৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিদায় জানালো যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিট সম্পূর্ণ হলো।
বিজ্ঞাপন
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল আগেই। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ ছিল যুক্তরাজ্য। ব্রাসেলসের সময়ে ৩১ তারিখ মধ্যরাতে ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হলো বরিস জনসনের দেশ। ব্রেক্সিট সম্পূর্ণ হলো। এবার যুক্তরাজ্য থেকে ইউরোপের যে কোনো দেশে যেতে গেলে ভিসা লাগবে। ইউরোপ থেকে যুক্তরাজ্যে গেলে একটি নির্দিষ্ট সময় ভিসা ছাড়া থাকা যাবে। তার বেশি সময় থাকতে হলে ভিসা নিতে হবে। সীমান্তে বসছে পুলিশ।
যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। বস্তুত, ৩১ তারিখ রাতেও সে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। নিউ ইয়ার বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য শুধু ফ্রান্সের প্রতিবেশী নয়, বন্ধু দেশ। ব্রেক্সিটের পর কী ভাবে সেই সম্পর্ক বজায় থাকবে, তা নিয়ে ফ্রান্স উদ্বিগ্ন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। নতুন বছর উপলক্ষে বক্তৃতায় বরিস বলেছেন, যুক্তরাজ্য একটি স্বাধীন, আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী রাষ্ট্রে পরিণত হলো। স্বাধীন ভাবে এ বার বাণিজ্যে অংশ নেওয়া যাবে।
ইইউ-যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তিতে যা আছে
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ যতটা সম্ভব মসৃণ করতে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাজ্য৷ চলুন দেখে নেয়া যাক চুক্তির চুম্বক অংশগুলো....
ছবি: Getty Images/AFP/G. Kirk
শূন্য শুল্ক
যুক্তরাজ্য ইইউর বাজার ছাড়ার পর পণ্যের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দেবে এই চুক্তি৷ এর ফলে ২০২১ সালের জানুয়ারিতেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চলবে, ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ ওয়াইন, অর্গ্যানিকস, অটোমোটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কেমিক্যালসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোর জন্য কিছু বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এ চুক্তিতে৷
ছবি: Aaron Chown/AFP/Getty Images
যাতায়াত
এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে অবাধ যাতায়াত, চাকরি, লেখাপড়া করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা বা বসবাস করার সুযোগের অবসান হলো৷তবে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য ইইউভুক্ত দেশ এবং যুক্তরাজ্যে যাওয়া আসার জন্য ভিসা লাগবে না৷ এছাড়া ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বাসিন্দার যদি কোনো চাকরি, ব্যবসা বা অবসরভাতার মতো কোনো বিষয় কিংবা বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পদ থাকে, সেগুলো তাদেরই থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/S. Parsons
বিমান চলাচল এবং নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতা
যুক্তরাজ্যের যাত্রীবাহী বিমানগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগের মতো মুক্তভাবে যাতায়াতের অধিকার হারাবে৷এখন থেকে দু পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিমানের নিরাপদ চলাচল, নিরাপত্তা এবং এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে৷
ছবি: Markus Mainka/picture alliance
ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের স্বীকৃতির প্রশ্ন
ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার এবং এমন আরো কিছু পেশাজীবী যে আগে অবাধ স্বীকৃতি পেতেন, সেই সুযোগ আর থাকবে না৷
ছবি: Maciek Musialek/NurPhoto/picture alliance
জ্বালানি সহযোগিতা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীন জ্বালানি বাজার, ইউরোপিয়ান অ্যাটমিক এনার্জি কমিউনিটি এবং ইইউর এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন৷
ছবি: Gareth Fuller/empics/picture alliance
বিজ্ঞান, গবেষণা
শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এরাসমুস ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রাম, গ্যালিলিও স্যাটেলাইট সিস্টেমসহ সব কর্মসূচি বন্ধ করবে যুক্তরাজ্য৷ তবে হরাইজন ইউরোপ, দ্য ইউরাটম রিসার্চ এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামসহ ছয়টি কর্মসূচির সঙ্গে থাকবে ব্রিটেন৷
ছবি: Chris Ison/empics/picture alliance
ট্রাক যাতায়াত
যুক্তরাজ্যের ট্রাক আর আগের মতো অবাধে সীমান্ত পেরিয়ে ইইউ-তে আসতে পারবে না৷তবে একটি স্থান থেকে আরেকটি স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই চক্তিতে৷
বস্তুত, ৩১ তারিখ রাত ১১টার সময়েই সরকারি ভাবে ইইউ থেকে বিদায় নেয় যুক্তরাজ্য। কারণ তখন ব্রাসেলসের ঘড়িতে ১২টা বাজে। ব্রাসেলস যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজধানী, ফলে তাদের সময়েই যুক্তরাজ্যকে বিদায় নিতে হয়। এবার আর যুক্তরাজ্যের মানুষ ইউরোপে স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে পারবেন না। ভিসা করেই ইউরোপের যে কোনো দেশে ঢুকতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী, ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিন টানা কোনো যুক্তরাজ্যের মানুষ ইউরোপের কোনো দেশে থাকতে চাইলে তাঁকে ভিসা করাতে হবে। অন্যদিকে, ইউরোপের কোনো মানুষ যুক্তরাজ্যে টানা ছয় মাস ভিসা ছাড়া থাকতে পারবেন। তার বেশি থাকতে চাইলে তাঁকে ভিসা করাতে হবে।
ইউরোপ থেকে যুক্তরাজ্যে এসে কাজ করতে চাইলে অথবা যুক্তরাজ্য থেকে ইউরোপে গিয়ে কাজ করতে চাইলে ওয়ার্ক ভিসা করা করাতেই হবে।
ব্রেক্সিটের কয়েক দিন আগে ইইউ সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। ফলে মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাবে দুই পক্ষই। জিব্রালটার নিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ মুহূর্তে আরও একটি চুক্তি হয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং স্পেনের মধ্যবর্তী জিব্রালটার প্রণালী কার হবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। ৩১ তারিখ শেষ মুহূর্তে দুই দেশ সিদ্ধান্ত নেয়, জিব্রালটার স্পেন এবং যুক্তরাজ্য দুই তরফের কাছেই খোলা থাকবে। এখানে যাতায়াতের জন্য আলাদা কোনো পারমিট করাতে হবে না।