অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ কেউ চাইলে তাঁদের বিশেষ নিরাপত্তাও দেয়া হচ্ছে৷ ২৪ ঘণ্টাই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকছে৷
বিজ্ঞাপন
গতবছর বইমেলার শেষ দিকে হত্যা করা হয় বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে৷ এরপর ৩১ অক্টোবর হত্যা করা হয় প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে৷ একইদিনে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় আরেক প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে৷ এছাড়া পুরো বছর জুড়েই ব্লগার ও সৃজনশীল প্রকাশক, লেখকদের ওপর জঙ্গিদের হুমকি অব্যাহত ছিল৷ বই প্রকাশ না করতে হুমকি দেয়া হয় সময় প্রকাশন-এর ফরিদ কবীরকে৷
এ কারণেই এবার বইমেলায় ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে৷
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
বইমেলা থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাতে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন ব্লগার অভিজিৎ রায়৷ মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিতকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: DW
যেখানে হামলার শিকার অভিজিৎ, বন্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার ফুটপাথ৷ লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নিহত হবার এই জায়গাটা নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ হামলায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন৷
ছবি: DW
বেঁচে গেছেন বন্যা
হামলার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ দুষ্কৃতিকারীরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করলেও প্রাণে বেঁচে যান অ্যামেরিকায় বসবাসকারী এই ব্লগার৷ বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি৷
ছবি: DW
নির্বাক অজয় রায়
ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নিহত অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়৷ আজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন৷
বইমেলা শুরুর একদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘অতীত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বইমেলায় এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে যদি কোনো বিশিষ্ট নাগরিক, লেখক, প্রকাশক, ব্লগার বা বইমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ মনে করেন তাহলে তাৎক্ষণিক পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সহযোগিতা চাইতে পারেন৷ আমরা তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব৷’’
মেলায় এরইমধ্যে সিসিটিভি মনিটরিং, সুইপিং, ওয়াচ টাওয়ার, সাদা পোশাকে মেলার ভেতরে ও বাইরে টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে৷
সুশান্ত কুমার
পুলিশ জানায়, মেলা চলাকালে সন্ধ্যার পর কাউকে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে থাকতে দেয়া হবে না৷ বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যেই দশনার্থীদের সোহরাওয়ার্দি উদ্যান ছাড়তে বলা হয়েছে৷
শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ পুরো বইমেলা চত্বর দুই শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা মনিটর করা হচ্ছে৷ মেলায় প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে গেট বসানো হয়েছে৷ সবাইকে এই তল্লাশির মধ্য দিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে হচ্ছে৷
এ প্রসঙ্গে কবি ও প্রকাশক সুশান্ত কুমার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট৷ কর্তৃপক্ষ তাদের সাধ্য অনুযায়ী নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে৷''
তিনি জানান, ‘‘মেলায় দৃশ্যমান নিরাপত্তার বাইরেও অদৃশ্য নিরাপত্তা রয়েছে৷ আমরা গত এক বছরে লেখক এবং ব্লগারদের হারিয়েছি৷ এবার আশা করছি সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না৷''
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি৷ আর এই ভাষার মাস মানেই হলো একুশে বইমেলা৷ তাই অবরোধ-হরতালের মধ্যেই ১লা ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন দিয়ে শুরু হয়ে গেছে মেলা৷ গ্রন্থমেলায় এ বছর মোট ৩৫১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অস্থিরতার মধ্যেও চলছে বইমেলা
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা৷ তবে বাঙালির প্রাণের মেলা হিসেবে খ্যাত বইপ্রেমীদের এ মিলনমেলায় বিএনপি ও সমমনা ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ আর হরতাল কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সপ্তাহান্তে গ্রন্থমেলায় ভিড়
ছুটির দিনে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইপ্রেমীদের ভিড়৷ অবরোধ সত্ত্বেও ছুটির দিনগুলোতে বইমেলা প্রাণ ফিরে পায়৷ পুরো বাংলা একাডেমি চত্বর আর সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সর্বদা তটস্থ ব়্যাব-পুলিশ
অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রবেশ পথে এক দর্শনার্থীর ব্যাগ তল্লাশি করছে পুলিশ৷ হরতাল-অবরোধের সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মেলা প্রাঙ্গণে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর ছাড়াও আছে ব়্যাব ও সাদা পোশাকে পুলিশের টহল৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
‘আমরা তোমায় ভুলবো না...’
বইমেলায় বরাবরের মতো এবারও প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দারুণ কদর৷ মেলার সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণে ‘অন্য প্রকাশ’-এর প্যাভিলিয়নের ওপরে স্থাপন করা হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের বড় প্রতিকৃতি৷ পোস্টার আকারে তাঁর ছবিও রয়েছে জায়গায় জায়গায়৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বিরাট প্যাভিলিয়ন
সোহরাওয়ার্দি উদ্যান প্রাঙ্গণে ‘ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড’-এর দৃষ্টিনন্দন প্যাভিলিয়ন৷ গত বছর বাংলা একাডেমি থেকে মেলার পরিসর সোহরাওয়ার্দি উদ্যান পর্যন্ত বাড়ানোর পর, এ বছর যোগ হয়েছে বড় আকারের প্যাভিলিয়ন৷ দেশের পুরনো ও বড় প্রকাশকরা পেয়েছেন এ সব জায়গা৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
শিল্পীরাও আছেন
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সামনের সড়কের ফুটপাথে এক দর্শনার্থীর প্রতিকৃতি আঁকছেন একজন শিল্পী৷ বইমেলার প্রবেশ পথে কয়েকজন শিল্পী মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নানাভাবে মুখচ্ছবি এঁকে দেন৷ এ জন্য ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ হয়৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
গ্রন্থমেলায় টিভি চ্যানেল
বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে মেলা সম্পর্কিত খবরাখবর টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করে৷ নতুন বইয়ের খবর, লেখকদের সাক্ষাৎকার, পাঠকদের প্রতিক্রিয়াসহ নানান বিষয় ফুটিয়ে তোলে এ সব চ্যানেল৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ব্যস্ত নজরুল মঞ্চ
বাংলা একাডেমি চত্ত্বরের নজরুল মঞ্চ৷ পুরো বইমেলায় এ মঞ্চ সরগরম রাখে অসংখ্য নতুন বইয়ের মোড়ক উম্মোচনের অনুষ্ঠান৷ এ বছর মেলা প্রাঙ্গন পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সুইচ’-এর সদস্যরা এ কাজে সদা সজাগ৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অগুন্তি বই, অনেক পড়ুয়া
অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে একটি বোর্ডে টাঙানো নতুন বইগুলোর প্রচ্ছদ৷ বইমেলার ১৫তম দিনে তোলা এ ছবিটি৷ এদিন মেলায় নতুন বই আসে ৭১টি৷ সেদিন পর্যন্ত এবারের একুশে বইমেলায় দুই হাজারেরও বেশি নতুন বই প্রকাশিত হয়৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
‘শিশু প্রহর’
বইমেলার একটি স্টলে অভিভাবকদের সঙ্গে পছন্দের বই দেখছে একটি শিশু৷ সপ্তাহের দুটি দিনের কিছু সময় শিশুদের জন্য বরাদ্দ৷ শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা ‘শিশু প্রহর’ শুধু শিশুদেরই জন্য৷ তবে শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকরাও আসতে পারেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বই দেখুন, বই পড়ুন
একটি স্টলে দর্শনার্থীরা বই দেখছেন৷ মেলায় আসা প্রকাশকরা তাঁদের স্টলগুলো এমনভাবে সাজিয়েছেন, যাতে দর্শকরা ভালোভাবে বই পরখ করতে পারেন৷ বই দেখার ছলে অনেকে অবশ্য বইয়ের বেশ খানিকটা অংশ পড়েও নেন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অটোগ্রাফ নেয়ার ধুম
গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে অটোগ্রাফ শিকারীদের কবলে জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল৷ একমাত্র বই মেলাতেই প্রিয় লেখককে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান পাঠকরা৷ তাই প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেয়ার সুযোগ ছাড়েননা অনেকেই৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বইমেলা তারুণ্যের প্রতীক
বইমেলা শুধু প্রাণের মেলাই নয়, এখন বাঙালির সার্বজনীন উৎসবও এটি৷ সেজেগুজে নানা পোশাকে তাই দর্শনার্থীদের ঘুরে-বেড়াতে দেখা যায়৷ ছবিতে মেলা প্রাঙ্গণে সেলফি তুলছে একদল তরুণ বইপ্রেমী৷ বইমেলা অবশ্য তরুণদের পদচারণাতেই সবচেয়ে বেশি মুখর থাকে৷