক্ষে সম্ভব হবে না;
- একমাত্র কৃষি ছাড়া ব্রিটেনের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি বিভাগের উপর ব্রেক্সিটের নেতিবাচক ফলশ্রুতি ঘটবে ও আন্তর্জাতিক অর্থবাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে লন্ডনের মর্যাদার আন্তরিক ক্ষতি ঘটবে;
- ব্রিটেন ইইউ ছাড়ার পর ব্রিটেনের অর্থনীতি যে নেতিবাচক মোড় নিতে পারে, সে বিষয়ে আগেও একাধিক রিপোর্টে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে৷
সরকারি তরফে রিপোর্টের কথা অস্বীকার করা হয়নি
‘ডিপার্টমেন্ট ফর এক্সিটিং দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন' – বা ব্রেক্সিট সংক্রান্ত সরকারি বিভাগ – রিপোর্টটির সত্যতা অস্বীকার না করলেও, রিপোর্টের বক্তব্য সম্পর্কে কোনোরকম মন্তব্য করতে অরাজি৷ বাজফিড নিউজ-কে যিনি খবরটি প্রদান করেন, সেই সূত্র রিপোর্টটি প্রকাশ না করার কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘‘রিপোর্টটি লজ্জাকর৷''
মঙ্গলবারের মধ্যেই একাধিক ব্রিটিশ সাংসদ সরকারের প্রতি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টটি প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ লেবার এমপি এবং ‘লিভ ওয়াচ' নামের ব্রেক্সিট ওয়াচডগ গোষ্ঠীর সভাপতি চুকা উমুন্না সরকারের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ জনগণের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ করেছেন৷
সরকার কিন্তু রিপোর্টটি প্রকাশ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র এক মুখপাত্র বলেছেন, রিপোর্টটিতে শুধুমাত্র একটি ‘‘আংশিক'' মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং সরকার যে ইইউ-এর সঙ্গে আলোচিত ও সমন্বিত ব্রেক্সিটের পন্থা সন্ধান করছেন, রিপোর্টে তা বিবেচনা করা হয়নি৷
সংসদে প্রদত্ত মন্তব্যে ব্রেক্সিট মন্ত্রী স্টিভ বেকার রিপোর্টটিকে ‘‘প্রাথমিক বিশ্লেষণের বাছাই ব্যাখ্যা'' বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমাদের প্রস্থান ব্যাহত করার জন্য'' রিপোর্টটি ফাঁস করা হয়েছে৷ বেকার সাংসদদের সাবধান থাকতে বলেন, কেননা এযাবৎ বহু ব্রেক্সিট বিশ্লেষণ ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে৷
ব্রেক্সিটের পর ইউরোপ-প্রেম বাড়ছে
ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের এক বছর পর ইইউ সম্পর্কে ব্রিটেন তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির মানুষের মনোভাব অনেক ইতিবাচক হয়ে উঠেছে৷ ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না’ – এই প্রবাদ ফলে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
শীর্ষে জার্মানি ও ফ্রান্স
ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি বলে পরিচিত দেশ জার্মানি (৬৮ শতাংশ) ও ফ্রান্সের মানুষ (৫৬ শতাংশ) কিছু সমালোচনা ও সংশয় সত্ত্বেও বরাবর ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন৷ ব্রেক্সিট গণভোটের পর সেই সমর্থন আরও ১৮ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: Reuters/H.Hanschke
ব্রিটেনের ভোলবদল
গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার রায় দেওয়ার পর ব্রিটেনের অনেক মানুষের টনক নড়েছে৷ এখন ৫৪ শতাংশ মানুষ ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন৷ অর্থাৎ এক ধাক্কায় সমর্থন ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে তার ফলে ইইউ থেকে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়ায় নড়চড় হবার সম্ভাবনা কম৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tallis
পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি
কট্টর জাতীয়তাবাদী ও ইইউ-বিরোধী সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পোল্যান্ড (৭৪ শতাংশ) ও হাঙ্গেরির মানুষ (৬৭ শতাংশ) কিন্তু সমীক্ষায় ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন৷ বাকি অনেক দেশের তুলনায় তাঁরা বরং এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল
মন্দার ধাক্কা সামলে ইউরোপের অনেক দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যেমন নেদারল্যান্ডসের ৮৭ শতাংশ মানুষ এর ফলে সন্তুষ্ট৷ জর্জরিত অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠায় স্পেনের মানুষের মধ্যেও ইইউ সম্পর্কে উৎসাহ অনেক বেড়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
গ্রিস ও ইটালিতে হতাশা
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশ গ্রিসের মানুষ এখনো ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন৷ তাই ইউরোপ সম্পর্কে মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ তাঁদের উৎসাহ প্রকাশ করেছেন৷ ইটালির অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়৷ তবে তা সত্ত্বেও সেখানে ৫৬ শতাংশ মানুষ ইইউ-বান্ধব বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamaki
শরণার্থী সংকট
তুরস্কের সঙ্গে ইইউ-র চুক্তির কারণে শরণার্থীর ঢল কমে যাওয়ায় ইউরোপের অনেক মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন৷ তাঁদের অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু ‘পপুলিস্ট’ দল ইউরোপবিরোধী আবেগ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ পরিস্থিতির উন্নতির ফলে তাদের প্রতি সমর্থন অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
6 ছবি1 | 6
কোণঠাসা
ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ ও ইইউ-এর সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হওয়ার মধ্যে ২১ মাসের একটি ক্রান্তিকালের ব্যবস্থা রেখেছে ইইউ-এর বাকি ২৭টি সদস্যদেশ – এই সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘ইইউ এক্সিট অ্যানালিসিস – ক্রস হোয়াইটহল ব্রিফিং' শীর্ষক রিপোর্টটি ফাঁস হয়ে যায়৷ ইইউ-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্রিটেন ঐ ২১ মাসের ক্রান্তিকালে সদস্য হিসেবে তার যাবতীয় সুযোগসুবিধা বজায় রাখতে পারবে, কিন্তু কোনো নতুন ইইউ আইন রুখতে বা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারবে না৷
উদ্বেগ কী নিয়ে এবং কেন?
২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ব্রিটেন ইইউ পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেবার পর দ্বীপরাজ্যটিতে যে গভীর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে, এই রিপোর্ট তার আরো একটি প্রতিফলন৷ ব্রেক্সিট নয়, শুধুমাত্র ব্রেক্সিট সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি হিসেবে ইউরো ও ডলারের তুলনায় ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম পড়েছে; ২০১৭ সালের শেষ তিন মাসে ব্রিটিশ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল আধ শতাংশ; লন্ডনে অস্থাবর সম্পত্তির বাজারে তেজি কমতে বসেছে; সম্প্রতি মনার্ক বিমান পরিবহণ সংস্থা বা ক্যারিলিয়ন আউটসোর্সিং পরিষেবা সংস্থা দেউলিয়া হওয়ার কারণ হিসেবেও অনেকে ব্রেক্সিটকে দোষী করছেন৷
এই পরিস্থিতিতে নতুন রিপোর্টটি ফাঁস হওয়ায় সবচেয়ে ‘নরম' ব্রেক্সিট, এমনকি ব্রেক্সিট নিয়ে একটি দ্বিতীয় গণভোটের দাবি আরো জোরদার হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷