প্রথম আলো ব্লগ কর্তৃপক্ষ ১৫ সেপ্টেম্বর তাদের ব্লগ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ সিদ্ধান্ত৷ ২০০৯ সালের ২৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল প্রথম আলো ব্লগ৷
বিজ্ঞাপন
প্রথম আলো ব্লগ কর্তৃপক্ষ সোমবার এক নোটিসে জানায়, ‘‘...বর্তমানে দ্রুতগতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে৷ একই সঙ্গে অনলাইন সংবাদমাধ্যমেও অনেকেই অংশ নিচ্ছেন৷ এগুলো সত্যিকার অর্থেই বেশ উৎসাহজনক এবং ভালো খবর৷ যে বিষয়গুলো একসময় শুধু ব্লগে লিখে প্রকাশ করা যেত এবং ব্লগের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্লগাররাই পড়তেন, সেটি এখন আরও বড় পরিসরে ফেসবুক এবং অনলাইন মাধ্যমসহ নানানভাবে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে৷ এর ফলে নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে অনেকেই সে লেখা পড়তে এবং মন্তব্য করতে পারছেন৷ বর্তমান বাস্তবতায় ফেসবুক ও ফেসবুকের মতো সুবিধাসম্পন্ন অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে ব্লগের জনপ্রিয়তা ও কার্যকারিতা কিছুটা যে কমেছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ আবার অনলাইন সংবাদমাধ্যমেও যুক্ত থাকার সুযোগ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে৷ সব মিলিয়ে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ থেকে এ ব্লগটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷''
‘নাস্তিক ব্লগার’ ইস্যুতে ইসলামি দলের তাণ্ডব
কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে কথিত ‘ধর্মনিন্দার’ অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ বাংলাদেশের কয়েক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিভিন্ন ইসলামি দল৷ এতে প্রাণহানিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্র
শুক্রবার (২২.০২.১৩) দুপুর বারোটার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ১২টি ইসলামি ও সমমনা দল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের ভাষায় যেসব ব্লগার ইন্টারনেটে ‘ধর্মনিন্দা’ করে বিভিন্ন নিবন্ধ লিখছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলন করা হবে৷ কিন্তু সেই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই তাণ্ডবে রূপ নেয়৷ এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘পরিকল্পিত অ্যাকশন’
ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানিয়েছেন, ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবেই সহিংস অ্যাকশনে গেল জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগীরা৷ ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তির কথা বলে তাদের ভাষায় ‘মুরতাদ-নাস্তিকদের’ ফাঁসির দাবিতে আগেই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কর্মসূচি দেয়৷ আর আজ (২২.০২.১৩) জুম্মার নামাজের আগেই তারা তাণ্ডব শুরু করে৷’
ছবি: Reuters
শাহবাগে হামলার চেষ্টা
শুক্রবার (২২.০২.১৩) পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ইসলামি দলের সদস্যরা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোতে চাইলে সংঘর্ষ পল্টন হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ ককটেল, গুলি আর টিয়ার গ্যাসের সেলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ প্রায় একই সময়ে ঢাকার কাঁটাবনে শাহবাগ বিরোধীরা রাস্তায় নামে৷ তারাও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
ঢাকার বাইরে তাণ্ডব, প্রাণহানি
ঢাকার বাইরে চট্টগামের প্রেসক্লাবে হামলা হয়েছে৷ তাদের হামলায় পুলিশ এবং সাংবদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুরে গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালায় তারা৷ হামলা চালায় সিলেট শহীদ মিনারে৷ সেখানে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার বিকেল অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, গাইবন্ধায় ২ জন এবং ঝিনাইদহে জাগরণ মঞ্চ বিরোধীদের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters
শাহবাগে জনতা
দেশব্যাপী ইসলামি দলগুলোর এই তাণ্ডবের পর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আবারো ভিড় বাড়তে শুরু করেছে৷ ব্লগারদের ডাকে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এই চত্বরে অবস্থান করছেন অগুনতি মানুষ৷ তাদের মূল দাবি হচ্ছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট৷’’
ছবি: Reuters
তাণ্ডবের পর নতুন কর্মসূচি
শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘আজকের (২২.০২.১৩) হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে৷’’ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ইন্টারনেটে সতর্ক দৃষ্টি
‘ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে’ এরকম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ এবং দশটি ব্লগ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে৷ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
রোববার হরতাল
শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ ১২টি ইসলামি দল৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী ঐ নোটিসের নীচে লিখেছেন, ‘‘বতর্মান সময়ে ব্লগ বা ব্লগিং সমাজের একটি শিক্ষিত গোষ্ঠীর মেধা ও মননকে শাণিত করার হাতিয়ার স্বরূপ৷ বলা যায় আধুনিক যুগে ব্লগ ও ব্লগিং নতুন লেখক ও পাঠক সৃষ্টির একটি সুতিকাগার৷ তাই সামাজিক ব্লগের প্রয়োজন রয়েছে৷ কিন্তু হঠাৎ প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের নেওয়া এমন সিদ্ধান্তে সত্যি খুবই অবাক হলাম৷ তিল তিল করে গড়ে তোলা ব্লগারদের প্রিয় এই ব্লগটি চালানোর সামর্থ্য কি প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের নাই? নাকি এটা শুধু তাদের মানসিক দৈনতা? যারা সমাজকে বদলে দেওয়ার কথা বলে, তারা কিভাবে সমাজের একটি রুচিশীল শিক্ষিত গোষ্ঠীর গড়ে তোলা মেধা ও চিন্তা বিকাশের ক্ষেত্রটা বন্ধ করে দিতে পারে! আসলে সবটাই মুখোশ, এরা হচ্ছে বাণিজ্য বেনিয়া৷ তাই ফ্রিতে ব্লগ চালু রাখবে কেন?''
আমির আসহাব লিখেছেন, ‘‘আমি এখনও আশা করছি, আমাদের প্রাণের ব্লগ (প্রথম আলো ব্লগ) বন্ধ না হোক৷ যদি কোনো ভালোবাসার টানে তাকে ফিরানো না-ই যায়, তবে আমার প্রত্যাশা এতটুকু যে আমরা যারা ব্লগার আছি তারা যেন হারিয়ে না যাই৷ ফেসবুকসহ বিভিন্ন ব্লগে আমাদের এ বন্ধন যেন চির অটুট থাকে৷''
সুখেন্দু বিশ্বাস লিখেছেন, ‘‘খুবই মর্মাহত হলাম, খুবই৷ কোনোভাবেই কি বাঁচিয়ে রাখা যায় না প্রিয় এই ব্লগটা৷''
এদিকে সামহয়্যার ইন ব্লগে জাফরুল মবীন লিখেছেন, ‘‘প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমেই আমার বাংলা ব্লগিংয়ের অভিষেক হয়েছিল৷ যদিও আমি খুব বেশি অ্যাকটিভ ছিলাম না৷ কিন্তু আজ প্রথম আলো ব্লগ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্লগটি বন্ধ করার নোটিস জারি করেছেন৷ পরিচ্ছন্ন একটি বাংলা ব্লগের এ অকাল প্রয়াণে আমি দুঃখিত, ব্যথিত৷ একই সাথে অন্যান্য বাংলা ব্লগের ভবিষ্যত নিয়েও আমি উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করছি৷''