স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা শিশু৷ এই শিশুদের একটি সুন্দর, নিরাপদ বর্তমান আর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার দায়িত্ব বড়দের৷ কিন্তু বড়রা সেটা কতটা করতে পারছেন?
বিজ্ঞাপন
জার্মানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিককেন্দ্র হামবুর্গে ২০১৭ সালে গিয়েছিলাম জি-টোয়েন্টি সামিট কভার করতে৷ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানসহ বিশ্বের বড় বড় নেতারা হাজির সেই সম্মেলনে৷
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে গিয়ে পুরো শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ৷ তবে জার্মান কর্তৃপক্ষ একটি বিষয় নিশ্চিত করেছিল৷ বড় বড় বিশ্ব নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো যাবে, শুধু সহিংস প্রতিবাদ এবং কেউ যাতে সহিংসতার শিকার না হন সেটা দেখবে নিরাপত্তা বাহিনী৷
জি-টোয়েন্টি কভার করতে তখন হামবুর্গের কাছাকাছি গিয়ে পড়লাম বিশাল যানজটে৷ শহরের ভেতর ব্যক্তিগত গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ৷ আমি সাংবাদিক, আমার গাড়ি ঢুকতে পারবে৷ তবে সেজন্য আলাদা যে লেন সেই লেন অবধি পৌঁছাতে পারছিলাম না যানজটের কারণে৷
এরইমধ্যে অভাবনীয় এক দৃশ্য চোখে পড়লো৷ শহরের এক কোণা থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া৷ সেই ধোঁয়ার দিকে আকাশ পথে ছুটে যাচ্ছে হেলিকপ্টার৷ আর রাস্তায় সাইরেন বাজিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য গাড়ি৷ কোনোটি ফায়ার সার্ভিসের, কোনোটি পুলিশের৷ সব মিলিয়ে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থার আভাস পাচ্ছিলাম৷
বিশ্বে শিক্ষার্থীদের ১২টি আলোচিত আন্দোলন
সারা বিশ্বেই দাবি আদায়ে সোচ্চার থাকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ কোনোটি সফল হয়, কোনোটি হয় না৷ তবে সফল না হলেও কিছুটা প্রভাব রেখে যায়৷ ছবিঘরে বাংলাদেশের বাইরের আন্দোলনগুলোর কথা থাকছে৷
ছবি: UPI/dpa/picture-alliance
হিটলারের সমালোচনা
১৯৪২ সালে জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘হোয়াইট রোজ সোসাইটি’ নামে এক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল৷ তারা হিটলারের শাসন ও ইহুদিদের উপর অত্যাচারের সমালোচনা করে বেনামে লিফলেট বিলি করেছিল৷ হিটলারের পুলিশ বাহিনী গেস্টাপো অধিকাংশ মূল আন্দোলনকারীকে আটক করেছিল৷ পরে বিচার করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ ছবিতে আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা সোফি শল (ডানে) ও তার ভাই হান্সকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
১৯৬৮ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধে লিপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ত থাকা এবং নির্মিতব্য জিমনেশিয়ামে বর্ণবাদী পরিকল্পনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা৷ বিক্ষোভকারীদের সরাতে সহিংস উপায় বেছে নেয় পুলিশ৷ বিক্ষোভে জড়িত থাকায় কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল৷ তবে দুটি দাবিই মানা হয়েছিল৷
ছবি: Dave Pickoff/AP Photo/picture alliance
মিয়ানমারে বিক্ষোভ
১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ জেনারেল নে উইনের সামরিক সরকার শক্ত হাতে বিক্ষোভ দমন করায় একশ’র বেশি বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছিল৷ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ চার মাস পর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছিল৷ ১৯৮৮ সালে আবারও আন্দোলন (ছবি) শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা৷ সেটি দমানো হলেও নে উইন পদত্যাগ করেছিলেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
গ্রিসের এথেন্সে বিক্ষোভ
গ্রিসে তখন ছয় বছর ধরে সামরিক শাসন চলছিল৷ এর প্রতিবাদে ১৯৭৩ সালে এথেন্স পলিটেকনিকের একদল বামপন্থি শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন৷ দ্রুত তাদের সঙ্গে আরো শিক্ষার্থী যোগ দেন৷ বিক্ষোভ দমাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাংক ঢুকিয়ে দেয়া হয়৷ এতে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ২৪ জন মারা যান৷ শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে আরেক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা আরেকটি অভ্যুত্থান করে বসেন৷ এর কয়েকমাস পর সামরিক সরকারের পতন ঘটে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন
সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম বড় বিক্ষোভটি করেছিল শিক্ষার্থীরা৷ ১৯৭৬ সালে জোহানেসবার্গের সোয়েটো এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে৷ পড়ালেখার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির পাশাপাশি আফ্রিকান ভাষা যুক্ত করার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হয়৷ আফ্রিকান ভাষাটি বর্ণবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় প্রতিবাদ হয়৷ বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ গুলি চালালে সরকারি হিসেবে ১৭৬ জন (মতান্তরে প্রায় ৭০০ জন) প্রাণ হারান৷
ছবি: UPI/dpa/picture-alliance
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ
১৯৯৮ সালের ১২ মে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছিল ত্রিশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ তাদের দমাতে পুলিশ গুলি চালালে চারজন মারা যায়৷ এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হলে সুহার্তো পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা সুহার্তো৷
ছবি: Robertus Pudyanto/ZUMAPRESS.com/picture alliance
তিয়েনআনমেন স্কোয়ার বিক্ষোভ
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ছিলেন হু ইয়াওবাং৷ তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন৷ সে কারণে একসময় তিনি দলের পদ হারান৷ ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যুর পর গণতন্ত্রপন্থি শিক্ষার্থীরা বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে বিক্ষোভ শুরু করে৷ পরে সেটা বড় হলে তাদের দমাতে সামরিক আইন জারি করা হয়৷ ট্যাংক দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়৷ এতে মতান্তরে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
ইরানের ‘তিয়েনআনমেন স্কোয়ার’
১৯৯৯ সালে সংস্কারবাদী পত্রিকা ‘সালাম’ বন্ধের প্রতিবাদে তেহরানের রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ এরপর পুলিশ হলে ঢুকে বিছানা পুড়িয়ে দেয়, জানালার কাচ ভেঙে ফেলে৷ ছয় দিন ধরে চলা আন্দোলনের সময় কয়েক হাজার জনকে আটক করা হয়৷ প্রায় ৭০ জন নিখোঁজ হন৷ বিক্ষোভের পর সরকার উলটো বাকস্বাধীনতা আইন আরও কঠোর করেছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
লন্ডনে বিক্ষোভ
শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি বৃদ্ধির সরকারি প্রস্তাবের প্রতিবাদে ২০১০ সালে লন্ডনে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়৷ কোনো কোনো বিক্ষোভে ৩০ থেকে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়৷ এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সরকারি দলের ক্যাম্পেন হেডকোয়ার্টারে ঢুকে পড়েছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করেছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
হংকংয়ের ‘ছাতা বিপ্লব’
২০১৪ সালে চীনের কংগ্রেস হংকংয়ের নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব করে৷ সেটি বাস্তবায়িত হলে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে বলে হংকংয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল৷ বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে৷ বিক্ষোভকারীদের মারধরও করা হয়৷ এসব থেকে বাঁচতে ছাতার ব্যবহার শুরু করেছিল তারা৷ তাই এটি ‘আমব্রেলা রেভুলিউশন’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল৷ ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল এই আন্দোলন৷
ছবি: AFP/Getty Images/D. de la Rey
পৃথিবী বাঁচানোর আন্দোলন
২০১৮ সালে প্রতি শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে সংসদের কাছে এই পোস্টার নিয়ে দাঁড়াতেন সুইডেনের স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ সেখানে লেখা আছে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’৷ টুনব্যার্গের এই আন্দোলন এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখন সোচ্চার শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: picture-alliance/DPR/H. Franzen
ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনে৷ ঘটনার তদন্তের দাবি উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শোনেনি৷ তাই শিক্ষার্থীরা কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেছিল৷ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে৷ উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশ এমন আচরণ করে বলে অভিযোগ ওঠে৷ আন্দোলন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়েছিল৷ পরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন উপাচার্য৷
ছবি: ZUMA Press/imago images
12 ছবি1 | 12
হামবুর্গে সেসময় বেশ কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল৷ তবে পুলিশ আগেই জানিয়েছে, প্রতিবাদ দমনে গুলি চালানো হবে না৷ জলকামান, মরিচের গুঁড়া ছিটানো থেকে শুরু করে লাঠিপেটা, ক্রমাগতভাবে গাড়ি সাজিয়ে কিংবা মানব দেয়াল তৈরি করে প্রাণঘাতী নয় এমন সব উপায়ে প্রয়োজনে সহিংস আন্দোলনকারীদের ঠেকানো হবে৷
সেসময় জার্মানি এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাম দলের অনেক সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন হামবুর্গে৷ শহরটির তৎকালীন মেয়র ওলাফ শলৎস, যিনি শীঘ্রই চ্যান্সেলর হতে চলেছেন, প্রতিবাদকারীদের বাধা দেয়ার বিরোধী ছিলেন৷ কোনো ইস্যুতে প্রতিবাদ, আন্দোলন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, সেটা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন তিনি৷
আর সেই সুযোগে কিছু অতিউৎসাহী প্রতিবাদকারী সাধারণ প্রতিবাদ কর্মসূচির পাশাপাশি রাস্তায় টায়ারে আগুন দিয়ে, দামি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে, দোকানপাট ভাঙ্চুর করে এবং পুলিশের উপর আক্রমণ করে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যা সাম্প্রতিক অতীতে জার্মানিতে দেখা যায়নি৷ তবুও সহিংস আন্দোলনকারীদের দিকে শিসা গুলি ছোঁড়েনি পুলিশ৷ তারা প্রাণঘাতী নয় এমন সব উপায়ে সহিংস আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করেছে৷
এরকম সহিংস যখন শহরের পরিস্থিতি, তারই মাঝে এক সকালে দেখি হামবুর্গের রাস্তায় হাজার হাজার শিশু-কিশোর৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে রাজপথে নেমেছে তারা৷ শহরের এ-মাথা থেকে ও-মাথা অবধি তাদের সেই প্রতিবাদ লাইভ কভার করেছিলাম৷ শিশুরা চাচ্ছিলো জলবায়ু পরিবর্তনরোধে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি এবং সক্রিয় উদ্যোগ৷
লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, শিশুদের সেই প্রতিবাদ সমাবেশ যাতে কোনোরকম বাধাবিপত্তি ছাড়া শেষ হয়, হেলমেট পরে লাঠি হাতে কেউ যাতে সেই শিশুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারে, সেটা নিশ্চিত করেছিল পুলিশ৷ শহরের নানা জায়গায় সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেও শিশুরা তাই নির্বিঘ্নে তাদের কর্মসূচি পালনে সক্ষম হয়েছে৷
জি-টোয়েন্টিতে প্রতিবাদের যত কারণ, ধরন
কখনো শিক্ষার্থীরা, কখনো রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট, কখনও বা পরিবেশবাদীরা৷ হামবুর্গের জি-টোয়েন্টি সম্মেলন ঘিরে প্রতিবাদে মুখর অসংখ্য প্রতিবাদকারী৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
ট্রাম্পের রাস্তায় বাধা দেয়ার পরিনাম
ট্রাম্প যাবেন শোয়ানেনভিক রাস্তা দিয়ে৷ তাই সে রাস্তাটি ব্লক করেছিলেন প্রতিবাদকারীরা৷ কিন্তু পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে৷ পানিতে অনেক প্রতিবাদকারী ভিজে একাকার হয়েছেন৷ পরবর্তীতে তাদের এভাবে রোদে দাঁড়িয়ে কাপড় শুকাতে দেখা গেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই
পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া প্রতিবাদকারীদের ব্যানার এটি৷ পুলিশের কড়া অবস্থান সত্ত্বেওকয়েকশতহামবুর্গের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন থেকে একটি প্রতিবাদ ব়্যালি নিয়ে সেন্ট পাউলির দিকে যেতে সক্ষম হয়৷
ছবি: DW/A. Islam
নো জি-টোয়েন্টি
জি-টোয়েন্টি চান না এই প্রতিবাদকারী৷ তাই ছাতাতে লিখে দিয়েছেন সেই কথা৷ পাশে আরেকজন দেখাচ্ছেন শান্তির প্রতীক৷
ছবি: DW/A. Islam
তোমাদের সমাধান আমাদের সমস্যা
শুক্রবার এক প্রতিবাদ ব়্যালিতে অংশ নেন অনেক শিক্ষার্থী৷ তাদেরই একজনের হাতে ছিল এই ব্যানার৷ আপনি কি তাঁর সঙ্গে একমত?
ছবি: DW/A. Islam
বন্ধুদের সঙ্গে ব়্যালিতে
তাঁর বন্ধুরা নাকি সবাই ‘ব্যাড কিডস’! এমনই দাবি প্রতিবাদে অংশ নেয়া এই শিক্ষার্থীর৷ এর মাধ্যমে তিনি কি কোনো প্রেসিডেন্টকে ইঙ্গিত করছেন তিনি?
ছবি: DW/A. Islam
চেহারা দেখাতে মানা
হামবুর্গে জি-টোয়েন্টি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া কেউ কেউ নিজেদের চেহারা বা পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী হননি৷ ছবি তুলতে গেলে তেমন একজন ছাতা মেলে ধরেন৷
ছবি: DW/A. Islam
ওয়ান্টেড তালিকায় বিশ্ব নেতারা
জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে অংশ নেয়াদের কয়েকজনকে ওয়ানটেড তালিকায় ফেলেছেন প্রতিবাদকারীরা৷ এর কারণও অবশ্য লেখা আছে ব্যানারে৷
ছবি: DW/A. Islam
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান
মানবতার খাতিরে ‘‘ফ্যাসিস্ট অ্যামেরিকার’’ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এই প্রতিবাদকারীরা৷ তাদের মতো আরো অনেককে দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে৷ বিশেষ করে প্যারিস জলবায়ু এগ্রিমেন্ট থেকে সরে আসায় তাঁর অনেক সমালোচনা হচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Islam
পোশাকে প্রতিবাদ
প্রতিবাদকারীরা তাদের পোশাকেও জি-টোয়েন্টি বিরোধী স্টিকার এঁটে দিয়েছেন৷ শুক্রবার একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিবাদকারী৷
ছবি: DW/A. Islam
পুলিশের সতর্ক অবস্থান
তবে হামবুর্গে পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে প্রতিবাদকারীরা বড় ধরনের সহিংস কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটাতে পারেনি৷ গতকাল একটি বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ জলকামান ও মরিচের গুড়া ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ হামবুর্গে বর্তমানে ২০ হাজারের মতো পুলিশ অবস্থান করছে৷ শহরের মধ্যে রাস্তাঘাট কার্যত ফাঁকা রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
জার্মানির রাস্তা-ঘাটে শিশুদের এমন প্রতিবাদ ইদানীং মাঝেমাঝেই দেখা যায়, তাদের আন্দোলন পুরোপুরি পরিবেশকেন্দ্রিক৷ সেই আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই- ভবিষ্যৎ পৃথিবীটা সুন্দর আর নিরাপদ রাখতে জলবায়ু পরিবর্তনরোধে আরো সক্রিয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা৷ বড়রা এখনো এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি, বরং একেক সময় একেকরকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে৷ বাস্তব উদ্যোগ কমই দেখা যায়৷ শিশুরা এই অবস্থার পরিবর্তন চায়৷
জার্মানির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, গত শতাব্দির ষাটের দশকেও এভাবে ফুঁসে উঠেছিল জার্মান কিশোর-তরুণ-যুবারা৷ সেসময় বিশ্বব্যাপী যুব আন্দোলনের ঢেউ ভালোভাবেই লেগেছিল পশ্চিম জার্মানিতে৷ বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা তাদের যুদ্ধের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গড়ে দিয়েছিল৷ রাজনীতিবিদদের নানা ব্যর্থতা তাদের চরম বিরক্ত করে তুলেছিল৷ ফলে নিজেদের আর্থিক, সামাজিক স্বাধীনতার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিতে মাঠে নেমেছিল তারা৷
সেই আন্দোলন জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক নীতি বদলে দিয়েছে৷ বড়দেরকে ছোটদের কথা শুনতে, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি যুদ্ধবিরোধী এবং ‘ছোটবান্ধব’ করতে বাধ্য করেছে৷
গত কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদেরকেও রাজপথে নামতে দেখা যাচ্ছে৷ তাদের মূল দাবি, নিরাপদ সড়ক৷ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের৷ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চায় তারা৷
হতাশার কথা হচ্ছে, শিশুদের এই ন্যায্য দাবি মানার ক্ষেত্রে বড়দের, অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের চেষ্টার ঘাটতি প্রকট৷ বরং তাদের বর্বরভাবে পিটিয়ে রাজপথ থেকে সরানোর চেষ্টাই বেশি দেখা যায়৷ দাবি মানার বদলে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য উল্টো তাদেরকেই দায়ী করা হয়৷
জার্মানির সঙ্গে এটা এক বড় পার্থক্য৷ এক দেশ শিশুদের দাবি মেনে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোকে নতুন সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করছে, অন্য দেশ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সড়ক নিরাপদ করার বদলে শিশুদের পিটিয়ে রাজপথ আন্দোলনমুক্ত রাখতে চাচ্ছে৷ এটা কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা নয়৷
জার্মানি আর বাংলাদেশের আরেকটি ব্যবধান দেখতে পাই বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতির দিক দিয়ে৷ জার্মানিতে রাজনৈতিক দলগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছাত্র সংগঠন নেই৷ তবে, বাংলাদেশে আছে৷ দেশটির প্রায় সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন রয়েছে, যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে সক্রিয়৷ এই ছাত্র সংগঠনগুলো নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৭-২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত সরকার হটাতে কিংবা গত দশকের শুরুর দিকে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে৷
তবে, জনসম্পৃক্ত জাতীয় ইস্যুতে বর্তমানে এসব ছাত্র সংগঠনের শক্তিশালী আন্দোলন তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না৷ বরং শিশুরাই রাজপথে তাদের তুলনায় বেশি সক্রিয়৷
শেষ করার আগে হামবুর্গের বিষয়ে আরেকটি তথ্য দিয়ে রাখি৷ জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের পর শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সেসব সহিংস আন্দোলনকারীদের খুঁজে বের করা হয়েছিল, যারা হামবুর্গে জ্বালাও-পোড়াও করে জানমালের ক্ষতি করেছিল৷ সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ ঘেঁটে তাদের সনাক্তের পর বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল৷
কথা হচ্ছে, সহিংস আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচারে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে তুলে ধরা যৌক্তিক দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে৷ এই মানসিকতায় কোথাও কোথাও কি ঘাটতি দেখা যায়?