গণভোটের পরেও ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না৷ এমন অনিশ্চয়তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে দেশের অর্থনীতি৷ বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন মঙ্গলবার ইইউ নেতাদের সামনে তাঁর অবস্থান তুলে ধরবেন৷
বিজ্ঞাপন
UK financial service companies worried about Brexit
02:30
জয়ের বিড়ম্বনা যে এত কঠিন, তা যদি আগে জানা থাকতো! ব্রেক্সিট শিবিরের দুই শীর্ষ নেতা বরিস জনসন ও নাইজেল ফারাজ জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হবার বদলে বিভ্রান্তি ও হতাশার মধ্যে ডুবে গেছেন৷
চরম অনিশ্চয়তার ফলে ব্রিটেনের আর্থিক ও অর্থনৈতিক ভীত এর মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷ রেটিং এজেন্সি-গুলি ব্রিটেনের অবস্থানের অবনতির আশঙ্কা করছে৷
অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ব্রিটেনে কার্যকলাপ কমিয়ে আনা অথবা পুরোপুরি পাততাড়ি গোটানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে৷ বিশেষ করে যে সব বিদেশি কোম্পানি ব্রিটেন থেকে ইইউ দেশগুলিতে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে এসেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা চাপের মুখে পড়ছে৷ পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে৷
সবার মনে আপাতত একটাই মূল প্রশ্ন৷ গণভোটের রায় মেনে নিয়ে ব্রিটেনের সরকার কত দ্রুত আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ থেকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত নেবে? অর্থাৎ ইইউ চুক্তির ‘আর্টিকেল ৫০' অনুযায়ী বিদায়ের ঘোষণা করবে৷ এর পর দুই বছরের মধ্যে বিদায়ের প্রক্রিয়া ও ইইউ-র সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা স্থির করার কথা৷
এই কাজে বিলম্ব হলে বাকি ২৭টি দেশের সম্মতিতে আলোচনার মেয়াদও বাড়ানো সম্ভব৷ ইইউ ব্রিটেনের উপর দ্রুত এই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবার জন্য জোর দিচ্ছে, যাতে বর্তমান অনিশ্চয়তা যতটা সম্ভব কাটানো যায়৷ কিন্তু নেতৃত্বহীন ব্রিটেন এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান নিচ্ছে না৷ এমনকি কিছু মহলে প্রশ্ন উঠছে, ব্রিটেন আদৌ এই পদক্ষেপ নেবে কিনা৷ অর্থাৎ গণভোটের রায় উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ইইউ-তেই থেকে যাবে কিনা৷ দ্বিতীয় গণভোটের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে৷
সোমবার বার্লিনে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইটালির শীর্ষ নেতারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রিটেন বিদায়ের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার আগে সে দেশের সঙ্গে ইইউ-র ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়৷ তাঁরা ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে এই প্রক্রিয়া শুরু করার ডাক দিয়েছেন৷
ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মুখে ব্রিটেন
ব্রিটিশ ভোটাররা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, যার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছেড়ে দেবার পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে দুই শিবির৷ দাঁড়িপাল্লায় সমর্থনের মাত্রা প্রায় সমান-সমান৷
ছবি: Reuters/T. Melville
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
একক বাজার ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের মতো লাভজনক সুবিধার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ব্রিটেনের কোনো আপত্তি নেই৷ কিন্তু শুধু পণ্য ও পরিষেবা নয়, নাগরিকদের অবাধ প্রবেশের অধিকার, অভিন্ন মুদ্রা, শরণার্থীদের আশ্রয়ের মতো বিষয় তাদের পছন্দ নয়৷ এই ভাবমূর্তি কতটা ঠিক, গণভোটে তার প্রমাণ পাওয়া যবে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
ব্রেক্সিট-এর প্রবক্তাদের যুক্তি
‘লিভ’ ক্যাম্পেন ভোটারদের উদ্দেশ্য ইইউ-র আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মের বেড়াজাল থেকে ব্রিটেনকে মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে৷ তাদের যুক্তি, নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ‘স্বাধীনতা’ ফিরে পেলে ব্রিটেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, বিশ্বে তাদের মর্যাদা বাড়বে৷
ছবি: Imago
‘ব্রেক্সিট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে’
ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে প্রবল অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্রিটেনের ব্যবসা-বাণিজ্য জগত৷ তাদের মতে, ভবিষ্যতে ইইউ-র সঙ্গে সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হলেও প্রথম কয়েক বছরে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Halle'n
মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ
ব্রেক্সিট শিবির ব্রিটিশ ভোটারদের সামনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷ যেমন তাদের দাবি, তুরস্কের নাগরিকরা নাকি অদূর ভবিষ্যতে দলে দলে ব্রিটেনে বসবাস করতে আসছে৷ ‘রিমেন’ শিবিরের বিরুদ্ধেও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. J. Ratcliffe
ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগের রূপরেখা
ইইউ-র বাইরে ব্রিটেনের বিকল্প সম্পর্কে স্পষ্ট চালচিত্র দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রেক্সিট শিবির৷ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেও এই দুই দেশকে যে বাধ্যতামূলকভাবে ইইউ-র অনেক নীতি কার্যকর করতে হয়, সেই সত্যটা গোপন রাখা হচ্ছে৷
ছবি: DW/B.Riegert
ইউরোপে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ
ভোটাররা ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে রায় দিলেও ব্রিটেন-এর সঙ্গে ইইউ-র সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ সংহতি দেখানোর বদলে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে আলাদা ছাড় দাবি করার ব্রিটিশ অভ্যাস নিয়ে বিরক্ত ইইউ-র বেশিরভাগ দেশ৷