আর মাত্র কয়েক দিন৷ এর মধ্যে নীতিগতভাবে ঐকমত্য সম্ভব না হলে আগামী বছরের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে ব্রিটেন৷ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বোঝাপড়া ছাড়াই ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর হবে৷ ঐকমত্য সম্ভব হলে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত আলোচনার সুযোগ রয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত আলোচনায় কোনো অগ্রগতি ঘটে নি৷ এই অবস্থায় হয় জুন মাসের শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে আসতে হবে, অথবা ব্রেক্সিট-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে হবে৷ বরিস জনসনের সরকার এখনো পর্যন্ত কোনো পথই বেছে নেয় নি৷
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট আগামী শুক্রবার ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে জরুরি ভিত্তিতে অবস্থান বদলানোর ডাক দিতে চলেছে৷ সংবাদ সংস্থা এএফপি সেই প্রস্তাবের খসড়া হাতে পেয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরেছে৷ খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে জলঘোলা করার আগে ইইউ ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে সবার আগে একটি মৌলিক বিষয় মেনে নেবার আহ্বান জানাচ্ছে৷ দুই পক্ষই চুক্তির শর্ত মেনে চলছে কি না, তা যাচাই করতে একটিমাত্র সার্বিক কাঠামো রাখচে চায় ইইউ৷ সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক বিধিনিয়মের ক্ষেত্রে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ন্যায্য পরিবেশের উপরেও জোর দিচ্ছে ইইউ৷ ব্রিটেন এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছে না বলে ইইউ পার্লামেন্ট অভিযোগ তুলেছে৷ উল্লেখ্য, শেষ পর্যন্ত কোনো চুক্তি সম্ভব হলেও ইইউ পার্লামেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে৷
ব্রিটেন ও ইইউ মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় চলতি মাসেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এক ভিডিও কনফারেন্সে জট ছাড়ানোর চেষ্টা করতে চলেছেন৷ ব্রিটেন ভবিষ্যতে যে কোনো বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ইইউ আইন মেনে চলতে নারাজ৷ তার বদলে ‘স্বেচ্ছায়’ পরিবেশ ও শ্রমের মতো ইইউ-র কিছু বিধিনিয়ম মেনে বিয়ে ‘সহজ’ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি চায় সে দেশ৷ জনসন ও ফন ডেয়ার লাইয়েনের আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যস্থতাকারীরা আবার আলোচনায় বসার কথা৷
ইইউ মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে বৃহস্পতিবার আবার বলেন, ইউরোপ এখনো ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তিতে আগ্রহী৷ সেই লক্ষ্যে খোলামেলা আলোচনার অবকাশ এখনো ফুরিয়ে যায় নি, নমমীয়তার সুযোগ এখনো আছে৷ তবে ইইউ দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ রক্ষা করেই বোঝাপড়া চায়৷ যেমন একক বাজার নিয়ে কোনোরকম আপোশ সম্ভব নয়৷ বার্নিয়ে আরও মনে করিয়ে দেন, যে চুক্তির জন্য হাতে আরও চার মাস সময় রয়েছে৷ সাফল্যের স্বার্থে ব্রিটেনকে দাবিগুলি সম্পর্কে নতুন করে ভেবে দেখতে হবে৷
ব্রিটেন ইইউ-র বিরুদ্ধে নমনীয়তার অভাবের অভিযোগ করছে৷ ক্যানাডার সঙ্গে ইইউ-র বাণিজ্য চুক্তির ধাঁচে সে দেশও একই রকম বোঝাপড়া চাইছে বলে জানিয়েছে৷ একাধিক কারণে ইইউ সেই দাবি মানতে নারাজ৷ তাছাড়া বার্নিয়ে বলেছেন, ব্রিটেন আসলে ক্যানাডার চেয়েও বেশি সুবিধা আদায় করতে চাইছে৷
এসবি/কেএম (এএফপি, রয়টার্স)
গতবছরের জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
এলেমেলো চুল, ব্যতিক্রমী চাহনি আর ঝাজালো বক্তব্যের জন্য খ্যাতিমান নয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতির মাঠে আসা জনসনের বেড়ে ওঠার গল্পও বিচিত্র রকম৷
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সাবেক কনজারভেটিভ সাংসদ স্ট্যানলি জনসন ও তার প্রথম স্ত্রী চিত্রকর শার্লট ফসেটের সন্তান আলেক্সান্ডার বরিস দে পিফেল জনসনের জন্ম ১৯৬৪ সালের জুনে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে৷ তাঁর দাদার বাবা আলি কামাল একজন তুর্কি৷ একারণে নিজেকে মুসলিম উত্তরাধিকারী হিসাবে বলে থাকেন জনসন৷
চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় জনসনের শৈশব কেটেছে নিউ ইয়র্ক, লন্ডন ও ব্রাসেলসে৷ কম শুনতেন তিনি৷ এ কারণে শৈশবেই তাকে বেশ কয়েকবার অপারেশনের টেবিলে যেতে হয়েছিল; জনসন সেসময় তুলনামূলক চুপচাপ ছিলেন বলে তার আত্মীয়স্বজন জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/D. Kitwoodকিংস স্কলারশিপ নিয়ে বার্কশায়ারের ইটন কলেজে পড়ার পর অক্সফোর্ডের বেলিওল কলেজ থেকে ল্যাটিন ও প্রাচীন গ্রীক ক্ল্যাসিকসে ডিগ্রি নেন জনসন। তিনি বিতর্ক সংগঠন অক্সফোর্ড ইউনিয়নেরও প্রেসিডেন্ট ছিলেন; ছিলেন বুলিনডং ক্লাবের সদস্য, যেখানে তার সঙ্গী ছিলেন ডেভিড ক্যামেরনও।
ছবি: Getty Images/L. Drayব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর জনসনের সাংবাদিকজীবন শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে টাইমসে প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর একজনের উদ্ধৃতি জাল করায় চাকরি হারাতে হয় তাকে। ডেইলি টেলিগ্রাফে জনসন ইউরোপ বিষয়ক সংবাদদাতা ছিলেন ৫ বছর। পরে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯-২০০৫ সাল পর্যন্ত ‘দ্য স্পেকটেটর’ ম্যগাজিনের সম্পাদক ছিলেন৷
ছবি: Getty Images/M. Cardyটেলিগ্রাফে থাকার সময় ১৯৯৭ সালে ক্লয়েড সাউথ এলাকা থেকে হাউস অব কমন্সে নির্বাচন করেন জনসন। এরপর ২০০১ সালেহেনলি অন টেমস আসনে বিজয়ী হন৷ সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে ২০০৭ ও ২০১২ সালে দুই মেয়াদে লন্ডনের মেয়র হন জনসন৷ ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের পর আসা প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন তিনি৷ এরপর ব্রেক্সিট নিয়ে বিরোধের জেরে পদত্যাগ করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Wire/J. Stillwellটেলিভিশন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত হলেও জনসনের রাজনৈতিক উত্থান মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। স্পেকটেটরের একটি সম্পাদকীয় প্রকাশের জেরে তাকে লিভারপুল সিটির কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল; এক সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনে ছায়া শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকেও তাকে সরিয়ে দেয়া হয়।
ছবি: Imago Images/PA/I. Infantesযুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কিনা, তা নিয়ে গণভোটের প্রচারে জনসনকে দেখা যায় ‘ব্রেক্সিটপন্থিদের’ অন্যতম প্রভাবশালী মুখপাত্র হয়ে উঠতে। ২০১৬ সালের বেক্সিটের পক্ষে গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসার পর তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভাবা হয়েছিল৷ কিন্তু মাইকেল গোভসহ ঘনিষ্ঠ অনেকে দূরে সরে যাওয়ায় সেবার ডাউনিং স্ট্রিট যাওয়া হয়নি জনসনের৷
ছবি: Reuters/P. Nichollsজনসন প্রথম ১৯৮৭ সালে অ্যালেগ্রা মস্টিন ওয়েনকে বিয়ে করলেও তাদের সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৯৩ সালে জনসন আইনজীবী মেরিনা-হুইলারের (ছবিতে বামে) সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। জনসন-হুইলার দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে৷ দুই যুগ পর গত বছর এই দম্পতি বিচ্ছেদ হয়৷ এখন তিনি বিয়ে না করেই বসবাস করছেন প্রায় ২৫ বছর কম বয়সি বান্ধবী ক্যারি সিমন্ডসের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/D.L. Olivasপ্রবন্ধ সংকলন ‘লেন্ড মি ইউর ইয়ারস’ ছাড়াও জনসন উপন্যাস ‘সেভেন্টি টু ভার্জিনস’ ও রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে ‘দ্য ড্রিম অব রোম’ লিখেছেন। ২০১৪ সালে ঝুলিতে যুক্ত করেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে নিয়ে লেখা ‘দ্য চার্চিল ফ্যাক্টর: হাউ ওয়ান ম্যান মেইড হিস্টরি’ বইটিও।
ছবি: Getty Images/AFP/T. Akmenবাচনভঙ্গি, শব্দের ক্ষুরধার ব্যবহার, চাহনি, মজা করে কথা বলার অসামান্য ক্ষমতা, এলোমেলো চুল, ব্যক্তিগত জীবন- এসবের বিতর্কের কেন্দ্রে থাকেন বরিস জনসন৷ কিন্তু জনপ্রিয়তা কীভাবে অর্জন করতে হয়, তিনি সেটা অনেকের চেয়ে ভালো জানেন৷ যেমন, সর্বশেষ টোরি দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জেরেমি হান্টের চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/empics/B. Kendall