ব্রেক্সিট গণভোটের দশ মাস পরে এখন ধীরে ধীরে বোঝা যাচ্ছে, ব্রিটেনবাসীদের বিদেশ ভ্রমণ, ছুটি কাটানো অথবা দৈনন্দিন কেনাকাটার উপর তার কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটেনবাসী চিরকালই ইউরোপ-অ্যামেরিকা বেড়াতে ভালোবাসে৷ কিন্তু ব্রেক্সিট গণভোটের পর ব্রিটিশ পাউন্ড নেমেছে ডলারের হিসেবে ২০ শতাংশ, ইউরোর হিসেবে ১৬ শতাংশ৷ এখন সেই মূল্যহ্রাস কমে ডলারের ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ আর ইউরোর ক্ষেত্রে ৮ শতাংশ হলেও, ব্রিটিশ ক্রেতারা যে তাদের পাউন্ড দিয়ে কত বেশি পণ্য বা পরিষেবা কেনা যায়, তার পন্থা খুঁজছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
তার প্রথম প্রমাণ হলো, ব্রিটেনবাসী স্বদেশে ছুটি কাটানোর দিকে ঝুঁকছেন: ‘লোকেশান'-এর পরিবর্তে ‘স্টেকেশান' বুক করছেন৷ ‘স্টেকেশান' কথাটি এসেছে ‘স্টে' অথবা ‘থাকা', অর্থাৎ দেশে থাকা থেকে৷ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ছুটি কাটানোর কেবিনগুলি বুক করার জন্য নাকিজুন মাসের গণভোটের পর থেকেই টেলিফোন বাজতে শুরু করে, রয়টার্স সংস্থাকে বলেছেন এক কেবিন মালিক৷
মূল্যবৃদ্ধি
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/J. Goodman
7 ছবি1 | 7
২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের আর্থিক সংকটের পর ব্রিটেনে বাৎসরিক মূল্যবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশে পৌঁছায়৷ এখনও মূল্যবৃদ্ধি তিন শতাংশের দিকে এগোচ্ছে, অপরদিকে বেতন ও পারিশ্রমিক বৃদ্ধির হার কমে এসেছে৷ মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ স্বভাবতই স্টার্লিংয়ের মূল্যহ্রাস, যার ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়েছে৷
২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে ব্রিটেনে খুচরো বিক্রি বেড়েছে বিগত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর হারে৷ আর্থিক সংকটের সময়েও ব্রিটেনে দুই জার্মান সুপারমার্কেট গ্রুপ আলডি ও লিডল-এর বিক্রি বেড়েছিল৷ ২০১৭-তেও তা-ই ঘটছে, জানিয়েছেন ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডে আলডি-র সিইও ম্যাথিউ বার্নস৷
‘স্টেকেশান'
গতমাসে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নি স্বয়ং উল্লেখ করেন যে, ব্রিটেনের গ্রাহকরা যে কিভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন, স্টেকেশানের চাহিদা বৃদ্ধি তার একটা নমুনা৷
‘ভিজিট ইংল্যান্ড' টুরিজম এজেন্সির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যেখানে ৫৭ শতাংশ ব্রিটেনবাসী ইংল্যান্ডে ছুটি কাটানোর কথা ভাবছিলেন, ২০১৭ সালে তাদের অনুপাত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ শতাংশে৷ আরো অনেকে যাবেন স্কটল্যান্ড, ওয়েলস বা উত্তর আয়ারল্যান্ডে৷
ব্রিটেনবাসীরা যে বিদেশযাত্রা পরিত্যাগ করেছেন, এমন নয়৷ ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস অবধি তিন মাসে যুক্তরাজ্যের অধিবাসীদের বিদেশযাত্রার পরিসংখ্যান ৮ শতাংশ বেড়েছে৷ কিন্তু ঐ একই সময়ে ব্রিটেনে বিদেশি পর্যটকদের আগমন বেড়েছে ২২ শতাংশ, যার কারণ স্বভাবতই দুর্বল পাউন্ড৷
ভয়াবহ যানজটের আটটি শহর
৩৮টি দেশের ১ হাজার ৬৪টি শহরের অবস্থা পর্যালোচনা করে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যানজটের শহরের তালিকা করেছে ইনট্রিক্স৷ সেই তালিকায় অ্যামেরিকা আর ইউরোপের শহরই বেশি৷
ছবি: picture alliance/dpa/W.Lei
সবচেয়ে ভয়াবহ যানজটের শহর
ট্রাফিক বিশ্লেষণ করাই ইন্ট্রিক্সের কাজ৷ এবার সে কাজ করতে গিয়ে তারা দেখেছে, অফিস শুরু আর শেষের সময়টায় ট্রাফিক পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ থাকে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে৷ পরিসংখ্যান বলছে, সেখানকার গাড়িচালকদের প্রতি বছর পিক আওয়ারে অন্তত ১০৪ ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/Frank Duenzl
দ্বিতীয় স্থানে মস্কো
মস্কোর গাড়িচালকদের বছরে পিক আওয়ারে অন্তত ৯১ ঘণ্টা বসে থাকতে হয় গাড়িতে৷
ছবি: Getty Images/Y.Kadobnov
নিউ ইয়র্কও কম যায় না
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কেও বলতে গেলে সারা বছরই পিক আওয়ারে যানজট লেগে থাকে৷ সেখানে বছরে কমপক্ষে ৮৯ ঘণ্টা যানজটের কারণে গাড়িতেই বসে থাকতে হয় চালকদের৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক শহর
সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজ এলাকায় পিক আওয়ারে গাড়ি যেন চলতেই চায় না৷ আর সারা শহরে যানজটের কারণে প্রতি বছর প্রত্যেক চালকের অন্তত ১৪শ ডলারের ক্ষতি হয়৷ সব চালকের ক্ষতি যোগ করলে যোগফলটা ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে৷
ছবি: Getty Images/J.Sullivan
ব্রাজিলের সাও পাওলো
তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছে ব্রাজিলের সাও পাওলো৷ সেই শহরে বছর কমপক্ষে ৭৭ ঘণ্টা জ্যামের কারণে চালকদের গাড়িতেই বসে থাকতে হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/C.Faga
লন্ডন
ইউরোপের যে দেশগুলোতে ট্রাফিক জ্যামের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি, ইংল্যান্ড তার অন্যতম৷ ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের তিনটি দেশের একটি ইংল্যান্ড৷ ইংল্যান্ডের শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যানজট থাকে লন্ডনে৷ সেখানে বেশি ট্রাফিক জ্যাম হয় নাকি উইন্ডো শপিংয়ের কারণে৷
ছবি: Getty Images/S.Barbour
চীন, জাপান নেই কেন?
ইনট্রিক্স চীন এবং জাপানসহ এশিয়ার বেশ কিছু দেশের যানজট পরিস্থিতি বিশ্লেষন করেনি৷ সে কারণে তালিকায় চীন, জাপানসহ এশিয়ার অনেক দেশই নেই ৷ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও হয়ত সে কারণেই তালিকার বাইরে৷
ছবি: picture alliance/dpa/W.Lei
আফ্রিকাও বাদ
আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশেই যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার৷ তারপরও তালিকায় আফ্রিকার কোনো শহরের নাম আসেনি, কারণ, ইন্ট্রিক্স এখনো ওই মহাদেশ নিয়ে কাজ শুরু করেনি৷
ছবি: Getty Images/P.U.Ekpei
8 ছবি1 | 8
২০১৭ সালের মার্চ অবধি ছয় মাসে ব্রিটেনের লাক্সারি ব্র্যান্ড বারবেরি-র মার্কিন খদ্দেরদের সংখ্যা বেড়েছে ৯০ শতাংশ৷ এখানেও কারণ, দুর্বল পাউন্ড৷
চিন্তায় পড়েছে শুধু ইউরোপের বৃহত্তম বাজেট এয়ারলাইন ‘রায়ানএয়ার'৷ তারা দেশের বাইরে তাদের ক্যাপাসিটি বাড়াচ্ছে৷ অন্যদিকে টিকিটের দাম কমিয়ে খদ্দের ধরার চেষ্টা করছে রায়ানএয়ার ও তাদের প্রতিযোগীরা৷