জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসের সঙ্গে বৈঠক করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানে তালেবান তাদের অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের নাম ঘোষণার পর এই বৈঠক হলো। জার্মানিতে গিয়ে ব্লিংকেন এই বৈঠক করেছেন। সেখান থেকে ইইউ-র বেশ কয়েকজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তারা ভার্চুয়ালি কথা বলেছেন।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা চলে আসার পর এখনো বিভিন্ন দেশের প্রচুর মানুষ সেখানে আছেন। তালেবান তাদের নিজেদের দেশে ফিরতে দেবে বলেছে। এমনকী বৈধ কাগজপত্র থাকলে আফগানদেরও বিদেশে যেতে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। তালেবান যাতে কথা রাখে, তা নিশ্চিত করতেই ব্লিংকেন-মাস বৈঠক করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
কী বলেছেন ব্লিংকেন
হাইকো মাসের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেছেন ব্লিংকেন। তারপর ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল ও বেশ কয়েকটি ইইউ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে তারা ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। তারপর মাস বলেছেন, ''তালেবান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইছে। মান্যতা চাইছে। যে কোনো ধরনের মান্যতা, যে কোনো ধরনের সমর্থন তাদের অর্জন করে নিতে হবে।''
চলছে আফগানদের আফগানিস্তান ত্যাগ
প্রায় পুরো আফগানিস্তানই এখন তালেবানের দখলে৷ ফলে সারা দেশে আর যুদ্ধ পরিস্থিতি নেই৷ তারপরও প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিতে সীমান্তের দিকে ছুটছে হাজার হাজার আফগান৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Saeed Ali Achakzai/REUTERS
সপরিবারে ‘বন্ধুত্ব ফটকে’
তালেবান শাসন থেকে নিজেদের দূরে রাখতে তল্পিতল্পা নিয়ে পাকিস্তান সীমান্তের ‘ফ্রেন্ডশিপ গেটে’ চলে এসেছে একটি আফগান পরিবার৷ চমন শহর লাগোয়া এই গেট পার হলেই পাকিস্তানে প্রবেশ করবেন তারা৷
ছবি: Saeed Ali Achakzai/REUTERS
তালেবানের পাহারা
গত ২ সেপ্টেম্বর সংবাদ মাধ্যমকে পাকিস্তানের তোর্কহাম শহর সংলগ্ন সীমান্তে নিয়ে যায় তালেবান৷ সীমান্তে তখন এভাবেই অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছিলেন এক তালেবান যোদ্ধা৷
ছবি: Gibran Peshimam/REUTERS
দেশ ছাড়তে মরিয়া
যানবাহনের অভাবে অনেক মানুষ হেঁটেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্তে পৌঁছাচ্ছেন৷ ছবির এই কয়েকজন সেই তুলনায় ভাগ্যবান৷ তাই একটা ভ্যানের ছাদে উঠে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাতেও খুশি তারা৷
ছবি: Saeed Ali Achakzai/REUTERS
যাচাই-বাছাই
ফ্রেন্ডশিপ গেটের দৃশ্য৷ আফগানিস্তান থেকে আসা এক ব্যক্তির সব কাগজপত্র পরীক্ষা করছেন এক পাকিস্তানি সেনা৷
ছবি: Saeed Ali Achakzai/REUTERS
চিকিৎসার জন্য
আফগানদের পাকিস্তানে প্রবেশ অবশ্য নতুন কিছু নয়৷ অনেক আফগান চিকিৎসার জন্যও পাকিস্তানে যান৷ ছবির এই মেয়েটিও ফ্রেন্ডশিপ গেট দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করছে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হবার আশায়৷
ছবি: Gibran Peshimam/REUTERS
ইরান সীমান্তে...
অনেক আফগান আবার প্রতিবেশী দেশ ইরানেও যাচ্ছেন৷ ছবির এই নারী ইরানের রাজাভি খোরাসান প্রদেশের কাছের সীমান্তে পৌঁছে ক্লান্ত হয়ে রাস্তার মাঝেই বসে পড়েছেন৷
ছবি: Majid Asgaripour/WANA/REUTERS
তালেবান পাহারায় পাকিস্তানে প্রবেশ?
তোর্কহাম শহর সংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশের অপেক্ষায় এক দল আফগান৷ সশস্ত্র এক তালেবান যোদ্ধাকেও দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: Gibran Peshimam/REUTERS
শরণার্থীর জীবন শুরুর প্রস্তুতি
একটি পরিবার আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের চমন শহরে এসে পৌঁছেছে৷ আপাতত নিশ্চিন্ত তারা৷ তাই চলছে তাঁবু বানিয়ে বসবাস শুরুর প্রস্তুতি৷
ছবি: Saeed Ali Achakzai/REUTERS
ইরান সীমান্তে পরিচয় পরীক্ষা
ইরানের রাজাভি খোরাসান প্রদেশের দোওকারুন শহর সংলগ্ন সীমান্তে আসা আফগানদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখছেন এক ইরানি কর্মকর্তা৷
ছবি: Majid Asgaripour/WANA/REUTERS
অস্থায়ী শরণার্থী শিবির
পাকিস্তানের চমন শহরের নানা জায়গায় গড়ে উঠছে আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের ছোট ছোট শিবির৷ ওপরের ছবিতে তারই একটি৷
ছবি: Saeed Ali Achakzai/REUTERS
সপরিবারে ইরানে
রাজাভি খোরাসান প্রদেশের দোওকারুন সংলগ্ন সীমান্তে এসে ইরানে প্রবেশের অপেক্ষায় একটি আফগান পরিবার৷
ছবি: Majid Asgaripour/WANA/REUTERS
11 ছবি1 | 11
অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছে যে, তারা তালেবান চাপের কাছে নতিস্বীকার করে আফগানদের চার্টার বিমানে করে নিজেদের দেশে নিয়ে আসছে না। এই আফগানরা গত ২০ বছর অ্যামেরিকাকে প্রচুর সাহায্য করেছে। ব্লিংকেন বলেছেন, ''আমরা আমাদের যাবতীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে ওই আফগানদের বিমানে করে আফগানিস্তান থেকে নিয়ে আসতে চাইছি। আমরা সকলকে বলেছি, তালেবানকে স্পষ্টভাষায় জানিয়েছি, চার্টার বিমানগুলিকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে উড়তে দিতে হবে এবং আফগানদের বিদেশে যাওয়ার ছাড়পত্র দিতে হবে।''
মাস কী বলেছেন
মাস জানিয়েছেন, ''অন্তর্বর্তী তালেবান সরকারে সব গোষ্ঠীকে নেয়া হয়নি। আরো আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়া ও দেশের স্থায়িত্বের জন্য এটা উপযুক্ত বার্তা নয়। মাস বলেছেন, ''তালেবানের বোঝা উচিত, তারা যদি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একঘরে হয়ে থাকে, তাতে তাদের স্বার্থসিদ্ধি হবে না। আফগানিস্তানের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য ছাড়া তারা স্থায়িত্বের দিকে যেতে পারবে না।''
আফগানিস্তানের সাবেক ভারপ্রাপ্ত যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আহমেদ শাহ সাদাত এখন জার্মানিতে সাইকেলে করে খাবার ডেলিভারির কাজ করছেন৷ পাশাপাশি জার্মান ভাষা শিখছেন তিনি৷
ছবি: Hanibal Hanschke/REUTERS
সাবেক মন্ত্রী
আফগানিস্তানের সাবেক ভারপ্রাপ্ত যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আহমেদ শাহ সাদাত৷ ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি মন্ত্রী ছিলেন৷ দায়িত্বে ছিলেন দুই বছর৷
ছবি: Privat
জার্মানিতে পাড়ি
গতবছরের সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে পাড়ি জমান সাদাত৷ এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে চাকরি খুঁজেছেন৷ কিন্তু জার্মান ভাষা জানা না থাকায় আইটি ও টেলিকমে ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও সাদাতের কাজ পেতে সমস্যা হচ্ছিল৷ তার ফেসবুক প্রোফাইল বলছে, তিনি ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন৷
ছবি: Hanibal Hanschke/REUTERS
ভাষা শিক্ষা
সাদাত এখন লাইপসিশ শহরের এক স্কুলে দিনে চার ঘণ্টা জার্মান ভাষা শিখছেন৷ এরপর ছয় ঘণ্টা খাবার ডেলিভারি কোম্পানি ‘লিফারাণ্ডো’র হয়ে কাজ করছেন৷ এই গ্রীষ্মে তিনি এই কাজ শুরু করেছেন৷ সাদাতের ব্রিটিশ নাগরিকত্বও রয়েছে৷
ছবি: Hanibal Hanschke/REUTERS
সমালোচনা
সরকারে দুই বছর থাকার পরও জার্মানিতে এসে এমন কাজ বেছে নেয়ায় আফগানিস্তানের অনেকে তার সমালোচনা করেছেন৷ কিন্তু ৪৯ বছর বয়সি সাদাত রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘আমার নিজেকে অপরাধী মনে করার কিছু নেই৷ আমি আশা করছি, অন্য রাজনীতিবদরাও এই পথ বেছে নেবেন, শুধু পালিয়ে না থেকে মানুষের সঙ্গে কাজ করবেন৷’’
ছবি: HANNIBAL HANSCHKE/REUTERS
জার্মান পত্রিকায় রিপোর্ট
জার্মানির লাইপসিশার ফল্কসসাইটুং পত্রিকায় সাদাতকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জার্মানিতে নিরাপদ বোধ করি৷ এখানে পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, রাজনীতিও নয়৷’’ তিনি জানান, খাবার ডেলিভারির কাজ করায় অনেকে তাকে নিয়ে গর্বিত, কারণ তারা বুঝতে পেরেছেন, তিনি কখনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ছিলেন না৷ লাইপসিশার ফল্কসসাইটুং জানিয়েছে, সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার পর সাদাত কয়েকটি চাকরির অফার পেয়েছেন৷
ছবি: Hanibal Hanschke/REUTERS
5 ছবি1 | 5
কেন এই বৈঠক
মাস আগেই জানিয়েছিলেন, তালেবানের প্রতি কী মনোভাব নেয়া হবে, তা ঠিক করতেই বৈঠক হবে। মাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ''তালেবান ক্ষমতায় এসেছে বলে আফগান জনগণকে দোষ দেয়া ঠিক হবে না। আন্তর্জাতিক দুনিয়া তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে, সেটাও ঠিক নয়।''
জার্মান কূটনীতিকরা বলেছেন, আফগানিস্তানে ত্রিমুখী মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। ক্ষুধা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য না পাওয়া।
মাসের বক্তব্য, ''তালেবান নতুন সরকার যদি ঠিকভাবে চালাতে না পারে, তা হলে অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। তার ফলে প্রবল মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে।'' এভাবেই আফগানিস্তান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছন মাস। সহমত ব্লিংকেন।