ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে৷ শুরু হয়েছে লাভ-লোকসানের হিসাব৷ খোদ ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবাসি বাংলাদেশিদের মধ্যেই চলছে এ হিসাব৷
ছবি: Reuters/V. Kessler
বিজ্ঞাপন
লন্ডনে বাংলাদেদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদির ডয়চে ভেলকে বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্যে, বিশেষ করে লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিধা বিভক্ত ছিল, এখনো আছে৷ যারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার পক্ষে ছিলেন তারা মনে করছেন এখন এখানে কাজের সুযোগ বাড়বে, দেশ থেকে আত্মীয়-স্বজনকে আনা যাবে, পড়াশোনার সুযোগ বাড়বে৷ আর যারা এর বিরোধিতা করেছেন তারা বলছেন এর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে, সামাজিক নিরাপত্তা কমবে৷''
নাদিম কাদির
This browser does not support the audio element.
তিনি বলেন, ‘‘তবে আশঙ্কার কথা, যুক্তরাজ্যে এখন মধ্যপন্থিদের খারাপ অবস্থা৷ হয় চরম ডান, নয় চরম বাম৷ ফলে এরা চাইবে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ সুবিধা কমাতে৷ এইড কমিয়ে দিতে চাইবে৷ চাইবে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা কমিয়ে দিতে৷ এটা বাংলাদেশের জন্য ভয়ের ব্যাপার৷ তাই এখন থেকেই বাংলাদেশকে সবদিক দিয়ে সতর্কভাবে এগোতে হবে৷''
নাদিম কাদির জানান, ‘‘বিষয়টি যুক্তরাজ্যের জন্যই স্বস্তির নয়৷ তারাও একটি জটিল সময় পার করছে৷ আগামী তিনমাসে আরো অনেক বিষয় স্পষ্ট হবে৷ নতুন প্রধানমন্ত্রী হবে৷ আমাদেরও এই সময়টি খেয়াল রেখে এগোতে হবে৷''
ড. হেলাল উদ্দীন
This browser does not support the audio element.
২০১৩-১৪ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ৷ এটি রপ্তানির ক্ষেত্রে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ৷ এর একটি অংশ শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি হয়৷
২৮ টি ইউরোপীয় দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ ইইউ-র সিদ্ধান্ত ও অঙ্গীকার সব সদস্যের জন্য কার্যকর ছিল, কিন্তু এখন এ জোট থেকে বের হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না৷
গণভোটের পরে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড দুর্বল হয়ে ১৯৮৫ সালের পর্যায়ে নেমে গেছে এবং এর প্রভাব সাথে সাথে না পড়লেও নিকট ভবিষ্যতে পড়বে৷ আর যদি প্রভাব নেতিবচক হয় তাহলে তার ক্ষতি আমাদেরও নিতে হতে পারে৷ নাদিম কাদির বলেন, ‘‘ব্রেক্সিট নিয়ে সারা পৃথিবীতেই এখন নানা ধরণের হিসেব-নিকেষ চলছে৷ বাংলাদেশও তার বাইরে নয়৷''
ব্রিটেনের কাছ থেকে আমরা যা পেয়েছি
সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে ব্রিটেন বেশ সমৃদ্ধ৷ শেক্সপিয়ার আর বিটেলস ছাড়াও আরো কয়েকটি দিকের কথা থাকছে এই ছবিঘরে, যা গোটা বিশ্বে ব্রিটেনকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়৷
ছবি: STAFF/AFP/Getty Images
হ্যারি পটার
হ্যারি পটারকে চেনে না গোটা বিশ্বের এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷ ব্রিটেনের লেখক জে কে রোওলিং-এর অনবদ্য এই সৃষ্টি শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই মন জয় করেছে৷ হ্যারি পটার সিরিজের অষ্টম বইটি বের হবে আগামী ৩১ জুলাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpa-Film Warner
মিনি স্কার্ট
ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার মেরি কোয়ান্ট মেয়েদের পোশাক স্কার্টের নীচের অংশ হাঁটুর উপরে তুলে এনেছেন, আর তাতেই ফ্যাশন জগতে মোটামুটি বিপ্লব ঘটে গেছে৷ ষাটের দশকে বাজারে আসা মিনিস্কার্ট এখনো গ্রীষ্মে পশ্চিমের মেয়েদের অন্যতম পোশাক৷
ছবি: Express/Express/Getty Images
জেমস বন্ড
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিক্রেট এজেন্ট জেমস বন্ড৷ ব্রিটিশ লেখক ইয়ান ফ্লেমিং বন্ড সিরিজের প্রথম বইটি লেখেন ১৯৫৩ সালে৷ এরপর থেকে বন্ড চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনেক নামি তারকা আর সেসব ছবিতে সুন্দরী নারীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগাথা ক্রিস্টি
বিশ্বের সবচেয়ে সফল লেখকও ব্রিটেনের৷ ক্রিস্টির বই এখন পর্যন্ত প্রায় চার বিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে৷ তার অনেক বই থেকে সিনেমাও তৈরি হয়েছে৷
ছবি: picture alliance / empics
কুইন
ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রয়েছেন, তবে আরো এক রানী আছে৷ বলছি রক ব্যান্ড কুইনের কথা৷ ব্যান্ডটি গোটা বিশ্বেই পরিচিত৷
ছবি: Getty Images/M. Metcalfe
ফিস অ্যান্ড চিপস
রান্নাবান্নার দিক থেকে ব্রিটেন বিশ্বে খুব একটা নাম করতে পারেনি৷ তাসত্ত্বেও তাদের ফিস অ্যান্ড চিপস মোটামুটি বিশ্বের সর্বত্র পাওয়া যায়৷ তবে ইংলিশ ব্রেকফাস্টের কদরও কম নয়৷
ছবি: Colourbox
চার্লি চ্যাপলিন
বিশ্ব শতকের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী চার্লি চ্যাপলিন৷ তিনি একজন ব্রিটিশ৷ সেই নির্বাক চলিচ্চিত্রের যুগেই মানুষে মন জয় করেছিলেন চ্যাপলিন৷ এখনো তাঁর জনপ্রিয়তায় ঘাটতি তৈরি হয়নি৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
গণভোটের আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের এমপি রুশনারা আলী বলেছেন,' ব্রেক্সিট হলে পাঁচ লাখ বাংলাদেশির চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে৷ ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বাংলাদেশিসহ এথনিক মাইনোরিটির লোকজনরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷''
তবে যুক্তরাজ্যে প্রায় ১০ হাজার কারি রেস্টুরেন্ট চালু অবস্থায় আছে এবং প্রায় এক লাখ লোক এখানে কাজ করে৷ প্রতিবছর এর ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড৷ কারি হাউজের শেফদের মধ্যে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রাধান্য আছে৷ ইইউতে থাকার কারণেই বাংলাদেশসহ ইউরোপের বাইরের দেশ থেকে কারি শেফ আনতে ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না৷ কেউ কেউ মনে করছেন, এই সুযোগটি এবার পাওয়া যাবে৷ তবে তা নির্ভর করছে যুক্তরাজ্যের ভিসা নীতি সহজ হয় কিনা তার ওপর৷
ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মুখে ব্রিটেন
ব্রিটিশ ভোটাররা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, যার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছেড়ে দেবার পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে দুই শিবির৷ দাঁড়িপাল্লায় সমর্থনের মাত্রা প্রায় সমান-সমান৷
ছবি: Reuters/T. Melville
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
একক বাজার ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের মতো লাভজনক সুবিধার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ব্রিটেনের কোনো আপত্তি নেই৷ কিন্তু শুধু পণ্য ও পরিষেবা নয়, নাগরিকদের অবাধ প্রবেশের অধিকার, অভিন্ন মুদ্রা, শরণার্থীদের আশ্রয়ের মতো বিষয় তাদের পছন্দ নয়৷ এই ভাবমূর্তি কতটা ঠিক, গণভোটে তার প্রমাণ পাওয়া যবে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
ব্রেক্সিট-এর প্রবক্তাদের যুক্তি
‘লিভ’ ক্যাম্পেন ভোটারদের উদ্দেশ্য ইইউ-র আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মের বেড়াজাল থেকে ব্রিটেনকে মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে৷ তাদের যুক্তি, নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ‘স্বাধীনতা’ ফিরে পেলে ব্রিটেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, বিশ্বে তাদের মর্যাদা বাড়বে৷
ছবি: Imago
‘ব্রেক্সিট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে’
ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে প্রবল অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্রিটেনের ব্যবসা-বাণিজ্য জগত৷ তাদের মতে, ভবিষ্যতে ইইউ-র সঙ্গে সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হলেও প্রথম কয়েক বছরে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Halle'n
মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ
ব্রেক্সিট শিবির ব্রিটিশ ভোটারদের সামনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷ যেমন তাদের দাবি, তুরস্কের নাগরিকরা নাকি অদূর ভবিষ্যতে দলে দলে ব্রিটেনে বসবাস করতে আসছে৷ ‘রিমেন’ শিবিরের বিরুদ্ধেও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. J. Ratcliffe
ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগের রূপরেখা
ইইউ-র বাইরে ব্রিটেনের বিকল্প সম্পর্কে স্পষ্ট চালচিত্র দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রেক্সিট শিবির৷ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেও এই দুই দেশকে যে বাধ্যতামূলকভাবে ইইউ-র অনেক নীতি কার্যকর করতে হয়, সেই সত্যটা গোপন রাখা হচ্ছে৷
ছবি: DW/B.Riegert
ইউরোপে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ
ভোটাররা ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে রায় দিলেও ব্রিটেন-এর সঙ্গে ইইউ-র সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ সংহতি দেখানোর বদলে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে আলাদা ছাড় দাবি করার ব্রিটিশ অভ্যাস নিয়ে বিরক্ত ইইউ-র বেশিরভাগ দেশ৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
6 ছবি1 | 6
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্রেক্সিটের কী প্রভাব পড়বে তা বুঝতে আরো সময় লাগবে, কারণ, এর ফলে যদি যুক্তরাজ্য বা ইইউ'র প্রবৃদ্ধি বা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হব৷ এখন আমরা ইইউ এবং যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি করছি৷ আমারা যদি আমাদের প্রাইস লেভেল এবং মান ঠিক রাখতে পারি, তাহলে চাহিদা কমার কারণ নেই৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হয়ে গেলেও সুবিধাটা নিতে চাইবে৷ ফলে তাদের ইইউ'র অনেক শর্ত মানতে হবে৷ কেউ চাইবে না অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হোক৷ তবে একসঙ্গে থাকার সুবিধা ছিল৷ একসঙ্গে থাকলে প্রবৃদ্ধি অর্জন সহজ হয়৷''