ব্রিটেন ধীরে ধীরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিত্যাগের দিকে এগোচ্ছে৷ কিন্তু ব্রেক্সিট সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে কতোটা প্রগতি অর্জিত হয়েছে – অথবা হয়নি – তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেছেন ডয়চে ভেলের জেফারসন চেজ৷
বিজ্ঞাপন
আপাতত কে কোথায়?
দ্বিতীয় পর্বের আলাপ-আলোচনা হবে মূলত ‘ডিভোর্স' বা ‘বিবাহবিচ্ছেদের' খরচপত্র নিয়ে৷ গত জুনে ব্রিটেন ও ইইউ-এর মধ্যে ব্রেক্সিট আলোচনার প্রথম পর্বে প্রধানত বৈঠকের সময়, পর্যায়ক্রম ইত্যাদি নির্দিষ্ট করা হয়েছিল: ২০১৭ সালের অক্টোবর অবধি প্রতি মাসে একবার করে বৈঠক বসবে – বাকি সময়টা ব্রেক্সিট সংক্রান্ত ধ্যানধারণা ও প্রস্তাব বিকাশের কাজে ব্যবহার করা হবে৷
মূল কথা হলো, ব্রেক্সিটের মূল খুঁটিনাটি নির্ধারিত হওয়ার আগে ইইউ-এর সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা হবে না – যা কিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান৷ যুক্তরাজ্য সরকার ব্রিটেনের ইইউ পরিত্যাগ ও ইউরোপিয়ান কমন মার্কেট বা যৌথ বাজারের সঙ্গে ব্রিটেনের যোগাযোগের ব্যাপারে যুগপৎ আলাপ-আলোচনা চালাতে চেয়েছিলেন৷
দ্বিতীয় পর্বের আলাপ-আলোচনা শুরু হচ্ছে ১৭ই জুলাই৷ ব্রিটেনের পক্ষে মুখ্য মধ্যস্থ হলেন ডেভিড ডেভিস; ইইউ তরফে মুখ্য মধ্যস্থ হলেন মিশেল বার্নিয়ের৷
ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার মূল বিষয়গুলো
২০১৭ সালের ১৯শে জুন ব্রাসেলসে ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা শুরু হবে৷ শেষ হবার কথা আগামী বছর৷ যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরকারিভাবে বিদায় নেওয়ার কথা ২০১৯ সালের মার্চ মাসে৷ দু’ পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে কী কী নিয়ে?
ছবি: Getty Images/AFP/O. Scarff
ইইউ’র মার্কেটে প্রবেশাধিকার
প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ৮ই জুনের সংসদীয় নির্বাচনের আগেই আভাস দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একীকৃত মুক্ত বাণিজ্য এলাকা ছেড়ে যাবে৷ কিন্তু নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর টোরি সরকারকে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে৷ অপরদিকে ব্রাসেলসের মনোভাব স্পষ্ট: ব্রিটেনের সিঙ্গল মার্কেটে প্রবেশাধিকার বজায় থাকার শর্ত হলো, ইইউ’র বাকি ২৭টি দেশ থেকে আগত কর্মসন্ধানীদের যুক্তরাজ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে৷
ছবি: Picture alliance/empics/A. Matthews
ব্রিটেনে ইইউ নাগরিকদের অধিকার
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাজ্যে ইইউ নাগরিকদের অধিকার ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ পাবে৷ ইইউ-এর মুখ্য মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ের বলেছেন, ইইউ’র সকল সদস্যদেশ তাদের নাগরিকদের প্রতি যুক্তরাজ্যে ‘সঠিক ও মানবিক’ আচরণ করা হবে – এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার আগে কোনো আলাপ-আলোচনা হবে না৷ প্রায় ৩০ লাখ ইইউ নাগরিক যুক্তরাজ্যে বাস করেন৷ অপরদিকে ১১ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ’র অধিবাসী৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Ratcliffe
অভিবাসন
টেরেসা মে ব্রেক্সিটের পর ইউরোপ থেকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার সংকল্প ঘোষণা করেছেন৷ কিন্তু অভিবাসন মাত্রাধিকভাবে কমে গেলে যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য, সামাজিক পরিচর্যা ও নির্মাণকার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলিতে কর্মীর অভাব দেখা দিতে পারে বলে একাধিক ব্রিটিশ বিধায়কের আশঙ্কা৷ অন্যদিকে ব্রাসেলসের কাছে ব্রিটেনের ইইউ সিঙ্গল মার্কেটে প্রবেশাধিকারের পূর্বশর্ত হলো ইইউ নাগরিকদের ব্রিটেনে কাজ করার অধিকার৷
ছবি: picture alliance/PA Wire /S. Parsons
নিরাপত্তা
যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চালু নিরাপত্তা সহযোগিতা দু’ পক্ষেরই স্বার্থে৷ জুনের সূচনায় লন্ডনে সন্ত্রাসী আক্রমণের পর উভয় পক্ষই এই নিরাপত্তা সহযোগিতার গুরুত্ব উল্লেখ করেছে৷ কিন্তু ইউরোপোল বা ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মতো প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে ইইউ’র আইন বলবৎ থাকা প্রয়োজন৷ টেরেসা মে তাঁর ‘গ্রেট রিপিল বিল’-এর মাধ্যমে ইইউ আইনসমূহকে ব্রিটিশ আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে চান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/o. Hoslet
‘বিবাহবিচ্ছেদের মাসোহারা’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন, সেই সঙ্গে ইইউ প্রদত্ত বিভিন্ন ঋণ ও অন্যান্য প্রকল্পে ব্রিটেন যে অর্থদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাসেলস দাবি করছে যে, যুক্তরাজ্যকে ইইউ’র বাজেটে তার প্রদেয় অনুদান দিয়ে যেতে হবে৷ অন্যদিকে ব্রিটেনে ব্রেক্সিট সমর্থকদের বলা হয়েছিল যে, যুক্তরাজ্য ব্রাসেলসে অর্থদান বন্ধ করবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Martinez
ইউরোপের আইনকানুন
টেরেসা মে ব্রিটেনে ইউরোপীয় আদালতের এক্তিয়ারের অন্ত ঘটানোর সংকল্প করেছেন৷ অবশ্য সে-যাবৎ ব্রিটিশ সরকারকে অবস্থান কিছুটা নরম হতে দেখা গেছে৷ ‘গ্রেট রিপিল বিল’-এর একটি অর্থ হলো এই যে, ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি তাদের ইইউ সহযোগীদের আইনকানুনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে৷ অপরদিকে ব্রাসেলসের কামনা, ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস (ইসিজে) ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যে ইইউ নাগরিকদের প্রতি সদয় আচরণের গ্যারান্টি দেবে৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আইরিশ সীমান্ত
আসন্ন আলোচনায় আয়ারল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ সীমান্ত একটি কণ্টকিত বিষয় হয়ে উঠতে পারে৷ আইরিশ প্রজাতন্ত্র আর উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিভাজনরেখা আবার একটি ‘কঠিন সীমান্তে’ পরিণত হোক, তা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয়৷ কিন্তু টেরেসা মে আপাতত উত্তর আয়ারল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি-র সঙ্গে জোট সরকার গঠনের চেষ্টা করেছেন৷ তবে দক্ষিণের আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ডিইউপি’র সম্পর্ক কোনোকালেই ভালো ছিল না৷
ছবি: Reuters/C. Kilcoyne
7 ছবি1 | 7
কী নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে?
সম্ভবত যে বিষয়টিতে আপোশে আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই বিষয়টি নিয়ে: অর্থাৎ ব্রিটেনে বসবাসকারী ইইউ নাগরিক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের ভবিষ্যৎ মর্যাদা৷ প্রায় ৩০ লাখ ইইউ নাগরিক আপাতত ব্রিটেনে বাস করছেন; অপরদিকে ইইউ-তে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের সংখ্যা ১৫ লাখ৷
কিন্তু এখানেও ঐকমত্যের কোনো গ্যারান্টি নেই৷ ব্রেক্সিট আবাপ-আলোচনার প্রথম পর্বে ব্রিটেন বলেছিল যে, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে যারা ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তেমন ইইউ নাগরিকদের ব্রিটেনে থাকতে দেওয়া হবে; এমনকি যারা তার চেয়ে কম সময় ব্রিটেনে পাকাপাকিভাবে বাস করছেন, তারাও থাকতে পারবেন – তবে উভয় গোষ্ঠীকেই রেসিডেন্সির আবেদন করতে হবে; কতোদিন অবধি সেই আবেদন করা চলবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়নি৷
ইইউ ব্রিটেনের এই প্রস্তাবে বিশেষ উৎসাহ প্রদর্শন করেনি৷ বার্নিয়ের প্রস্তাবটিকে ভাসা-ভাসা ও অপর্যাপ্ত বলে অভিহিত করেছেন৷ ইউরোপের অধিকাংশ নেতা তাদের দেশবাসীদের জন্য এর চাইতে অনেক বেশি স্পষ্ট গ্যারান্টি চান; এছাড়া তারা চান যে, রেসিডেন্সি নিয়ে বিরোধের ক্ষেত্রে সেই সব মামলা ইউরোপীয় আদালত, অর্থাৎ ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস-এ যাবে, ব্রিটেনের কাছে যা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য৷
কোন বিষয়ে কোঁদলের সম্ভাবনা বেশি?
ইইউ ব্রিটেনকে যে ‘ডিভোর্সের বিল' পেশ করতে চায়, সেটাই সম্ভবত সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয়৷ ইইউ-এর ‘অ্যাসেটস', অর্থাৎ ধনসম্পত্তির যে অংশ ব্রিটেনের প্রাপ্য, তা বাদ দিয়ে ইইউ-এর প্রতি ব্রিটেনের বাদবাকি দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব – যেমন কর্মচারীদের পেনশন ইত্যাদি – দাঁড়াবে ২৫ থেকে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে৷ এছাড়া থাকবে খরচ-খরচার নানা খুঁটিনাটি: যেমন ইইউ-এর জন্য ওষুধপত্র অনুমোদন করে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি, যাদের অফিস লন্ডনে৷ প্রতিষ্ঠানটিকে ইইউ-এর কোনো শহরে নিয়ে আসার খরচ ধরা হচ্ছে আধ বিলিয়ন ইউরোর কিছু বেশি – এ তো শুধু একটিমাত্র দৃষ্টান্ত৷ স্বভাবতই ব্রিটেন ‘বিবাহবিচ্ছেদের' জন্য কানাকড়ি না দিতে হলেই খুশি৷
ব্রেক্সিটের পর ইউরোপ-প্রেম বাড়ছে
ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের এক বছর পর ইইউ সম্পর্কে ব্রিটেন তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির মানুষের মনোভাব অনেক ইতিবাচক হয়ে উঠেছে৷ ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না’ – এই প্রবাদ ফলে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
শীর্ষে জার্মানি ও ফ্রান্স
ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি বলে পরিচিত দেশ জার্মানি (৬৮ শতাংশ) ও ফ্রান্সের মানুষ (৫৬ শতাংশ) কিছু সমালোচনা ও সংশয় সত্ত্বেও বরাবর ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন৷ ব্রেক্সিট গণভোটের পর সেই সমর্থন আরও ১৮ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: Reuters/H.Hanschke
ব্রিটেনের ভোলবদল
গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার রায় দেওয়ার পর ব্রিটেনের অনেক মানুষের টনক নড়েছে৷ এখন ৫৪ শতাংশ মানুষ ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন৷ অর্থাৎ এক ধাক্কায় সমর্থন ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে তার ফলে ইইউ থেকে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়ায় নড়চড় হবার সম্ভাবনা কম৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tallis
পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি
কট্টর জাতীয়তাবাদী ও ইইউ-বিরোধী সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পোল্যান্ড (৭৪ শতাংশ) ও হাঙ্গেরির মানুষ (৬৭ শতাংশ) কিন্তু সমীক্ষায় ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন৷ বাকি অনেক দেশের তুলনায় তাঁরা বরং এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল
মন্দার ধাক্কা সামলে ইউরোপের অনেক দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যেমন নেদারল্যান্ডসের ৮৭ শতাংশ মানুষ এর ফলে সন্তুষ্ট৷ জর্জরিত অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠায় স্পেনের মানুষের মধ্যেও ইইউ সম্পর্কে উৎসাহ অনেক বেড়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
গ্রিস ও ইটালিতে হতাশা
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশ গ্রিসের মানুষ এখনো ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন৷ তাই ইউরোপ সম্পর্কে মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ তাঁদের উৎসাহ প্রকাশ করেছেন৷ ইটালির অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়৷ তবে তা সত্ত্বেও সেখানে ৫৬ শতাংশ মানুষ ইইউ-বান্ধব বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamaki
শরণার্থী সংকট
তুরস্কের সঙ্গে ইইউ-র চুক্তির কারণে শরণার্থীর ঢল কমে যাওয়ায় ইউরোপের অনেক মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন৷ তাঁদের অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু ‘পপুলিস্ট’ দল ইউরোপবিরোধী আবেগ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ পরিস্থিতির উন্নতির ফলে তাদের প্রতি সমর্থন অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
6 ছবি1 | 6
দু'পক্ষের মন-মেজাজ?
ব্রিটেনের প্রস্তুতি কাঁচা ও তারা যে কী চায়, তাও স্পষ্ট নয় – এই হল ইউরোপীয়দের মনোভাব৷ জুন মাসের নির্বাচনে টেরেসা মে-র ভরাডুবির ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে: ইউরোপীয় নেতৃবর্গ ‘বিশৃঙ্খলা', ‘নেতৃত্বের অভাব' ও পরিস্থিতি পুরোপুরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকার কথা বলেছেন৷
অন্যদিকেও সন্দেহের ছায়া: লন্ডনের ব্রেক্সিট প্রতিনিধি জেরেমি ব্রাউন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, ফ্রান্স অর্থব্যবসায়ের কেন্দ্র হিসেবে লন্ডনের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করছে৷
বার্নিয়ের ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার যে সময়সূচি পেশ করেছেন, সে অনুযায়ী এ বছরের মধ্যে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শেষ হবে – অর্থাৎ ইইউ-এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন সম্পর্ক নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য (অক্টোবর ২০১৮ অবধি) আট মাস বাকি থাকবে; ব্রিটেন ও ইইউ-এর তরফ থেকে ব্রেক্সিট চুক্তির অনুমোদনের জন্য আরো পাঁচ মাস৷ ২০১৯ সালের ২৯শে মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট সম্পন্ন হতে হবে৷
প্রায় সব বিশেষজ্ঞই মনে করেন যে, তা সম্ভব হবে না৷ তবে ব্রিটেন সহ ইইউ-এর ২৮টি দেশ চাইলে আলাপ-আলোচনার মেয়াদ বাড়াতে পারে৷ আরো বড় কথা, ব্রিটেন তার মন বদলালে তথাকথিত ‘৫০ নং সূত্রটি' উল্টে দেওয়াতেও কোনো বাধা নেই – অন্তত লিসবন চুক্তিতে নেই৷ তবে এক্ষেত্রেও বাকি ২৭টি ইইউ সদস্যদেশের সম্মতির প্রয়োজন পড়বে৷
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷