ব্লগ প্রতিযোগিতা
১১ এপ্রিল ২০১২মাত্র কয়েকদিন আগের কথা৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবর অনেককে ভাবিয়ে তুলেছিল৷ খবরটি ছিল, নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের খাটেহারা নামক স্থানে ব়্যাব সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে' ছয় ব্যক্তি নিহত হয়েছে৷ বাংলাদেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে যখন এই খবর প্রকাশ হলো, তখন আবু সুফিয়ান দিলেন এক ভিন্ন তথ্য৷ এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে আবু সুফিয়ান জানালেন, ‘নিহতদের অন্তত এক জনকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যা করা হয়'৷ বিষয়টি তখন আর নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি করা ‘বন্দুকযুদ্ধ' রইল না৷ বরং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে ঘটনাটি তদন্তের একটি সম্ভাবনা তৈরি হল৷ যে সম্ভাবনার সূত্রপাত আবু সুফিয়ান এবং তাঁর এক সহকর্মীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন৷
অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশে অত্যন্ত সুপরিচিত নাম আবু সুফিয়ান৷ গত কয়েক বছর ধরে বাংলা ব্লগেও সক্রিয় সুফিয়ান৷ একাধিক কমিউনিটি বাংলা ব্লগে লিখেছেন তিনি৷ বর্তমানে তাঁর অবস্থান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম ব্লগে৷ সুফিয়ান এই ব্লগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ বিভিন্ন অনুসন্ধানী নিবন্ধ প্রকাশ করে থাকেন৷ সাংবাদিক এবং ব্লগার হিসেবে বিভিন্ন খবর দ্রুত জানতে পারেন সুফিয়ান৷ কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যমে সব খবর প্রকাশ সম্ভব হয় না৷
সুফিয়ান'এর মতে, ব্লগে কোন বাধা নেই৷ তাই অনেক সময় অনেক খবর শুধুমাত্র ব্লগেই নিবন্ধ আকারে প্রকাশ করতে হয়৷ তিনি বলেন, র্বতমানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে চাকরি করার আগে আমি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ছিলাম৷ সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরি করেছিলাম৷ তিন র্পবের সেই ধারাবাহিকের প্রথম র্পব প্রকাশের পর বাকি দুই র্পব প্রচার করা হয়নি৷ আমাদের অফিস থেকে জানানো হয়, উপরের চাপে মানে রাষ্ট্রযন্ত্রের চাপের কারণে পরর্বতী র্পবগুলো প্রচার করা হবে না। সেক্ষেত্রে আমি যেসব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন খুব বেশি স্পর্শকাতর, যেগুলো আমাদের গণমাধ্যমে যেকোন কারণে ঠাই পায়না সেগুলো ব্লগে প্রকাশ করি।
গত ১১ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ছাড়াও ব্লগার হিসেবে সক্রিয় ছিলেন সাগর৷ করেছেন শিক্ষকতাও৷ সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে, বলেন সুফিয়ান৷ যদিও সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা, এটা মেনে নিয়েই কাজ করেন সাংবাদিকরা৷ তারপরও এই হত্যাকাণ্ড সাংবাদিক, ব্লগারদের ভাবিয়ে তুলেছে৷ সুফিয়ান বলেন, বাসায় যখন আমরা রাতে ঘুমাতে যাই, আমরা কিন্তু খুব নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারিনা। সবসময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকি যে, সাগর-রুনির মতো কোন ভয়ঙ্কর পরিণতি আমাদের বরণ করতে হতে পারে কিনা।
সুফিয়ান বলেন, সাংবাদিকদের পাশাপাশি ব্লগাররাও এখন অনেক বেশি সোচ্চার। ব্লগিংয়ের সাথে মূলধারার সাংবাদিকরা অনেকাংশে যুক্ত হচ্ছেন। আমি মনে করি, ঝুঁকির বাইরে আমরা কেউ নই। তবু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স ক্যাটেগরিতে এবছরও মনোনীত হয়েছে আবু সুফিয়ান'এর বাংলা ব্লগ৷ এই বিভাগে বিশ্বের আরো দশটি ভাষার ব্লগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রয়েছে সুফিয়ানের ব্লগ৷ এখন চলছে প্রতিযোগিতার ভোটাভুটি পর্ব৷ এই বিষয়ে জানতে চাইলে সুফিয়ান বলেন, আমি খুব আনন্দিত। আন্তর্জাতিক ব্লগ প্রতিযোগিতায় পর পর দুই বছর চূড়ান্ত র্পযায়ে আমার ঠাই হয়েছে। আমি প্রতিযোগিতায় আছি। এই ঠাই পাওয়ার বিষয়টি শুধু আমার নয়, বাংলা কমিউনিটির ব্লগারদের এবং বাংলা ব্লগারদের জন্য গৌরবের বিষয়।
উল্লেখ্য, ডয়চে ভেলের এই প্রতিযোগিতায় অনলাইন ভোটাভুটির মাধ্যমে ‘ইউজার প্রাইজ' এবং বিচারকমণ্ডলীর বিবেচনায় ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড' বিজয়ী আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়৷ আগামী ২রা মে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এক বৈঠকে আন্তর্জাতিক বিচারকমণ্ডলী তাদের বিবেচনায় ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড' বিজয়ী নির্ধারণ করবেন৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ