ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক ব্লগার আসাদ নূরকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়েছিল৷ মামলার আরেক আসামি লিমন ফকিরকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিজ্ঞাপন
আসাদুজ্জামান নূর ওরফে আসাদ নূরকে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ৷ তিনি নেপালের কাঠমাণ্ডু যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চ্যানেল পার হচ্ছিলেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে আগে থেকেই রেড নোটিশ থাকায়, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ মঙ্গলবার তাঁকে বিমানবন্দর থানা-পুলিশের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়৷ অসাদ নূরসহ দু'জনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা বরগুনার আমতলিতে চলতি বছরের প্রথম দিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কটূক্তি করার অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয়৷
‘আসাদ নূর ও লিমন ফকিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছি ঢাকার আইসিটি ট্রাইব্যুনালে বিচারও শুরু হয়েছে'
This browser does not support the audio element.
আমতলি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদ উল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব্লগার আসাদ নূর ও তাঁর এক সহযোগী লিমন ফকিরের বিরুদ্ধে মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা হয় গত ১১ জানুয়ারি৷ মামলার পরপরই লিমন ফকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ কিন্তু আসাদ নূর পলাতক ছিলেন৷ কিছু দিন ভারতে পালিয়ে আবারো দেশে ফিরে নেপালে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি৷''
শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘‘এই মামলায় আমরা আসাদ নূর ও লিমন ফকিরের বিরুদ্ধে আগেই চার্জশিট দিয়েছি৷ ঢাকার আইসিটি ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচারও শুরু হয়েছে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেতাঁদের লেখা ও বক্তব্যসহ তথ্য প্রমাণ দিয়েই চার্জশিট দাখিল করেছি৷'
আসাদ নূরের মামা বরগুনার আমতলির বাসিন্দা ফারুক মৃধা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসাদ নূরের বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জে৷ তার বাবা-মা সিলেটে থাকেন৷ বাবা একজন স্কুল শিক্ষক৷ আমতলির উত্তর টিয়াখালীতে মামার বাড়িতে তাদের বাড়ি আছে৷ মায়ের সম্পত্তিতেই তারা বাড়ি করেছে৷ আমার সঙ্গে আসাদ নূরের তেমন যোগাযোগ নাই৷ সে অনেকদিন ধরে এলাকাছাড়া৷ কতদূর লেখাপড়া করেছে তা আমি ঠিক বলতে পারব না৷ আমি তার বিচার চাই, যে রসুলের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছে৷''
‘আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করার আগেই আসাদ নূর এলকা থেকে গণরোষের মুখে পালিয়ে যায়’
This browser does not support the audio element.
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমি নিজের চোখে দেখিনি যে সে কী ধরনের অবমাননা করেছে৷ আমি শুনেছি৷ তার বিরুদ্ধে আমতলিতে মিছিল হয়েছে৷ কয়েক বছর আগে সে আমতলি ছেড়েছে৷ শুনেছি ঢাকায় মোবাইল ফোনের ব্যবসা করে৷''
মামলার বাদী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমতলি উপজেলার সভাপতি মূফতি ওমর ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা জানুয়ারি মাসে তার বিরুদ্ধে মামলা করার আগেই আসাদ নূর এলকা থেকে গণরোষের মুখে পালিয়ে যায়৷ তবে তার সহযোগী লিমন ফকিরকে পুলিশ তখনই আটক করে৷ লিমন ফকির এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে৷ তবে আসাদ কতদূর পড়াশুনা করেছে, তা আমরা জানি না৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা মামলার সঙ্গে ফেসবুক পোস্ট এবং ইউটিউব থেকে তার ভিডিও ‘ডাউনলোড' করে জমা দিয়েছি৷ আসাদ ও তার সহযোগী আমাদের প্রিয় রসুল এবং ধর্মকে অবমাননা করেছে৷ বর্তমান সরকার ও পুলিশ নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই৷ বাংলাদেশে আর যাতে কোনো নাস্তিকের আবির্ভাব না হয়, এ জন্য আমরা আটক দু'জনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই৷''
‘আমি তার বিচার চাই যে রসুলের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছে’
This browser does not support the audio element.
তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘আসাদ ও লিমন আমতলিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করত৷ ব্যবসা করতে করতেই তারা নাস্তিকতায় জাড়িয়ে পড়ে৷ মুখেও আপত্তিকর কথা বলত৷''
আসাদ নূরের একটি ফেসবুক পেজ আছে নিজের নামেই৷ সেখানে তিনি নিজেকে ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ইউটিউবার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন৷ বলেছেন, ‘‘ধর্মান্ধতা দূর করা আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্য৷'' তবে সেখানেও তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো বর্ণনা নেই৷
এদিকে আসাদনূর ডটকম নামের একটি সাইট থেকে আসাদ নূরের মুক্তি দাবি করা হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘আসাদ নূরের মুক্তি চাই৷ ৫৭ ধারা নিপাত যাক৷ বাকস্বাধীনতা মুক্তি পাক৷''
বন্ধু, আপনি কি আসাদ নূরের পক্ষে না বিপক্ষে? লিখুন আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
আপনার দেশে বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি কেমন? ডয়চে ভেলের দুই সাংবাদিক এই প্রশ্ন করেছিলেন সদ্য সমাপ্ত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে আগত বিভিন্ন দেশের ব্লগার, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের৷
ছবি: DW/A. S. Brändlin
শাম্মী হক, অ্যাক্টিভিস্ট, বাংলাদেশ
‘‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের মনের কথা বলতে পারেন না৷ সেখানে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই এবং প্রতিদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে৷ একজন সামাজিক অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার হিসেবে আমি ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করি, যা ইসলামিস্টরা পছন্দ করেনা৷ তারা ইতোমধ্যে ছয় ব্লগারকে হত্যা করেছে৷ ফলে আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হই৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ভেনেজুয়েলা
‘‘বাকস্বাধীনতা হচ্ছে এমন এক ধারণা যার অস্তিত্ব আমার দেশে নেই৷ সাংবাদিকরা জরিমানা আর নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি এড়াতে সরকারের সমালোচনা করতে চায়না৷ সরকারের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়৷ এরকম পরিস্থিতির কারণে অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন৷ দেশটির আশি শতাংশ গণমাধ্যমের মালিক সরকার, তাই সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
রোমান দবরোখটভ এবং একাতেরিনা কুজনেটসোভা, সাংবাদিক, রাশিয়া
রোমান: ‘‘রাশিয়ায় সরকার আপনাকে সেন্সর করবে৷ আমাদের ওয়েবসাইটটি ছোট এবং লাটভিয়ায় নিবন্ধিত৷ ফলে আমি সেন্সরশিপ এড়াতে পারছি৷ তা সত্ত্বেও সরকার মাঝে মাঝে আমাদের সার্ভারে হামলা চালায়৷’’ একাতেরিনা: ‘‘রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ ইউরোপের মানুষ রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে স্বাধীন৷ আমি আশা করছি, রাশিয়ার পরিস্থিতিও বদলে যাবে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সিরিয়া
‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই সিরিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ এমনকি আসাদের শাসনামল সম্পর্কে অনুমতি ছাড়া মতামতও প্রকাশ করা যায়না৷ এটা নিষিদ্ধ৷ কেউ যদি সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাহলে খুন হতে পারে৷ আমি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক কিছু লিখি, তাহলে বেশিদিন বাঁচতে পারবো না৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
আয়েশা হাসান, সাংবাদিক, পাকিস্তান
‘‘পাকিস্তানে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শব্দ দু’টি খুবই বিপজ্জনক৷ এগুলোর ব্যবহার আপনার ক্যারিয়ার বা জীবন শেষ করে দিতে পারে৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
রাবা বেন দউখান, রেডিও সাংবাদিক, টিউনিশিয়া
‘‘আমাদের অভ্যুত্থানের একমাত্র ফল হচ্ছে বাকস্বাধীনতা৷ আমরা এখন আমাদের সরকারের সমালোচনা করার ব্যাপারে স্বাধীন৷ এবং আমি যখন আমাদের অঞ্চলের অন্য দেশের বাসিন্দাদের বাকস্বাধীনতার কথা জিজ্ঞাসা করি, তখন একটা বড় ব্যবধান দেখতে পাই৷ আমাদের দেশে দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা আছে সত্যি, তবে বাকস্বাধীনতা কোনো সমস্যা নয়৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
খুসাল আসেফি, রেডিও ম্যানেজার, আফগানিস্তান
‘‘বাকস্বাধীনতা আফগানিস্তানে একটি ‘সফট গান৷’ এটা হচ্ছে মানুষের মতামত, যা সম্পর্কে সরকার ভীত৷ এটা চ্যালেঞ্জিং হলেও আমাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
সেলিম সেলিম, সাংবাদিক, ফিলিস্তিন
‘‘ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের খুব বেশি স্বাধীনতা নেই৷ একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে না৷ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করছে৷ তারা যদি ফেসবুকে তাদের মতামত জানায়, তাহলেও সরকার গ্রেপ্তার করে৷ তবে সিরিয়া বা ইরাকের চেয়ে অবস্থা ভালো৷’’
ছবি: DW/A. S. Brändlin
অনন্য আজাদ, লেখক, বাংলাদেশ
‘‘আমাদের দেশে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই৷ আপনি ইসলাম বা সরকারের সমালোচনা করে কিছু বলতে পারবেন না৷ ইসলামী মৌলবাদীরা ঘোষণা দিয়েছে, কেউ যদি ইসলামের সমালোচনা করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে৷ আমি একজন সাংবাদিক এবং গত বছর আমাকে ইসলামিস্ট জঙ্গিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে৷ ফলে আমাকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে৷’’