তা কেউ সঠিক বলতে পারছেন না৷ তবে ফিফা তথা বিশ্ব ফুটবলে একটা বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনার কথা বলছেন সবাই৷ ওদিকে মার্কিন তদন্তের খাঁড়া ঝুলে রয়েছে ব্লাটার সহ একাধিক ফিফা কর্মকর্তার মাথার উপর৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
বিজ্ঞাপন
বলতে কি, ১৯৭৪ সাল যাবৎ ফিফা চালাচ্ছেন সেপ ব্লাটার ও তাঁর গুরু তথা পরামর্শদাতা জোয়াও আভেলাঞ্জ৷ এঁরাই বিভিন্ন জাতীয় ফেডারেশন ও আঞ্চলিক প্রধানদের ক্ষমতা দিয়ে তাদের বিশ্বস্ততাকে পুরস্কৃত করেছেন৷
গত শুক্রবার ১৩৩ বনাম ৭৩ ভোটে জর্ডানের প্রিন্স আলি বিন আল-হুসেইনকে হারিয়ে পঞ্চম কর্মকালের জন্য ফিফার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন সুইস নাগরিক ইওসেফ ব্লাটার৷ তার আগেই ব্লাটারের কার্যনির্বাহী পরিষদের সাবেক, হাল ও ভবিষ্যতের একাধিক সদস্যকে মার্কিন তদন্তের ফলস্বরূপ গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: উৎকোচ গ্রহণ, যেমন সামগ্রিকভাবে ফিফার বিরুদ্ধে অভিযোগ, অন্যায়ভাবে রাশিয়া ও কাতারকে ২০১৮ ও ২০২২ সালের বিশ্বকাপ পাইয়ে দেওয়া৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস ও এবিসি নিউজ-এর সর্বাধুনিক খবর অনুযায়ী ব্লাটারের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলেছে, বিশেষ করে ২০১০ সালে একটি এক কোটি ডলার ঘুস নেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানতেন কিনা, সে ব্যাপারে৷
ব্লাটারের উত্তরসূরি হিসেবে উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনির (মাঝে) নাম শোনা যাচ্ছে...ছবি: picture-alliance/dpa/O. Weiken
ভোটে জেতার চার দিন পরেই তিনি তাঁর সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন কেন, এ বিষয়ে ব্লাটার বলেছেন: ‘‘গোটা ফুটবল দুনিয়ার কাছ থেকে আমি সনদ পেয়েছি বলে আমার মনে হচ্ছে না – ফ্যানরা, প্লায়াররা, ক্লাবগুলো, যে সব মানুষ ফুটবল নিয়ে বাঁচেন, যাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে ফুটবল, যারা ফুটবলকে ভালোবাসেন৷'' আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে ফিফার একটি বিশেষ কংগ্রেসে ব্লাটারের উত্তরসূরি নির্বাচন করা হবে৷ ব্লাটার সে অবধি ক্ষমতায় থাকছেন – এবং একটি নতুন সংস্কার প্রক্রিয়া সূচিত করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন৷
ব্লাটারের উত্তরসূরি কে হবেন বা হতে পারেন, তা নিয়ে অবশ্যই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে৷ আপাতত উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনির নামই সর্বাধিক শোনা যাচ্ছে৷ তবে জর্ডানের প্রিন্স আলি আভাস দিয়েছেন, তিনিও আবার প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন৷ দৃশ্যত ব্লাটারের পদত্যাগের সিদ্ধান্তে সবাই খুশি – অথবা আশ্বস্ত৷ প্লাতিনি ব্লাটারের সিদ্ধান্তকে বলেছেন, ‘‘একটি শক্ত সিদ্ধান্ত, সাহসী সিদ্ধান্ত, সঠিক সিদ্ধান্ত''৷ অপরাপর ফুটবল অ্যাসেসিয়েশন কিংবা খেলোয়াড় সমিতির প্রতিক্রিয়াও অনুরূপ, যেমন কনকাসাফ বা ফিফপ্রো৷
ফিফার স্পন্সর কোম্পানিগুলিও দৃশ্যত খুশি, যেমন হুন্দাই-কিয়া মোটর কোম্পানি, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মোটর নির্মাতা এবং ২০২২ সাল অবধি ফিফার ‘অটোমোটিভ পার্টনার'৷ ইতিপূর্বে কোকাকোলা, ভিসা ও আডিডাস অনুরূপভাবে ব্লাটারের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছে৷ ফিফার মুখ্য পৃষ্ঠপোষক সংস্থাগুলি বছরে মাথাপিছু তিন কোটি ডলার প্রদান করে থাকে৷
ব্লাটার থাকতে ফিফার যত কেলেঙ্কারি
গত ১৭ বছর ধরে ফিফার নেতৃত্বে আছেন সেপ ব্লাটার৷ তার এই মেয়াদকালে ফিফা বেশ কয়েকবার কেলেঙ্কারির মুখে পড়েছে৷ এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
১৯৯৭: বিশ্বকাপ বিপণন চুক্তি থেকে ঘুস
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগেই এক ঘুস কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেপ ব্লাটার৷ তাঁর আগের প্রেসিডেন্ট জোয়াও আভেলাঞ্জ এবং তাঁর সাবেক জামাতা রিকার্ডো টেশেরার সঙ্গে বিশ্বকাপের বিপণন সত্ত্ব সংক্রান্ত এক ঘুস কেলেঙ্কারিতে ব্লাটারের নামও এসেছিল৷ সেসময় ফিফার মহাসচিব ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৯৯৮: আফ্রিকার প্রতিনিধিদের ঘুস
ফ্রান্সের বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সেপ ব্লাটার৷ অভিযোগ আছে, সেসময় প্যারিস হোটেলে অবস্থানরত আফ্রিকার প্রত্যেক প্রতিনিধিকে পঞ্চাশ হাজার মার্কিন ডলার করে ঘুস দেয়া হয়েছিল৷ ব্লাটার অবশ্য এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন৷
ছবি: AP
২০০৬: টিকিট বিক্রির দায়িত্বে ভাইস প্রেসিডেন্ট
২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার সুযোগ পায় ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো৷ সেদেশের জ্যাক ওয়ার্নার তখন ফিফার ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ তার পরিবারের সদস্যরা সেবার সেদেশে টিকিট বিক্রির সুযোগ পায় এবং নয় লাখ মার্কিন ডলারের মতো কমিশন থেকে আয় করে, যা আসলে অনুচিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Acosta
২০১০: রাশিয়া এবং কাতারে বিশ্বকাপ
২০১৮ এবং ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পর্যায়ক্রমে রাশিয়া এবং কাতারকে দেয়া হয়৷ কিন্তু এই ঘোষণার আগেই ফিফার দুই কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়৷ রাশিয়া এবং কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ দেয়া নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
২০১১: ব্লাটারের প্রতিদ্বন্দ্বীর পদত্যাগ
সেবছর ফিফার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ব্লাটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন কাতারের মোহাম্মেদ বিন হাম্মাম৷ কিন্তু ভোটাভুটির আগেই ক্যারাবিয়ানরা হাম্মামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেন৷ ফলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন হাম্মাম৷
ছবি: Saeed Khan/AFP/Getty Images
২০১৪: টিকিট বিক্রিতে দুর্নীতি
ব্রাজিলে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিশ্বকাপের টিকিট বিতরনে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় আর্জেন্টিনার ফিফা কর্মকর্তা জুলিও গ্রোডোনার বিপক্ষে৷ ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই মারা যান তিনি৷
ছবি: Juan Mabromata/AFP/Getty Images
২০১৫: ব্যাপক ধরপাকড়
দুর্নীতির অভিযোগে ২৬ মে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯ ফিফা কর্মকর্তাসহ ১৪ জন৷ ফিফা সভাপতি নির্বাচনের ঠিক আগে গ্রেপ্তার হলেন তাঁরা৷ এ কেলেঙ্কারির পর ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি উঠলেও সে দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে৷