ব্রেক্সিট চুক্তিতে আর কোনো পরিবর্তন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা৷ তবে ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে খুব শিগগিরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার আবারো ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়ে দিয়েছে যে, ব্রেক্সিট চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না৷ তবে ইইউ নেতারা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে আশ্বস্ত করেছেন, ২০২১ সালের আগেই একটি নতুন যুক্তরাজ্য-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন৷
যৌথ বিবৃতিতে ইইউ'র ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা জানান, তাঁরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলতে চাইছেন৷ কারণ, ব্রেক্সিটের পরও পেছনের দরজা খোলা রাখার যে ‘ব্যাকস্টপ' পরিকল্পনা নিয়ে এত সমালোচনা, তার ইতি টানা জরুরি৷
ব্যাকস্টপ পরিকল্পনাটি হলো, ব্রিটেন বেরিয়ে গেলেও যদি ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিটেন-ইইউ বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে ব্রিটেন নিয়ন্ত্রিত নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও ইইউ'র সদস্য আয়ারল্যান্ডের বাণিজ্য সীমানা খোলা রাখা হবে৷
এই চুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের সংসদের কট্টর রক্ষণশীলদের পক্ষে আনতে রীতিমতো ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেছেন টেরেসা মে৷ বিশেষ করে ব্যাকস্টপ পরিকল্পনার সুযোগে যুক্তরাজ্যের ওপর ইইউ নানান নীতি-সিদ্ধান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য চাপিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কনজারভেটিভ পার্টির এই সংসদ সদস্যরা৷
মে ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের কাছে ‘আইনি ও রাজনৈতিক আশ্বাস' চেয়েছেন যেন ব্যাকস্টপ পরিকল্পনাটি স্বল্পস্থায়ী হয়৷ কিন্তু সম্মেলনে ইইউ নেতারা বলেন, ঠিক কী ধরনের আশ্বাস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চাইছেন তা তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়৷
এদিকে, ব্রেক্সিট চুক্তি আদৌ ব্রিটিশ সংসদে পাশ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না৷ এরই মধ্যে চুক্তি বিষয়ে ভোট হবার কথা ছিল৷ কিন্তু নিশ্চিত বাতিল হবে এমন শঙ্কায় মে ভোট বাতিল করেন৷ এরপরই তাঁর দলের সংসদ সদস্যদের একটি অংশ তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের ওপর অনাস্থা আনেন৷ সেই অনাস্থার ওপর ভোট হয়৷ সেখানে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে বেঁচে যান মে৷
কীভাবে বড় হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন
১৯৫৭ সালে পশ্চিম ইউরোপের ছয় দেশ নিয়ে শুরু হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এরপর থেকে এর পরিসর বেড়ে এখন ২৮টি দেশ এর সদস্য৷ বিগত বছরগুলোতে এই জোটের পরিসর কীভাবে পরিবর্তিত হলো তা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Diezins
১৯৫৭: ছয় দেশের নতুন ইউরোপ
রোম চুক্তি সই করার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালের ২৫ মার্চ জোট বাধে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গ৷ সমন্বিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে সুবিধা নেয়াই ছিল ইউরোপীয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটি বা ইইসি নামের এই জোটের লক্ষ্য৷ ইইসি ও অন্য জোটগুলো মিলে কয়লা, ইস্পাত ও পরমাণু সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ শুরু করলে এর নাম হয় ইউরোপীয়ান কমিউনিটিস বা ইসি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
১৯৭৩: ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক
যুক্তরাজ্য শুরুতে গররাজি থাকলেও ষাট এর দশকে এসে যোগ দেয়৷ ফ্রেঞ্চদের বিরোধিতার কারণে প্রথম দু’বার তাদের যোগ দেয়ার প্রচেষ্টা সফল হয়নি৷ পরে অবশ্য প্যারিস তাদের আপত্তি তুলে নেয় এবং আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্কের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে ইসি-তে যোগ দেয় যুক্তরাজ্য৷ তবে সেজন্য ১৯৭৫ সালে নিজ দেশে একটি গণভোটেরও আয়োজন করতে হয় ব্রিটিশদের, যেখানে সিংহভাগ মানুষ এর পক্ষে ভোট দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Lipchitz
১৯৮১: গ্রিস
ছয় বছর চেষ্টার পর ১৯৮১ সালে দশম সদস্য হিসেবে ইসি-তে যোগ দেয় গ্রিস৷ ১৯৭৪ সালে ভূমধ্যসাগরের দেশটিতে সামরিক স্বৈরশাসনের পতন ও গণতন্ত্রের পুনর্বহালের সময় চলমান টানাপোড়েন জোটে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে বাধাগ্রস্ত করে৷ এমনকি এই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশটির জোটভুক্ত হওয়া নিয়ে মতভিন্নতা ছিল অন্য দেশগুলোর মধ্যে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
১৯৮৬: স্পেন ও পর্তুগাল
পাঁচ বছর পর জোটভুক্ত হয় স্পেন ও পর্তুগাল৷ গ্রিসের মতো তারাও ছিল নতুন গণতন্ত্রের দেশ৷ স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো মারা যান ১৯৭৫ সালে৷ সে বছর পর্তুগালেও স্বৈরশাসক সরকারের পতনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/G. Silva
১৯৯৫: অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
ইসি আজকের দিনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে পরিণত হয় ১৯৯২ সালে মাস্ট্রিক্ট চুক্তি অনুযায়ী৷ ১৯৯৫ সালে নতুন রূপের এই জোটে যোগ দেয় অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড৷ শীতল যুদ্ধের সময় এই তিন দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে৷ ফলে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো জোটভুক্ত হয়নি তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Bry
২০০৪: পূর্ব ইউরোপের দশ দেশ
২০০৪ সালের ১ মে ইইউ-তে সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণের ঘটনা ঘটে৷ চেক রিপাবলিক, এস্তোনিয়া, সাইপ্রাস, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া যুক্ত হয়৷ এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য এটি একটি বিরাট উদ্যোগ ছিল৷ দুই দশক আগেও এই দেশগুলোতে কমিউনিজম ছিল৷ সেখান থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদি রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৭: রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া
২০০৪ সালেই রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া জোটভুক্ত হতে চেয়েছিল৷ কিন্তু জোট থেকে দেশ দু’টির বিচার বিভাগ ও রাজনীতিতে যে সংস্কারের শর্ত দেয়া হয়েছিল, তা পূর্ণ করতে দেরি হওয়ায় তাদের জোটভুক্তির প্রক্রিয়াও দেরি হয়৷ এই ব্লকের সবচেয়ে গরিব ও দুর্নীতিপরায়ণ দেশ এরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Donev
২০১৩: ক্রোয়েশিয়া
সবশেষ জোটভুক্ত দেশ ক্রোয়েশিয়া৷ স্লোভেনিয়ার পর রক্তক্ষয় করে যুগোস্লাভিয়া থেকে বেরিয়ে আসা দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইইউ-তে যোগ দেয় তারা৷ যুগোস্লাভিয়া থেকে বিচ্ছেদ হওয়া আরো দু’টি দেশ মন্টেনেগ্রো ও সার্বিয়া ২০১২ ও ২০১৪ সাল থেকে জোটে যোগ দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/D. Puklavec
ভবিষ্যত: মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়া
২০১৮ সালের জুনে ইইউ সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরো দু’টি বলকান দেশ, মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়াকে যুক্ত করার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করা যেতে পারে৷ তবে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনা ও কসভোর মতো অন্য যুগোস্লাভ দেশগুলোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷