তিন বছরের টানাপড়েন শেষে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হচ্ছে ব্রেক্সিট৷ অনেকে বলছেন, এখন থেকে পালটাতে থাকবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাকি ইউরোপের সম্পর্ক, পালটাবে অভিবাসীদের জীবনধারাও৷ যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি অভিবাসীরা কী ভাবছেন?
বিজ্ঞাপন
ব্রেক্সিট নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাংলাদেশিরাই৷ এদের কেউ কেউ বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে গিয়ে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম শেষে সেদেশের নাগরিক হয়েছেন, কারো জন্ম ইংল্যান্ডেই৷ আবার কেউ ইউরোপের অন্য দেশে নাগরিকত্ব পেয়ে ইংল্যান্ডে এসেছেন আরো উন্নত জীবনের আশায়৷
ব্রেক্সিট পরবর্তি অভিবাসন আইনে যে পরিবর্তনগুলো আসতে যাচ্ছে তা নিয়ে চিন্তিত মানবাধিকারকর্মী অজন্তা দেব রায়। তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আইনের যে সুফল ইমিগ্র্যান্টরা ভোগ করছেন, বিশেষ করে ১০ বছরে ইনডিফিনিট লিভ টু রিমেইন পাবার নিয়মটি থাকবে কিনা এনিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ব্রেক্সিট পরবর্তী আইনগুলো কেমন হবে, তা নিয়ে দেশটির সরকারও পুরোপুরি নিশ্চিত নয় বলে মনে করেন অজন্তা৷
তিনি বলেন, ‘‘হোম অফিস (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বলেছে দক্ষ মানুষ ছাড়া তারা ব্রিটেনের নাগরিকত্ব না দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে, এই বক্তব্যটিও ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে। ব্রিটেন ব্রেক্সিট পরবর্তী অর্থনৈতিক ধকল কাটাতে টিয়ার ফোরের মতো সহজ পয়েন্ট ভিত্তিক সিস্টেমে আবারো ইমিগ্র্যান্ট আনার প্ল্যান করছে। কিন্তু আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এটা একটা ট্র্যাপ।লাখ লাখ টাকা খরচ করে ব্রিটেনে মানুষ আসবে ঠিক ই কিন্তু এখানে এসে কোন উপায়েই নাগরিকত্ব লাভ অবধি টিকতে পারবে না।''
পূর্ব লন্ডনে বসবাসরত মামুনুর রশীদ একটি রিটেইল কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনার কাজ করেন৷ তিনি মনে করেন ব্রেক্সিটের খারাপ প্রভাব যেমন পড়বে, এর ভালো কিছু দিকও রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মানবিক হিসাব করলে, মনে হয় থেকে গেলে (ইউরোপে) ভালো হতো। আবার ইউরোপের অন্য সব দেশের আর্থিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এটাই ভালো হয়েছে। তবে এর আসল ইমপ্যাক্ট বুঝতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে। মাঝামাঝি ঝুলে থাকার চেয়ে একদিকে হয়েছে সেটা আপাতত ভালো।''
ব্রেক্সিটের পরপর গণমাধ্যমে প্রকাশিত নানা প্রতিবেদনে উঠে আসে দক্ষিণ এশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়া অভিবাসীদের কথা৷ বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বেশ বড় সংখ্যার অভিবাসী পূর্ব লন্ডনে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন৷ সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও তাদের বেশিরভাগই ব্রেক্সিটের পক্ষে বোট দিয়েছিলেন বলেও বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷ বিশেষ করে লুটন অঞ্চলে, যেখানে অভিবাসীদের আধিক্য, ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট পড়ে ৫৬ শতাংশ৷ পুরো ব্রিটেনে এ হার ছিল কেবল ৫২ শতাংশ৷
ছবিতে ২০১৯
ব্রেক্সিট নিয়ে দোটানায় আগাম নির্বাচন হয়ে গেল যুক্তরাজ্যে৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দাঁনা বেঁধেছে আন্দোলন, কোথাও পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন সরকারপ্রধান৷ দাবানলে পুড়েছে পৃথিবীর ফুসফুস আমাজনসহ নানা অঞ্চল৷ এসব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. van der Hasselt
ভয়াবহ ভূমিধস
ব্রাজিলের ব্রুমাডিনিও লোহার খনিতে শ্রমিকেরা তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন৷ তখনই পাশের এক বাঁধ ভেঙে পড়ে৷ পুরো উপত্যকা জুড়ে ধেয়ে আসে কাদার স্রোত৷ কাদায় চাপা পড়ে অন্তত ২৫০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে৷ পরিবেশ ও জলবায়ুতেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে৷ খননকারী প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে৷ এখনও এই ঘটনায় তদন্ত চলছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Pimentel
ভালোবাসা দিয়ে ঘৃণার মোকাবিলা
মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে এক ডানপন্থি চরমপন্থি৷ কিন্তু হামলার পর বিদ্বেষের বদলে আরো একতাবদ্ধ হয়েছে নিউজিল্যান্ডবাসী৷ প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্দার্ন হতাহতের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, শ্রদ্ধা জানান৷ বন্দুক আইন আরো কঠোর করার পর, তার সমর্থনে দেশ জুড়ে ৩৭ হাজার বন্দুক স্বেচ্ছায় জমা দেন অনেকে৷
ছবি: Getty Images/H. Hopkins
ধ্বংসের পথে
আফ্রিকার দক্ষিণে এখনও অনেক মানুষ মার্চ মাসে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ইডাই এর প্রভাবে ভুগছেন৷ মোজাম্বিক ও জিম্বাবুয়ে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে, মালাওয়িতে হয়েছিল তীব্র বন্যা৷ মোজাম্বিকের বন্দর নগরী বাইরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ শহরটির প্রায় প্রতিটি বাড়িই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ নয় মাস পরেও কিছু অঞ্চলে বাইরে থেকে খাবার ও সহায়তা পাঠাতে হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/. Balci
নোত্র দামের অগ্নিকাণ্ড
১৫ এপ্রিল ৮৫০ বছরের পুরনো প্যারিসের নোত্র দাম ক্যাথিড্রালে ভয়াবহ আগুন লাগে৷ অগ্নিকাণ্ডে গির্জার মূল কাঠামো ও বাইরের অংশ প্রায় অক্ষত থাকলেও সব মিলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ ছাদের অংশটুকু প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যায়৷ বেশ কিছু ঐতিহাসিক সামগ্রী ও তৈলচিত্র নষ্ট হয়ে যায়৷ গির্জার প্রধান অরগ্যানেরও বেশ ক্ষতি হয়৷ ক্যাথিড্রালটি পুনর্নির্মাণ করতে কয়েক বছর সময় লাগবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. van der Hasselt
ইস্টারে হামলা
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে উৎসবমুখর ইস্টার সানডে হঠাৎ করেই পরিণত হয় শোকের দিনে। ইসলামিস্ট জঙ্গীরা কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়৷ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ হামলা প্রতিশোধে এই হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হন৷ তখন থেকে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বেড়ে চলেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
ছাতা এবং গ্যাস মুখোশ
জুন থেকে হংকং এর চিনচেনা চরিত্র পালটে গেছে৷ শহরটিতে চীনের বাড়তে থাকা প্রভাব মোকাবিলায় কয়েক হাজার মানুষ প্রতিবাদ শুরু করেন৷ শুরুতে তারা প্রস্তাবিত প্রত্যর্পণ আইন বাতিলের আহ্বান জানান৷ তবে এখন এ আন্দোলন গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে কেন্দ্র করে আরো ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Vera
প্রতিবাদ, অভ্যুত্থান এবং নতুন সূচনা
২০১৯ সাল সুদানের জন্য ছিল বেশ হতাশার৷ দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রপতির পদ ধরে রাখা ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল। এপ্রিলে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে উৎখাত করা হয়৷ কিন্তু তারপর শুরু হয় টানাপড়েন৷ প্রশ্ন ওঠে, শাসনভার কার হাতে যাবে, সামরিক বাহিনী নাকি জনগণ?
ছবি: picture-alliance/dpa/AP
ব্রেক্সিটের জন্য অপেক্ষা
২০১৯ সালে তিন বার পিছিয়েছে ব্রেক্সিটের তারিখ- ২৯ শে মার্চ, ৩০ শে জুন এবং ৩১ শে অক্টোবর৷ কিন্তু এখনও যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য৷ নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ৩১ জানুয়ারি৷ এর মধ্যে জুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে পদত্যাগ করেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী হন বরিস জনসন৷
ছবি: Reuters/T. Melville
জলবায়ু আন্দোলনের নেতা গ্রেটা
গ্রেটা টুনব্যার্গ বলতে গেলে একাই জলবায়ু আন্দোলন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেন৷ জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে ইউরোপ থেকে নিউ ইয়র্কে পালতোলা নৌকায় যাত্রা করেন তিনি৷ বিশ্বজুড়ে লাখো বিক্ষোভকারীর পক্ষে বিশ্বনেতাদের প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘‘কী সাহস আপনাদের!’’ ১৬ বছর বয়সী এই সুইডিশ স্কুল শিক্ষার্থী জলবায়ু আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Ruttle
দাবানলের বছর ২০১৯
২০১৯ সালে পৃথিবীর নানাপ্রান্ত আক্রান্ত হয়েছে দাবানলে৷ কখনো তীব্র গরমে জ্বলেছে আগুন, কখনো অভিযোগ উঠেছে নাশকতার৷ কয়েক সপ্তাহ ধরে আগুন জ্বলে বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট আমাজনে৷ গ্রহের ২০ শতাংশ অক্সিজেন একাই উৎপাদন করে এ বন৷ এছাড়া রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলেও ছড়ায় আগুন৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার
আট বছর ধরে চলা সিরিয়া যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে এ বছর৷ অক্টোবরে হঠাৎ করেই সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এরপর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান সেনা পাঠান সিরিয়ার উত্তর-পূর্বের কুর্দি অধ্যুষিত এলাকার দখল নিতে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Alkasem
লাতিন অ্যামেরিকায় অস্থিরতা
এই বছর, লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ দানা বাঁধে৷ বলিভিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস নির্বাচনে জিতে আসলেও তার বৈধতা চ্যালেঞ্জে বিক্ষোভ হয়৷ পরে সেনাবাহিনী তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে৷ চিলিতে সহিংস আন্দোলনে প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরাকে দেশটির জলবায়ু সম্মেলন বাতিল করতে বাধ্য হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Pisarenko
জলে ডুবলো ভেনিস
বন্যায় অনেকটাই অভ্যস্ত ইটালির এই বিখ্যাত শহর৷ কিন্তু এ বছরের মতো এমন ভয়াবহতা আগে দেখেনি শহরবাসী৷ শহরে ঢুকে পড়ে ১৮৭ সেন্টিমিটার উঁচু সমুদ্রের জল৷ মেয়র লুইজি ব্রুনারো জানান ‘শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যার’ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো খরচ হবে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় ভেনিস ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Monteforte
অভিশংসন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে অভিশংসন করলো সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনকে আহ্বান জানানোর অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে বিরোধীরা৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
14 ছবি1 | 14
এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের বাড়তে থাকা সংঘাত৷ একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়া অভিবাসীদের সঙ্গে ইউরোপের অন্য দেশ থেকে ইংল্যান্ডে আসা অভিবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থের সংগাতের বিষয়টিও জড়িত৷
যুক্তরাজ্যের কারারক্ষণ কর্মকর্তা সাইফ মিঠু মনে করেন, এসব নানা কারণে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করেছে৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্রেক্সিটের পক্ষেই ছিলো বেশি। যারা সরাসরি যুক্তরাজ্যে এসেছিলো ছাত্র অথবা অন্য কোনো ক্যাটাগরিতে - তাদের যেই স্ট্রাগলটা করতে হয়েছিলো, ব্রিটিশ পাসপোর্ট বা অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পেতে, ইউতে থাকার ফলে অন্য বাংলাদেশিরা সহজেই যুক্তরাজ্যে এসে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পেয়ে যেতো। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে অবস্থান করেও যারা বিভিন্ন আইনি জটিলতায় ভুগছিলেন - তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল এই ইইউ বাংলাদেশি কমিউনিটি। আমাদের কমিউনিটিতে অন্তত এই বিভেদটা বন্ধ হবে। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ যোগ্যতায় সবকিছু অর্জন করবে। কোনো বিশেষ দেশ বা অঞ্চল থেকে আসার কারণে কোনো বিশেষ সুবিধা থাকবে না।''
এই নানামুখী দ্বন্দ্বের কথা উঠে এসেছে সাংবাদিক শারমিন ভূট্টোর কথাতেও৷ ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে নানা জায়গা থেকে আসা বাংলাদেশিদের মধ্য়ে দ্বন্দ্ব চোখে পড়ার মতো বলে মনে করেন তিনি৷ বিশেষ করে ইটালিতে নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মুক্ত চলাচলের সুযোগ নিয়ে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হতে চেয়েছেন৷ এর ফলে ইটালিয়ান বাংলাদেশিদের সঙ্গে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ব্যাপক বিরোধ দেখা দিয়েছে৷
ভূট্টো ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেকে তো ইটালি থেকে আসা বাঙালিদের দেখতে পারেন না। তবে যাই বলি না কেনো, মাল্টিকালচারাল শহর হিসেবে লন্ডনের যে খ্যাতি আছে তাতে কিছুটা হলেও ভাটা পড়বে। ইউরোপীয় দেশ থেকে আসা মানুষগুলো ব্রিটেনের যে নিয়মগুলো ভঙ্গ করছিলো তা কিন্তু চাইলেই সমাধানযোগ্য। এখানে আমি বলবো ব্রিটেনের অবস্থা অনেকটা " চোরকে বলে চুরি কর আর গৃহস্থরে বলে সজাগ থাক” এই অবস্থা।''
ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর হতে আরো এক বছর সময় লাগবে৷ কিন্তু কড়া অভিবাসন নীতি চালু হলে অভিবাসীদের ভবিষ্যত কেমন হবে, সে নিয়ে সংশয় থাকছেই৷
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷