শনিবার ব্রেক্সিট সংক্রান্ত ইইউ-২৭ শীর্ষবৈঠকের আগে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেল ম্যার্কেল বলেছেন, ইইউ ত্যাগের পর যুক্তরাজ্য বাদবাকি সদস্যদের সমান সুযোগসুবিধা পেতে পারে না৷
বিজ্ঞাপন
আগামী শনিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি ২৭টি সদস্যদেশ ব্রেক্সিট নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য ব্রাসেলসে একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হচ্ছে৷ তার দু'দিন আগে ম্যার্কেল জার্মান সংসদকে এ বিষয়ে সরকারের নীতি ও অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করেন৷ তবে তাঁর বক্তব্যের একাংশ যে ইংলিশ চ্যানেলের ওপারের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না৷
তাদের প্রতি ম্যার্কেলের মূল বার্তা ছিল, ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্কের ক্ষেত্রে লন্ডন এমন কোনো চুক্তি প্রত্যাশা করতে পারে না যা যুক্তরাজ্যকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেবে৷ ‘‘একটি তৃতীয় পক্ষের দেশ একটি ইইউ দেশের সমান অথবা তার চেয়ে সুবিধাজনক শর্ত ভোগ করতে পারে না,'' বলেন ম্যার্কেল৷ ‘‘ব্রিটেনের কিছু মানুষের এ ব্যাপারে এখনও বিভ্রম আছে বলে আমার ধারণা৷ ওরা নিজেদের সময় নষ্ট করছেন,'' যোগ করেন ম্যার্কেল৷
ম্যার্কেলের এই বক্তব্যে বুন্ডেসটাগের সদস্যরা করতালি দিয়ে হর্ষ প্রকাশ করেন৷ অপরদিকে ম্যার্কেল বলেন যে, ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের খুঁটিনাটি – যেমন ইইউ ত্যাগের পরেও ব্রিটেনের ইইউ সংশ্লিষ্ট আর্থিক দায়দায়িত্ব ইত্যাদি নির্ধারিত হবার আগে ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক সংক্রান্ত কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে না৷ ‘‘এই পদক্ষেপগুলি ঐ ক্রমানুসারে সম্পন্ন করতে হবে৷ আমাদের লক্ষ্য হলো ইউরোপ ও তার নাগরিকদের জন্য সেরা চুক্তি সম্পাদন করা,'' বলেন ম্যার্কেল৷
৮ই জুন ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনের পরেই আন্তরিক আলাপ-আলোচনা শুরু হতে পারে বলে ম্যার্কেল মনে করেন৷
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/J. Goodman
7 ছবি1 | 7
শুধু সাবধানবাণীই নয়
ম্যার্কেল এ-ও বলেন যে, একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালী ব্রিটেন জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্যও দরকার৷ তিনি বলেন, প্রায় এক লাখ জার্মান নাগরিক স্থায়িভাবে যুক্তরাজ্যে বাস করছেন, তাদের ভবিষ্যৎ মর্যাদার প্রশ্নকে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন৷ পরিবর্তে জার্মানি ও ইইউ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের একটি ‘ন্যায্য চুক্তির' প্রস্তাব দিতে প্রস্তুত বলে ম্যার্কেল ঘোষণা করেন৷
জার্মান চ্যান্সেলর এ আশা প্রকাশ করেন যে, ইইউ এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের বিভিন্ন যৌথ স্বার্থ থাকবে, যেমন পণ্যের বেচাকেনা বা সন্ত্রাসবাদ ও সংগঠিত অপরাধবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের মতো ক্ষেত্রে৷