কথাটি বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন স্বয়ং৷ সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী নাকি ‘থাকো' শিবির ৫১ শতাংশ ভোট পেতে চলেছে, তবে ‘ছাড়ো' শিবির এখনও আশা ছাড়েনি৷
বিজ্ঞাপন
‘লিভ' আর ‘রিমেইন' ক্যাম্পের নেতারা সারা যুক্তরাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত৷ ‘‘ফলাফল যাই হোক, তা হবে চূড়ান্ত, বলে আমার ধারণা'', ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন ক্যামেরন, ‘‘ব্রিটেন আবার এই অভিজ্ঞতা করতে চাইবে না৷''
‘‘ব্রিটিশ ডোন্ট কুইট'', ব্রিটিশরা হাল ছাড়ে না, বলেছেন ক্যামেরন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে তাঁর একটি বিরল টেলিভিশন আবেদনে৷
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইইউ গণভোট সংক্রান্ত ‘গ্রেট ডিবেট' টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়৷ সাড়ে বারো হাজার দর্শক ধরার মতো ওয়েম্বলে অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত ও বিবিসি-র আয়োজিত প্রকাশ্য বিতর্কে ‘থাকো' ও ‘ছাড়ো' পক্ষের হয়ে লন্ডনের বর্তমান মেয়র সাদিক খান ও সাবেক মেয়র বরিস জনসন পরস্পরের মুখোমুখি হন৷
ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মুখে ব্রিটেন
ব্রিটিশ ভোটাররা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, যার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছেড়ে দেবার পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে দুই শিবির৷ দাঁড়িপাল্লায় সমর্থনের মাত্রা প্রায় সমান-সমান৷
ছবি: Reuters/T. Melville
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
একক বাজার ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের মতো লাভজনক সুবিধার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ব্রিটেনের কোনো আপত্তি নেই৷ কিন্তু শুধু পণ্য ও পরিষেবা নয়, নাগরিকদের অবাধ প্রবেশের অধিকার, অভিন্ন মুদ্রা, শরণার্থীদের আশ্রয়ের মতো বিষয় তাদের পছন্দ নয়৷ এই ভাবমূর্তি কতটা ঠিক, গণভোটে তার প্রমাণ পাওয়া যবে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
ব্রেক্সিট-এর প্রবক্তাদের যুক্তি
‘লিভ’ ক্যাম্পেন ভোটারদের উদ্দেশ্য ইইউ-র আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মের বেড়াজাল থেকে ব্রিটেনকে মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে৷ তাদের যুক্তি, নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ‘স্বাধীনতা’ ফিরে পেলে ব্রিটেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, বিশ্বে তাদের মর্যাদা বাড়বে৷
ছবি: Imago
‘ব্রেক্সিট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে’
ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে প্রবল অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্রিটেনের ব্যবসা-বাণিজ্য জগত৷ তাদের মতে, ভবিষ্যতে ইইউ-র সঙ্গে সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হলেও প্রথম কয়েক বছরে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Halle'n
মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ
ব্রেক্সিট শিবির ব্রিটিশ ভোটারদের সামনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷ যেমন তাদের দাবি, তুরস্কের নাগরিকরা নাকি অদূর ভবিষ্যতে দলে দলে ব্রিটেনে বসবাস করতে আসছে৷ ‘রিমেন’ শিবিরের বিরুদ্ধেও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. J. Ratcliffe
ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগের রূপরেখা
ইইউ-র বাইরে ব্রিটেনের বিকল্প সম্পর্কে স্পষ্ট চালচিত্র দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রেক্সিট শিবির৷ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেও এই দুই দেশকে যে বাধ্যতামূলকভাবে ইইউ-র অনেক নীতি কার্যকর করতে হয়, সেই সত্যটা গোপন রাখা হচ্ছে৷
ছবি: DW/B.Riegert
ইউরোপে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ
ভোটাররা ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে রায় দিলেও ব্রিটেন-এর সঙ্গে ইইউ-র সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ সংহতি দেখানোর বদলে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে আলাদা ছাড় দাবি করার ব্রিটিশ অভ্যাস নিয়ে বিরক্ত ইইউ-র বেশিরভাগ দেশ৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
6 ছবি1 | 6
সাদিক খান ‘লিভ' ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও আশঙ্কা সৃষ্টির অভিযোগ করেন৷ জনসন ব্রিটেনের সার্বভৌমত্বের ধুয়ো তুলে মন্তব্য করেন যে, ‘‘বৃহস্পতিবার আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিবস হতে পারে৷'' এ মন্তব্যে উপস্থিত জনতা উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দেয়৷
সাদিক খান ‘ছাড়ো' শিবিরের প্রচারণাকে ‘প্রোজেক্ট হেট' অর্থাৎ ‘বিদ্বেষ প্রকল্প' বলে অভিহিত করে: এই অভিযানের ফলে ব্রিটেনে বহিরাগতদের প্রতি বিরূপতা বাড়ছে, বলে তাঁর অভিযোগ৷ উভয় পক্ষের প্রচার অভিযানে অর্থনীতি ও রাজনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও, একমাত্র ‘ভোগ' ফ্যাশন ম্যাগাজিন স্মরণ করিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছে যে, ব্রেক্সিট বস্তুত একটি ‘ইমোশনাল ইস্যু' বা আবেগ-অনুভূতিপূর্ণ বিষয়৷
অপরদিকে উত্তর ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে যে অসংখ্য ব্রিটিশ নাগরিক বাস করেন, তারা ভাবছেন তাদের অবসরভাতা, স্বাস্থ্যবীমা ও নিরাপত্তার কথা৷