চন্দ্রবিজয় হয়েছে, সূর্যের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ভারতের আদিত্য এলওয়ান। এবার ব্ল্যাক হোল রহস্য সমাধানে ভারতের মহাকাশ অভিযান।
বিজ্ঞাপন
নববর্ষের সকালে যখন ভারতের মানুষ নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ত, তখন সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের রহস্য সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দিল ভারতের প্রথম এক্স-রে পোলারিমিটার উপগ্রহ এক্সপোস্যাট। এই উপগ্রহকে কক্ষপথে স্থাপন করলো পিএসএলভি সি৩৮ রকেট।
সকাল ৯টা বেজে ৩২ মিনিটে ইসরো ঘোষণা করলো, এই উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। উপগ্রহটিকে যে জায়গায় বসানোর কথা ছিল, সেটি এখন ঠিক সেখানেই আছে। উপগ্রহটি কক্ষপথে ৬৫০ কিলোমিটার দূরে ছয় ডিগ্রি হেলে আছে।
এর আগে মহাকাশে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এই ধরনের এক্সরে পেরিমিটার উপগ্রহ পাঠিযেছিল। দ্বিতীয়টা পাঠালো ভারত। ইসরো ও ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সাফল্যের টুপিতে আরেকটি পালক যুক্ত হলো।
অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এনডিটিভিকে বলেছেন, উপগ্রহটিকে প্রত্যাশিত কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। এবার তা পরিকল্পনামাফিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চলবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন।
এইটা ছিল পিএসএলভি রকেটের ৬০তম উড়ান।
ব্ল্যাক হোল কী?
কোনো তারার যখন মৃত্যু হয়, তখন তা নিজের মাধ্যাকর্ষণের চাপে ভেঙে যায় এবং তৈরি হয় ব্ল্যাক হোল বা নিউত্রন স্টার। মহাবিশ্বে ব্ল্যাক হোলের গ্র্যাভিটশনাল ফোর্স সবচেয়ে বেশি থাকে।
চাঁদে নামার এত চেষ্টা কেন?
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে বুধবার চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে ভারত৷ কিন্তু বড় মহাকাশ শক্তিগুলো চাঁদে নামতে এত মরিয়া কেন?
ছবি: ISRO via REUTERS
চাঁদের তথ্য
পৃথিবী থেকে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চাঁদ৷ পৃথিবীর আবহাওয়া, সমুদ্রের ঢেউ সবকিছুর উপর চাঁদের প্রভাব আছে৷ ধারণা করা হয়, সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে একটি বিশাল কিছুর ধাক্কা লেগে চাঁদ তৈরি হয়েছিল৷ চাঁদে যখন পূর্ণ সূর্য থাকে তখন তাপমাত্রা ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে যায়৷ আর অন্ধকারের সময় তাপমাত্রা মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়৷
ছবি: MARTIN BERNETTI/AFP
পানি
২০০৮ সালে ভারতের চন্দ্রযান-১ মিশন প্রথম চাঁদে পানির অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিল৷ মানুষের জীবনধারণের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ৷ এছাড়া এটি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের উৎস- যা রকেটের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে৷
ছবি: NASA/Zuma/picture alliance
হিলিয়াম-৩
হিলিয়ামের একটি আইসোটোপ হচ্ছে হিলিয়াম-৩৷ পৃথিবীতে হিলিয়াম খুব বিরল৷ কিন্তু এই উপাদানটি চাঁদে ১০ লাখ টনের বেশি আছে বলে নাসা জানিয়েছে৷ পরমাণু চুল্লিতে হিলিয়াম-৩ ব্যবহৃত হতে পারে, কিন্তু এটি তেজস্ক্রিয় না হওয়ায় বিপজ্জনক বর্জ্য তৈরি হয় না বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি৷
ছবি: RAMI AL SAYED/AFP
রেয়ার আর্থ মেটাল
স্মার্টফোন, কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তিতে এই উপাদান ব্যবহার করা হয়৷ চাঁদে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডসহ অন্যান্য রেয়ার আর্থ মেটাল আছে বলে বোয়িংয়ের এক গবেষণায় জানা গেছে৷
ছবি: Britta Pedersen/dpa/picture alliance
চাঁদ খনন কীভাবে সম্ভব?
বিষয়টি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷ খনন করতে হলে চাঁদে কোনো এক ধরনের অবকাঠামো স্থাপন করতে হবে৷ চাঁদের পরিবেশের কথা বিবেচনায় ধারণা করা যায়, খননের বেশিরভাগ কাজটি রোবট দিয়ে করতে হবে৷ আর চাঁদে পানি থাকায় মানুষও হয়ত টানা কয়েকদিন সেখানে থাকতে পারবে৷
ছবি: ingimage/IMAGO
আইন কী বলে?
এই বিষয়টিও স্পষ্ট নয় এবং অনেক ফাঁক আছে৷ জাতিসংঘের ১৯৬০ সালের আউটার স্পেস ট্রিটি বলছে, কোনো দেশ চাঁদের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারবে না এবং সব দেশের লাভের উদ্দেশ্যে মহাকাশে গবেষণা করা যেতে পারে৷ তবে আইনজীবীরা বলছেন, বেসরকারি কোনো কোম্পানি চাঁদের কোনো একটি অংশের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে পারবে কিনা তা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Christian Lehner/PantherMedia/imago images
১৯৭৯ সালের চুক্তি
ঐ সালে সই হওয়া মুন এগ্রিমেন্ট-এ বলা হয়েছে চাঁদের কোনো অংশ ‘কোনো রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক আন্তঃসরকারি বা বেসরকারি সংস্থা, জাতীয় সংস্থা বা বেসরকারি সংস্থা বা কোনো প্রাকৃতিক ব্যক্তির সম্পত্তি হবে না৷’’ তবে বড় কোনো মহাকাশ শক্তি এই চুক্তি অনুমোদন করেনি৷
ছবি: Seung-il Ryu/NurPhoto/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ
২০২০ সালে দেশটি আর্টেমিস অ্যাকর্ড ঘোষণা করেছিল৷ উদ্দেশ্য, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইন মেনে চাঁদে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলা৷ কিন্তু চীন ও রাশিয়া এই চুক্তিতে যোগ দেয়নি৷
ছবি: Taidgh Barron/ZUMA Wire/IMAGO
8 ছবি1 | 8
নিউট্রন স্টারের ঘনত্ব থাকে সবচেয়ে বেশি।
এই ব্ল্যাক হোল নিয়ে অনেক রহস্য রয়েছে। এই নিয়ে এক্সপোস্যাট তথ্য পাঠালে রহস্য সমাধানে তা সাহায়্য করবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
কী করবে এক্সপোস্যাট
এই এক্সপোস্যাটের মধ্যে আছে পেলোড পোলারিমিটার ইনস্ট্রুমেন্ট ইন এক্স-রে পোলিক্স এবং এক্স রে স্পেকট্রোস্কোপি এক্সপেট। এর মাধ্যমে মহাকাশে এক্স রশ্মির উৎস খোঁজার কাজটা করবে এক্সপোস্যাট।