অবশেষে দিনটি এলো৷ গত বছরের জুন মাসে গণভোটের পর বুধবার ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার প্রক্রিয়া শুরু করছে৷ ২ বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা৷
বিজ্ঞাপন
ইইউ-র লিসবন চুক্তির সনদ ৫০ অনুযায়ী কোনো সদস্য দেশ এই রাষ্ট্রজোট ত্যাগ করতে পারে৷ দেশের মধ্যে ব্রেক্সিট-কে ঘিরে নানা বিতর্ক এবং রাজনৈতিক ও আইনি জটিলতার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে অবশেষে সেই কাঠামোর আওতায় আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করলেন৷
অভূতপূর্ব এই ঘটনা এই দুই বছরে ঠিক কোনদিকে গড়াবে, তার পূর্বাভাষ দেওয়া কঠিন৷ ইইউ ব্রিটেনকে কোনোরকম ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়৷ ব্রাসেলস এমন এক দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চায়, যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করা বাকিদের জন্য মোটেই আকর্ষণীয় হবে না৷
নিয়ম অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে প্রক্রিয়াটি শেষ না হলে আলোচনার মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব, তবে তার জন্য ২৭টি সদস্য দেশের সম্মতি প্রয়োজন৷ আরেকটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি হলো, ব্রিটেন মেয়াদ অনুযায়ী দুই বছরের মাথায় ইইউ ত্যাগ করবে, কিন্তু ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়ে এত দ্রুত কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে না৷ সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ডাব্লিউটিও-র নিয়ম অনুযায়ী দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য চলবে৷ ব্রিটেনে কিছু মহল এখনো ইইউ-তে থেকে যাবার আশাও করছে৷
ব্রেক্সিট ব্রিটেনের জন্য বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে৷ স্কটল্যান্ড এর মধ্যেই ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ত্যাগ করার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে৷ ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচনা শেষ হবার আগেই স্কটল্যান্ড এই প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজন করতে চায়৷ উল্লেখ্য, সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইইউ-তে থেকে যাবার পক্ষেই ভোট দিয়েছিলেন৷ অন্যদিকে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও প্রতিবেশী আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত নিয়েও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷ ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তির অন্যতম ভিত্তি ছিল উন্মুক্ত এই সীমানা৷ ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করলে সেই সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ এই প্রেক্ষাপটে দুই আয়ারল্যান্ডের পুনরেকত্রীকরণের দাবিও উঠতে শুরু করেছে৷ সে ক্ষেত্রে ব্রিটেন স্কটল্যান্ডের পাশাপাশি উত্তর আয়ারল্যান্ডকেও হারাতে পারে৷ ব্রিটেনের অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উপরেও এই প্রক্রিয়ার গভীর প্রভাব পড়তে চলেছে৷
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷