1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্লগার হত্যা

আরাফাতুল ইসলাম১১ আগস্ট ২০১৫

বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার খুন হচ্ছেন৷ নিহতদের সবাই ছিলেন মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের পক্ষের লোক৷ প্রশ্ন উঠেছে, এখনো যাঁরা মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন তাঁদের রক্ষায় কী করা যেতে পারে? কী করা উচিত?

Bangladesch Dhaka Proteste
ছবি: picture-alliance/dpa

বাংলাদেশে ব্লগারদের শক্তি সম্পর্কে প্রথম জানা গিয়েছিল ২০০৮ সালে৷ একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের শাস্তির দাবিতে সেসময় জোরালো অবস্থান নিয়েছিল ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা৷ তাঁদের সেই দাবি উঠে আসে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতিহারে৷

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে সেই একাত্তরের ডিসেম্বরে৷ এরপর দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং সেনা শাসকরা বিভিন্ন মেয়াদে দেশ চালানোর দায়িত্ব পেলেও কিংবা নিলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে কেউই জোরালো অবস্থান নেয়নি৷ তবে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে৷ আর সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বর্তমান তরুণ প্রজন্ম, ব্লগাররা যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন৷

শাহবাগ আন্দোলন থেকে হত্যার শুরু

ব্লগারদের ক্রমাগত দাবির প্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে ব্লগারদের আহ্বানে জড়ো হন লাখো মানুষ৷ সেই জমায়েতের মূল উদ্দেশ্য ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা৷ সেসময় শোনা যাচ্ছিল, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের এক ধরনের রফার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে করে অপরাধে অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া না হয়৷ তখন জনগণ তার প্রতিবাদ জানিয়েছে শাহবাগে জড়ো হয়ে৷

শাহবাগের সেই জমায়েত জনমনের আরো অনেক আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়েছে৷ বিশেষত একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে অনেক৷ বিপত্তির শুরুও সেখানেই৷ খুব দ্রুতই উগ্র ইসলামপন্থিদের নজর পড়েছে ব্লগারদের উপর৷ শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির কয়েকদিনের মাথায় খুন হতে শুরু করেন ব্লগাররা৷ গণমাধ্যমের একাংশ নাস্তিক ব্লগারদের ছবি প্রকাশ করতে শুরু করে৷ রাজপথে নামে উগ্র ইসলামপন্থিরা, দাবি তোলে নাস্তিক ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তির৷

সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন অবধি ঠিক কতজন ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট খুন হয়েছেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে৷ কারো হিসেবে অন্তত পাঁচ, কেউ বলছেন দশজন৷ বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্টের সঙ্গে কথা বলে, পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ঘেঁটে এব ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্ট বিশ্লেষণ করে দশজনের নাম পেয়েছি আমি৷ এদের মধ্যে ছয়জন খুন হন ২০১৩ সালে৷ কিন্তু রাজিব হায়দার ছাড়া বাকিদের নিয়ে সেসময় তেমন আলোচনা হয়নি, হত্যার কারণ খুঁজে পেতেও কিছুটা সময় লেগেছে অনেকের৷

চলতি বছর এখন পর্যন্ত খুন হয়েছেন চারজন৷ সবাইকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ ব্লগাররা বিশ্বাস করেন মৌলবাদীরা তালিকা ধরে তাঁদের হত্যা করছে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার এবং পুলিশের ভূমিকা বিস্ময়কর৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাননি৷ তাঁর সরকার বরং ব্লগারদের কাছ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টায় মরিয়া৷ অথচ আওয়ামী লীগ এবং এসব ব্লগাররা উভয় পক্ষই ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ায় বিশ্বাসী৷ অন্যদিকে, পুলিশ অন্য অনেকক্ষেত্রে অপরাধীদের দ্রুত ধরতে সক্ষম হলে ব্লগারদের বিষয়ে অক্ষম৷ এমনকি, পুলিশ প্রধান উল্টো ব্লগারদের হুশিয়ার করেছেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে, মৌলবাদীদের পরামর্শ দিয়েছেন যারা ধর্ম নিয়ে ‘কটুক্তি' করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে৷ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নাকি এক্ষেত্রে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷

ব্লগারদের রক্ষায় তাহলে উপায় কী?

দেশে-বিদেশে অনেকেই এখন জানতে চান, ব্লগারদের রক্ষায় তাহলে উপায় কী? আন্তর্জাতিক সমাজ শুরুর দিকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি৷ ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস যখন খুন হন, তখন তাঁর বিদেশে থাকার কথা ছিল৷ কিন্তু ইউরোপের একটি দেশ তাঁকে ভিসা দিতে বিলম্ব করেছে৷ হয়ত সেসময় বিদেশে থাকলে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন৷ আরেক অ্যাক্টিভিস্ট অনন্য আজাদকে হত্যায় মরিয়া ছিল উগ্রপন্থিরা৷ কিন্তু তিনি দ্রুত ইউরোপে চলে আসায় সেই চেষ্টা সফল হয়নি৷

আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

তাহলে সমাধান কি ব্লগারদের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় দেয়া? এটা সত্য ইতোমধ্যে কিছু দেশ বাংলাদেশের কয়েকজন ব্লগারকে অস্থায়ী মেয়াদে অবস্থানের সুযোগ দিয়েছে৷ সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের পর হয়ত আরো কিছু ব্লগার বিভিন্ন দেশে ‘স্কলারশিপ', আশ্রয় পাবেন৷ তবে এ সব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়৷

বিভিন্ন হিট লিস্ট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাচ্ছে, অনেক ব্লগারের জীবন এখন হুমকির মুখে৷ আর এটা বাকস্বাধীনতার প্রতি বড় আঘাত৷ তাছাড়া বাংলাদেশে সরকার এবং পুলিশের মধ্যে উগ্রপন্থিদের কাছে নতি স্বীকার করার একটা ধারা ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে উঠছে৷ তাই যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠন, দেশ ব্লগার হত্যার নিন্দা জানাচ্ছেন তাদের উচিত সমন্বিতভাবে ব্লগারদের রক্ষায়, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা৷ শুধু নিন্দা জানানো যথেষ্ট নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ