গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় আটজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত৷ ২১শে এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে৷ এভাবেই হত্যাকাণ্ডের দু'বছর পর বিচার শুরু হলো৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন৷ অভিযোগ গঠনের সময় মামলার সাতজন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ তবে প্রধান আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানা এখনও পলাতক৷
আদালতে উপস্থিত সাতজন আসামি হলো – আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস বিভাগের ছাত্র সাদমান ইয়াছির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ৷ প্রসঙ্গত, এই ছাত্রদের এরই মধ্যে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷
আসামিদের মধ্যে সাদমান ছাড়া বাকিরা ঢাকার হাকিম আদালতে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আগেই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে৷
‘নাস্তিক ব্লগার’ ইস্যুতে ইসলামি দলের তাণ্ডব
কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে কথিত ‘ধর্মনিন্দার’ অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ বাংলাদেশের কয়েক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিভিন্ন ইসলামি দল৷ এতে প্রাণহানিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্র
শুক্রবার (২২.০২.১৩) দুপুর বারোটার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ১২টি ইসলামি ও সমমনা দল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের ভাষায় যেসব ব্লগার ইন্টারনেটে ‘ধর্মনিন্দা’ করে বিভিন্ন নিবন্ধ লিখছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলন করা হবে৷ কিন্তু সেই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই তাণ্ডবে রূপ নেয়৷ এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘পরিকল্পিত অ্যাকশন’
ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানিয়েছেন, ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবেই সহিংস অ্যাকশনে গেল জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগীরা৷ ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তির কথা বলে তাদের ভাষায় ‘মুরতাদ-নাস্তিকদের’ ফাঁসির দাবিতে আগেই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কর্মসূচি দেয়৷ আর আজ (২২.০২.১৩) জুম্মার নামাজের আগেই তারা তাণ্ডব শুরু করে৷’
ছবি: Reuters
শাহবাগে হামলার চেষ্টা
শুক্রবার (২২.০২.১৩) পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ইসলামি দলের সদস্যরা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোতে চাইলে সংঘর্ষ পল্টন হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ ককটেল, গুলি আর টিয়ার গ্যাসের সেলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ প্রায় একই সময়ে ঢাকার কাঁটাবনে শাহবাগ বিরোধীরা রাস্তায় নামে৷ তারাও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
ঢাকার বাইরে তাণ্ডব, প্রাণহানি
ঢাকার বাইরে চট্টগামের প্রেসক্লাবে হামলা হয়েছে৷ তাদের হামলায় পুলিশ এবং সাংবদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুরে গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালায় তারা৷ হামলা চালায় সিলেট শহীদ মিনারে৷ সেখানে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার বিকেল অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, গাইবন্ধায় ২ জন এবং ঝিনাইদহে জাগরণ মঞ্চ বিরোধীদের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters
শাহবাগে জনতা
দেশব্যাপী ইসলামি দলগুলোর এই তাণ্ডবের পর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আবারো ভিড় বাড়তে শুরু করেছে৷ ব্লগারদের ডাকে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এই চত্বরে অবস্থান করছেন অগুনতি মানুষ৷ তাদের মূল দাবি হচ্ছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট৷’’
ছবি: Reuters
তাণ্ডবের পর নতুন কর্মসূচি
শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘আজকের (২২.০২.১৩) হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে৷’’ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ইন্টারনেটে সতর্ক দৃষ্টি
‘ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে’ এরকম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ এবং দশটি ব্লগ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে৷ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
রোববার হরতাল
শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ ১২টি ইসলামি দল৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
বুধবার বিচারক তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে জানতে চান, তারা দোষী না নির্দোষ? উপস্থিত সাতজন আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চায়৷ তাদের দাবি, তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে পুলিশ জবানবন্দি আদায় করেছে৷
রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য শুনানি করেন৷ এরপর আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা, অ্যাডভোকেট এম এ খায়রুল হক লিটন ও অ্যাডভোকেট মো. ফারুকসহ অন্যান্য আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন৷
শুনানির সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে৷ তাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করে তাদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য আবেদন জানান তাঁরা৷ আদালত অবশ্য তাঁদের আবেদন না মঞ্জুর করে করে অভিযোগ গঠন করে৷
২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে৷
তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮শে জানুয়ারি আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ৷ অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয় ৫৫ জনকে৷
পুলিশি নির্যাতনের শিকার গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা
পাকিস্তানের সঙ্গে অস্থায়ী কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ এতে নারীসহ বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন৷ প্রতিবাদে নতুন আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: REUTERS
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবি
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় গত ১২ ডিসেম্বর কার্যকর হয়৷ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ এমনকি সেদেশের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবও পাস হয়৷ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয় গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: DW
‘নাক গলানোর’ প্রতিবাদ
কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে পাকিস্তানের ‘নাক গলানোর’ প্রতিবাদে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় সেদেশের দূতাবাসের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা পুলিশের বাধার কারণে সফল হয়নি৷ তাই গুলশানে পাকিস্তান দূতাবাসের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
সম্পর্ক ছিন্নের আল্টিমেটাম
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বুধবারের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আপাতত স্থগিত রাখতে সরকারকে ২০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়৷ এই সময়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও করার ঘোষণাও দেয় তারা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও চেষ্টা
আল্টিমেটাম অনুযায়ী, ২০ ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আবারো সক্রিয় হন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু পাকিস্তান দূতাবাস অভিমুখে তাদের মিছিলে লাঠিপেটা করে পুলিশ৷ ফলে দূতাবাস অবধি পৌঁছানো আর সম্ভব হয়নি তাঁদের পক্ষে৷
পুলিশের লাঠিপেটায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার৷ পুলিশ তাঁকে মিছিল থেকে একাধিকবার আটকের চেষ্টা করে বলে দাবি করেছেন মঞ্চের কর্মীরা৷ কিন্তু কর্মীদের বাধার মুখে ইমরানকে আটক করতে পারেনি পুলিশ৷ গণজাগরণ মঞ্চের মারুফ রসুল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ইমরানকে পুলিশ দু’দফায় লাঠিপেটা করলে তিনি মাথা, বুক ও পিঠে আঘাত পান৷ তাঁকে প্রথমে ল্যাবএইড এবং পরে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
বাদ যায়নি নারী কর্মীরাও
পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের নারী কর্মীরাও৷ এক নারী কর্মীকে পুরুষ পুলিশের পেটানোর এবং টানাহ্যাঁচড়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷ পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, তারা গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা বা নির্যাতন করেনি৷ ঐ এলাকা কূটনৈতিক পল্লি হওয়ায় স্পর্শকাতর এলাকা থেকে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে৷
ছবি: DW
‘পুলিশের লাঠিপেটা গ্রহণযোগ্য নয়’
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর পুলিশের লাঠিপেটা প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেছেন, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চ যে অবস্থান থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিতের দাবি জানিয়েছে তা ঠিকই আছে৷ কিন্তু সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সবদিক বিবেচনা করে৷ তবে গণজাগরণ মঞ্চের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশের লাঠিপেটা গ্রহণযোগ্য নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
‘সাত দিনের মধ্যে বিচারের দাবি’
এদিকে, কর্মীদের ওপর হামলাকারী পুলিশের ৭ দিনের মধ্যে বিচার না হলে আগামী শুক্রবার কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ শুক্রবার শাহবাগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একথা জানান তাঁরা৷ এসময় বাংলাদেশিদের প্রতি পাকিস্তানের পণ্য বর্জনের আহ্বানও জানায় গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গণজাগরণ মঞ্চ
উল্লেখ্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শাহবাগে সমবেত হন অসংখ্য মানুষ৷ শাহবাগের এই সমাবেশ থেকেই সৃষ্টি হয় গণজাগরণ মঞ্চ, যাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আপিলের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন৷ অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ঐ খুতবা শুনতো৷ আর এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়৷
জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা ‘নাস্তিক ব্লগারদের' খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উত্সাহিত হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়৷ এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন৷ রাহমানিকে ঐ হত্যাকাণ্ডে উত্সাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷
পেশায় স্থপতি রাজীব ব্লগ লিখতেন ‘থাবা বাবা' নামে, যেখানে ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে লিখতেন তিনি৷
আসামিদের মধ্যে জসীমকে ২০১৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয় তার আগে মার্চ থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে৷
মুফতি জসীমের উসকানিমূলক খুতবার বিষয়টি ছাত্রদের জবানবন্দিতেও উঠে এসেছে৷ মুফতি জসীম জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান৷
এদিকে এই মামলার তদনত্মকারী সংস্থা ডিবির প্রধান, যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মামলায় যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছি৷ অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে আশা করি৷''
তিনি জানান, ‘‘গত মাসে ঢাকায় লেখক এবং ব্লগার অভিজিত্ রায় হত্যায়ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা জড়িত বলে সন্দেহ করছি৷ রাজীব হত্যার পলাতক আসামি রানা অভিজিত্ হত্যায় প্রধান সন্দেহভাজন৷ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷''