ব্লগারদের কাছে একটি অতিপরিচিত নাম ‘ওয়ার্ডপ্রেস’৷ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ব্লগাররা তাদের লেখালেখির জন্য ব্যবহার করেন এই ওপেনসোর্স প্ল্যাটফর্মটি৷ ২০০৩ সালের ২৭ মে যাত্রা শুরু করে ওয়ার্ডপ্রেস৷
বিজ্ঞাপন
গত এপ্রিল অবধি হিসেব অনুযায়ী, ওয়ার্ডপ্রেসের ৩.৫ তম সংস্করনটি ডাউনলোড হয়েছে ১৮ মিলিয়ন বার৷ এই হিসেব খুব সহজেই ওয়ার্ডপ্রেসের জনপ্রিয়তা জানান দিচ্ছে৷ কার্যত বিনা খরচায় ব্যবহার করা যায় এই ব্লগ সিস্টেম৷ তবে চাইলে এটি ডাউনলোড করে আলাদাভাবে হোস্ট করাও সম্ভব৷
তথ্যকল্যাণী, শিক্ষক ডটকমসহ বিজয়ী যারা
ডয়চে ভেলের সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড দ্য বব্স-এর ২০১৩ সালের বিজয়ীদের নিয়ে বিশেষ ছবিঘর এটি৷ এই আসরে বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী প্রকল্প জিতেছে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’, শিক্ষক ডট কম পেয়েছে ‘ইউজার প্রাইজ’৷
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
সেরা ব্লগ: লি চেনপেং
চীনা লেখক ও সাংবাদিক লি চেনপেং সেরা ব্লগ পুরস্কার জিতে নিলেন৷ ‘গোটা বিশ্ব জানে’ নামের একটি বই লিখে চীনা কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি৷ বইয়ের প্রচারের সময় মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল তাঁকে৷ প্রতিবাদে তিনি নিজের লেখা থেকে অংশবিশেষ পাঠের সময়ে পরে নিলেন একটি অক্সিজেন মুখোশ৷ ‘নীরব পাঠ’-এর সেই অনুষ্ঠানে তাঁর পরনে ছিল একটি টি-শার্ট, যাতে লেখা ‘আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি’৷
ছবি: Li Ruihe
সেরা উদ্ভাবন: ফ্রিওয়াইবো ডট কম
‘ফ্রিওয়াইবো ডট কম’ নামের মাইক্রোব্লগিং সাইট চীনের সরকারের সেন্সরশিপ প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারণা দিচ্ছে৷ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনের অন্যতম প্রধান সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ‘সিনাওইবো ডটকম’-এর সেন্সরমুক্ত সংস্করণে ঢুঁ মারা যায়৷ ফলে ব্যবহারকারীরা জানতে পারেন, কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিবেদন মুছে ফেলে৷
ছবি: freeweibo.com
সেরা উদ্ভাবন: শিক্ষক ডটকম
বাংলাভাষার পক্ষে শিক্ষক ডটকম এই বিভাগে ‘ইউজার প্রাইজ’ জয় করেছে৷ মূলত বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বাংলায় অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে শিক্ষক ডট কম৷ এই সাইটটি গড়ে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ রাগিব হাসান৷ ডয়চে ভেলের প্রতিযোগিতা চলাকালে শিক্ষক ডটকমের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৬ শতাংশ৷
সেরা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম: ৪৭৫
মরক্কোর তরুণ প্রজন্মের এক উদ্যোগের নাম ‘৪৭৫’৷ মরক্কোর আইনের ৪৭৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো ধর্ষক ধর্ষিতাকে বিয়ে করলেই শাস্তি এড়াতে পারে৷ এই ধারার কারণে ২০১২ সালে ১৬ বছরের কিশোরী আমিনা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ‘৪৭৫’ নামের একটি চলচ্চিত্র এবং ফেসবুক ও ফ্লিকার-এ সোশ্যাল মিডিয়া অভিযান৷
ছবি: Naji Tbel
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স: ফাবি কুয়াসি
প্রতি বছরের মতো এবারও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এমন এক প্রতিযোগীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যিনি বা যাঁরা মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন৷ এ বছর সেই পুরস্কার পাচ্ছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ টোগো-র মানবাধিকার কর্মী ফাবি কুয়াসি৷ দেশের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় পুলিশ সাংবাদিকদের উপর যে নিপীড়ন চালাচ্ছে, ফাবি সেই সব ঘটনা তুলে ধরছেন তাঁর ওয়েবসাইটে৷
ছবি: fabbikouassi.wordpress.com
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম পুরস্কার: তথ্যকল্যাণী
২০১৩ সালে ডয়চে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের বিষয় হলো ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ’৷ বব্স প্রতিযোগিতায়ও বিষয়টিকে আলাদা বিভাগের মর্যাদা দিচ্ছে৷ বাংলাদেশের ‘তথ্যকল্যাণী’ প্রকল্প এবার এই বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে নিয়েছে৷ জুরিমণ্ডলীর কাছে এটা এমন এক ‘বৈপ্লবিক প্রকল্প যার মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলাদেশের অতি দরিদ্র মানুষের নাগালে চলে আসছে৷’
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
সবচেয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক উদ্যোগ: আমি ও আমার ছায়া
ইন্টারনেটে আমাদের গতিবিধির চিহ্ন কতটা থেকে যায়? এই প্রশ্ন নিয়েই কাজ করছে ‘মি অ্যান্ড মাই শ্যাডো’ বা ‘আমি ও আমার ছায়া’৷ ইন্টারনেটে কীভাবে নিরাপদে বিচরণ করা যায় ও তা করতে কী কী জানতে হয়, খেলাচ্ছলে ব্রাউজারের সেটিং বদলানোর মতো সেই সব পথ বাতলে দিচ্ছে এই ওয়েবসাইট৷ এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে ‘ট্যাকটিক্যাল টেকনোলজি কালেক্টিভ’ নামের এক আন্তর্জাতিক সংগঠন৷
ছবি: myshadow.org
সেরা বাংলা ব্লগ: শৈলী
সেরা বাংলা ব্লগ বিভাগে ইউজার প্রাইজ জয় করেছে শৈলী ব্লগ৷ এই জয়ের পর ডয়চে ভেলেকে জানানো প্রতিক্রিয়ায় শৈলী ব্লগের কর্ণধার রিপন কুমার দে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘এটা শুধু আমি না, সকল শৈলার এবং শৈলীর পাঠকদের জন্য খুব আনন্দের খবর৷ শৈলার এবং পাঠকদের ভালোবাসা ছাড়া এই স্বীকৃতি কোনোভাবেই আসত না৷ তাই তাদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা৷ সকলের ভালোবাসা নিয়ে শৈলী আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে এটাই আমার প্রত্যাশা৷’’
ছবি: http://shoily.com/
বাংলা সেরা অনুসরণযোগ্য: সাইফ সামির
‘বাংলা: সেরা অনুসরণযোগ্য’ বিভাগে বিজয়ী সাইফ সামির৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার কর্তৃক লেখক-ব্লগার-সাংবাদিকদের ওপর যে দমন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে ডয়চে ভেলের মাধ্যমে আমি তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷ একজন লেখককে তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রকাশের জন্য আটক করা হবে, রিমান্ডে নেয়া হবে – এটা কি ধরনের কথা?’’
ছবি: Twitter
9 ছবি1 | 9
উইকিপিডিয়াতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে ৬০ মিলিয়নের বেশি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস ইঞ্জিন ব্যবহার করে৷ অ্যালেক্সার বিবেচনায় বিশ্বের সেরা এক মিলিয়ন ওয়েবসাইটের ১৪.৭ শতাংশ ওয়ার্ডপ্রেস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তৈরি৷ সিএনএন ডটকম এবং টেকক্রাঞ্চ এর মতো কোম্পানির ব্লগসাইটগুলো এই প্ল্যাটফর্মেই তৈরি৷
অনেক বাংলা ব্লগারও ইন্টারনেটে লেখালেখির জন্য ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করেন৷ খুব সহজে ব্যবহার করা যায় বলে এই সিস্টেমের চাহিদাও ব্যাপক৷ সম্প্রতি ওয়ার্ডপ্রেসের পেছনে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে টাইগার গ্লোবাল৷ গত শুক্রবার ওয়ার্ডপ্রেস ডটকম এর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান অটোম্যাট জানিয়েছে, টাইগার গ্লোবাল প্রতিষ্ঠানটিতে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে৷
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, মাত্র কয়েকদিন আগে ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ব্লগিং কোম্পানি টাম্বলার কিনে নিয়ে ইয়াহু৷ ইয়াহুর এই বিনিয়োগের খবর প্রযুক্তি দুনিয়ায় সাড়া জাগায়৷ এরপরই ওয়ার্ডপ্রেসের পেছনে বিনিয়োগের খবর জানা গেলো৷ তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি৷
টাম্বলার থেকে অর্থ আয়ের উৎস মূলত বিজ্ঞাপন৷ আর ওয়ার্ডপ্রেস বিভিন্ন সেবা বিক্রি করে অর্থ আয় করে থাকে৷ দুটো প্ল্যাটফর্মই বেশ দ্রুত বাড়ছে৷ মাত্র পাঁচ বছর আগে ওয়ার্ডপ্রেসের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ মিলিয়ন৷ বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ মিলিয়নে৷ অন্যদিকে, পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত টাম্বলার নেটওয়ার্কে বর্তমানে ১০০ মিলিয়নের বেশি ব্লগ রয়েছে৷