ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা
১৮ জানুয়ারি ২০১৯![টেরেসা মে ও জেরেমি কর্বিন ব্রেক্সিটের প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছেন না](https://static.dw.com/image/47111840_800.webp)
ব্রিটেনের সংসদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি অনুমোদন করতে অস্বীকার করার পর আগামী সোমবারের মধ্যে ব্রেক্সিটের ‘প্ল্যান বি' বা বিকল্প পথ খুঁজে বার করতে হবে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রেও পদে পদে বাধার মুখে পড়ছেন তিনি৷ একাধিক বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি৷ তারা কিছু দাবি রেখেছে৷ তবে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি কর্বিন এমন এক পূর্বশর্ত রেখেছেন, যা পূরণ করতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী মে৷
ব্রিটেন যাতে কোনো অবস্থায় চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের পথে না যায়, সেই আশ্বাস দিতে পারছেন না মে৷ সেই সঙ্গে কর্বিন-এর দাবি অনুযায়ী মে সেই সব বিকল্প নিয়ে আলোচনা করতে চান না, যেগুলি তিনি এতকাল উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন৷ অর্থাৎ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার ও শুল্ক ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে থেকে যাবার সম্ভাবনা প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ নয়৷ কিন্তু লেবার ও ক্ষমতাসীন টোরি দল সংসদের প্রায় ৮৮ শতাংশ আসন দখল করে থাকায় তাদের মধ্যে ঐকমত্য ছাড়া কোনো সমাধানসূত্র কার্যত অসম্ভব৷ বৃহস্পতিবার কর্বিন ও মে চিঠি চালাচালি করে যে যার বক্তব্য তুলে ধরেন৷
প্রধানমন্ত্রী মে পড়েছেন উভয় সংকটে৷ কর্বিন-এর দাবি মেনে ‘সফট ব্রেক্সিট' বা ব্রেক্সিটের নরম সংস্করণের পথে এগোলে তাঁর নিজের টোরি দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরা বেঁকে বসবেন৷ এমন অচলাবস্থার জের ধরে ব্রিটেন আগামী ২৯শে মার্চ চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করতে পারে, এমন আশঙ্কাই বেড়ে চলেছে৷ এই সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব হলে আগাম সাধারণ নির্বাচন বা দ্বিতীয় গণভোটও আয়োজন করা যেতে পারে৷ কর্বিন বৃহস্পতিবারই গণভোটের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তবে সরকার জানিয়েছে, গণভোট আয়োজন করতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রিটেনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে সংলাপের ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, ব্রিটেন যাতে চুক্তি ছাড়া ইইউ ত্যাগ না করে, সেই লক্ষ্যে সবকিছু করা হবে৷ ইইউ-র প্রধান ব্রেক্সিট মধ্যস্থাতাকারী মিশেল বার্নিয়ে আরো বড় আকারের ব্রেক্সিট চুক্তির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ কিন্তু যতদিন খোদ ব্রিটেনে কোনো একটি সমাধানসূত্র নিয়ে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব না হয়, ততদিন ইইউ-র পক্ষেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন৷
সোমবার প্রধানমন্ত্রী মে তাঁর ‘প্ল্যান বি'-র খসড়া পেশ করলে সে বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হতে পারে৷ সংসদ সদস্যরা তাতে রদবদলের প্রস্তাব আনতে পারেন৷ তারপর কোনো একটি বিকল্প নিয়ে ঐকমত্য সম্ভব হলে ২৯শে জানুয়ারি তা নিয়ে ভোটাভুটি হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ব্রাসেলসে গিয়ে ব্রেক্সিট চুক্তিতে রদবদল চাইতে পারেন৷ ইইউ তাতে সম্মতি জানালে পরিবর্তিত চুক্তি আবার ব্রিটিশ সংসদে অনুমোদন করাতে হবে৷ এত কম সময়ের মধ্যে এতগুলি পদক্ষেপ সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে৷
এই অবস্থায় ফ্রান্সসহ ইউরোপের একাধিক দেশ চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের জোরালো প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে৷ নিয়ন্ত্রণ চালু করতে সীমান্তে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা কাটানো সম্ভব না হলে সেই অবকাঠামো বাস্তবে কার্যকর করা হবে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)