ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে'র আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা বাড়াতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ আজ বুধবার ব্রাসেলসের জরুরি সম্মেলন থেকে এই সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবারের চুক্তিহীন ব্রেক্সিট কার্যকরের ঝুঁকি এড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে৷ ব্রাসেলসে আজ জরুরি সম্মেলনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ইইউ নেতারা৷ তার আগে জোটের বড় দুই শক্তি জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সাথেও দেখা করেছেন মে৷
এদিকে বুধবারের বৈঠকে মে'র আবেদনের পক্ষে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেই আভাস মিলছে৷ ব্রেক্সিট কার্যকরে দ্বিতীয় দফা সময় বাড়াতে পারে জোটটি৷ তবে জুড়ে দেয়া হতে পারে বেশ কিছু শর্ত৷ মে ১২ এপ্রিলের পরিবর্তে ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানালেও সেটি এক বছরের জন্য বাড়াতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ যার মেয়াদ হবে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত৷ ইইউ কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে রয়টার্স৷ তবে এক্ষেত্রে লন্ডনে ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা দূর হলে মেয়াদের আগেই ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে ব্রিটেন৷
এদিকে ব্রাসেলসের সম্মেলনের আগের দিন মে'র সাথে বৈঠকে তাঁর প্রস্তাব নিয়ে ম্যার্কেল ও মাক্রোঁ একমত হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি৷ তবে শর্তসাপেক্ষে ব্রিটেনকে ব্রেক্সিট কার্যকরে আরেক দফা সময় দেয়া হচ্ছে, জরুরি সম্মেলনের জন্য তৈরি অগ্রিম একটি খসড়ায় এমন কথার উল্লেখ রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ ‘‘যুক্তরাজ্যকে ইউনিয়নের অর্জনকে ধারণ করতে হবে এবং ইউনিয়নের লক্ষ্য বিচ্যুত হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে,'' বলা হয়েছে খসড়ায়৷ যদিও এখনও সদস্য হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে-কোনো সিদ্ধান্তে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা যুক্তরাজ্যের হাতে রয়েছে৷ খসড়ায় ব্রেক্সিট কার্যকরে সময়সীমা বৃদ্ধির জায়গাটি খালি রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে রয়টার্স৷
ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে হাজার কুকুরের প্রতিবাদ
যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ বন্ধের দাবিতে প্রায় এক হাজার কুকুর নিয়ে লন্ডনে পার্লামেন্ট অভিমুখে পদযাত্রা হয়েছে৷ ‘উফেরেনডাম’ নামের এই ক্যাম্পেইনের আয়োজকরা বলছেন, তারা ইইউ ছাড়লে পশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
ইউরোপের নাগরিক
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে ‘ইউরোপের নাগরিক’ লেখা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে পাশে নিজের কুকুরটাকে ধরে আছেন একজন বিক্ষোভকারী৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
‘ঘেউ ঘেউ’ করছে ব্রেক্সিট
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে বিদ্রুপাত্মক নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায় লন্ডনে কুকুর নিয়ে পদযাত্রায়৷ একটি কুকুরের গলার সঙ্গে বেঁধে রাখা প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘ব্রেক্সিট ঘেউ ঘেউ করছে’৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
‘ভুগবে’ গৃহপালিত পশু
যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে পশু চিকিৎসক ও গৃহপালিত পশুর খাবারের সংকট দেখা দেবে– এই যুক্তি দেখিয়ে তার বিরোধিতা করেন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
‘উন্মাদ’
ব্রেক্সিটে নিজেদের ক্ষতির বিষয়গুলো তুলে ধরে এর পক্ষের তৎপরতাকে উন্মাদের কার্যকলাপ আখ্যায়িত করা হয় এই কর্মসূচিতে৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
মূত্রখানা
যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে ২০১৬ সালে গণভোটের প্রচারে ব্রেক্সিটের পক্ষে অবস্থান নেওয়া রাজনীতিকসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ধিক্কার জানানো হয় এই পদযাত্রায়৷ যাত্রাপথে বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী ‘পি স্টেশন’ বানানো হয় ব্রেক্সিট সমর্থকদের ছবি রেখে, সেখানে কুকুরগুলোকে মূত্র ত্যাগে উৎসাহিত করা হয়৷
ছবি: Imago/Pacific Press Agency/L. Wateridge
ধিক্কার ফারাজে-বরিসকে
গণভোট সামনে রেখে ব্রেক্সিটের পক্ষের শিবিরে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইউকে ইন্ডিপেনডেন্স পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজে৷ এই দুজনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক্সিট সমর্থকের ছবি উপর কুকুরগুলোকে প্রস্রাব করিয়ে ধিক্কার জানানো হয় তাঁদের৷
ছবি: Imago/Pacific Press Agency/L. Wateridge
‘বন্ধ কর’ ব্রেক্সিট
ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বন্ধ করতে দ্বিতীয় গণভোটের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড লাগানো হয় কুকুরের শরীরে৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
অস্তিত্বে ইইউ
সমগ্র অস্তিত্বজুড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এই বার্তা দিতেই নিজের ও প্রিয় কুকুরের শরীরজুড়ে জড়ানো হয়েছে ইইউ’র পতাকা৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
এক কাতারে নানা শ্রেণি-পেশা
লন্ডনে ব্রেক্সিটবিরোধী এই বিক্ষোভে সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা৷ কর্মসূচির মধ্যে কুকুর কোলে অ্যালেস্টার ক্যাম্পবেল, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি বিভাগের পরিচালক ছিলেন৷
এদিকে ম্যার্কেলের পার্লামেন্টারি গ্রুপের ইইউ বিষয়ক সহকারী মুখপাত্র ডেটলেফ সেইফ বলেছেন অল্প সময়ের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি তেমন কোনো ফল বয়ে আনবে না৷ ‘‘প্রতি ছয় সপ্তাহে একবার ইউরোপীয় কাউন্সিলে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আসার কোনো মানে হয় না,'' বলেন তিনি৷ অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরেকজন কূটনীতিক বিষয়টিতে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ব্রিটেনের সিদ্ধান্তে মানুষ ক্লান্ত আর হতাশ হয়ে পড়ছে, কিন্তু এ নিয়ে কিইবা করার আছে?'' ইইউ যুক্তরাজ্যকে খাদের কিনারায় ফেলে দিতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
এমন অবস্থায় দিনের শেষভাগে শুরু হতে যাওয়া ব্রাসেলসের সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যের জন্য আরেক দফা সময় না বাড়ালে শুক্রবারই আনুষ্ঠানিকভাবে আর্টিক্যাল ফিফটি বা ব্রেক্সিট কার্যকর হবে৷ আর এক্ষেত্রে কোনো চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যেতে হবে, যা দেশটির জন্য বিরাট অর্থনৈতিক বিপর্যয় তৈরি করতে পারে৷