1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বড়লোকের শখের ফিশ এখন দেশি মাছের ভয়াবহ হুমকি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ এপ্রিল ২০২২

অ্যাকুরিয়াম থেকে গুলশান লেক হয়ে দেশের জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়া দক্ষিণ অ্যামেরিকার ‘সাকারমাউথ ক্যাট ফিশ’ বা ‘সাকার ফিশ' নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা৷

অ্যাকুরিয়াম থেকে গুলশান লেক হয়ে দেশের জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়া দক্ষিণ অ্যামেরিকার ‘সাকারমাউথ ক্যাট ফিশ’ বা ‘সাকার ফিশ' নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Sheikh Ferdoush Ahmed

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে এই মাছের উপস্থিতি উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷

বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, সাকার ফিশ এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের মিঠা পানির মাছের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে৷ আর হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক ডিম উৎপাদন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে৷ তাই তারা এই মাছ নির্মূলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন৷ তাদের মতে, সাকার মাছ অন্য দেশি মাছের খাবার খেয়ে ফেলে এবং অবাসস্থল দখল করে৷ বাংলাদেশের মানুষ এ মাছ না খাওয়ায় তারা দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে এবং যেকোনো পরিবেশে টিকে থাকে৷

‘হালদার জন্য সাকার মাছ নতুন হুমকি তৈরি করছে’

This browser does not support the audio element.

হালদা নদীর জেলে কামাল সওদাগর জানান, গত বছর থেকে তারা জাল ফেললে সাকার মাছ পাচ্ছেন৷ নদীর কয়েকটি এলাকায় এই মাছের উপস্থিতি খুব বেশি৷ এভাবে চলতে থাকলে মাছের প্রাকৃতিক ডিম কমতে থাকবে বলে মনে করেন তিনি৷ বিষয়টি জেলেরা মৎস্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছে বলে জানান তিনি৷

রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ জানান, ‘‘হালদা নদীতে আট ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের সাকার মাছও পাওয়া গেছে৷ এটা ১৮-২০ ইঞ্চিও হয়৷ আমরা ধারণা করি আরো বড় সাকার মাছ ওই নদীতে আছে৷’’

মৎস্যবিজ্ঞানীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরেই বাংলাদেশের জলাশয়ে সাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে৷ এই অ্যাকুরিয়াম ফিশটি গুলশান লেক থেকে ছড়িয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে৷ এখন এটা নদী ও পুকুরে ছড়িয়ে পড়েছে৷ সবচেয়ে বেশি সাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা এবং তুরাগ নদীতে৷ মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘‘বুড়িগঙ্গা এবং তুরাগে জেলেরা জাল ফেললে সাকার মাছে জাল ভরে ওঠে৷ অন্য কোনো মাছ পাওয়া যায় না৷” তারা দূষিত পানিতেও টিকে থেকে বংশবৃদ্ধি করে৷ বুড়িগঙ্গা ও তুরাগে যে দেশি মাছ পাওয়া যেত তা এখন আর পাওয়া যায় না বলে জানান তিনি৷

বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীতে ছড়িয়ে পড়েছে ‘সাকারমাউথ ক্যাটফিশ’ছবি: Sheikh Ferdoush Ahmed

সাকার মাছ নিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কাজ করছেন৷ গবেষণা দলের প্রধান ফিশারিজ বায়োলজি এবং জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, ‘‘আম্যাজোন অঞ্চলের এই মাছটির যেকোনো পরিবেশে টিকে থাকা ও বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা আছে৷ এরা অন্য মাছের আশ্রয়স্থল দখল এবং খবার খেয়ে ফেলে৷ আর নদী বা জলাশয়ের তলদেশে থাকে বলে সেখানে অন্য মাছের খাবার খেয়ে ফেলে, আবাস দখল করে৷ আমাদের দেশের মানুষ এই মাছটি যেহেতু খায় না তাই এরা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে দেশীয় মাছকে হটিয়ে দিচ্ছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এই মাছটির সারা শরীরের কাঁটা৷ সামনে ও পিঠে বড় কাঁটা ৷ ফলে অন্য মাছকে সহজেই হটিয়ে দিয়ে টিকে থাকে৷’’

এই মাছ এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নদী এমকি পুকুরেও ছড়িয়ে পড়েছে৷ এরা পানি ছাড়াও কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকে বলে জানান তিনি৷

‘মাছটি দেখতে খারাপ হলেও সুস্বাদু’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘এই মাছ মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এখনো তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ তবে কেউ খায় না বলে এই মাছ দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করছে৷ ফলে দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে৷ হালদা নদী দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতি মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র৷ এখানে কার্প জাতীয় মাছ নির্দিষ্ট সময়ে ডিম দেয়৷ আর সেই ডিম সংগ্রহ করে জেলেরা বিক্রি করে৷ এ থেকে মাছের পোনা উৎপাদন হয়৷ এমনিতেই হালদা নানা কারণে হুমকির মুখে৷ এখন এই সাকার মাছ নতুন হুমকি তৈরি করছে৷ দেশীয় মাছ টিকতে না পারলে হালদায় ডিম উৎপাদন হবে না৷’’

দেশের মিঠা পানির মাছ রক্ষায় তাই এই সাকার মাছ নির্মূলে জেলেদের কাজে লাগানোর কথা বলছেন মৎস্যবিজ্ঞানীরা৷ এই মাছ ধরার পড়ার পর মেরে ফেলতে হবে, আবার জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া যাবে না৷ এজন্য জেলেদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে৷ দরকার ব্যাপক প্রচার৷ অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, ‘‘এই মাছ দিয়ে ফিশ ফিডও বানানো সম্ভব৷ সেটার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে৷ মোট কথা হল এর প্রজনন ব্যালেন্স করতে হবে৷’’

রুপ ও গুণের হালদা নদী

03:47

This browser does not support the video element.

তবে রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ মনে করেন, ‘‘এর বাইরে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেও এর বিস্তার রোধ সম্ভব৷ এই মাছটি দেখতে খারাপ হলেও সুস্বাদু৷ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়৷ আমরা নিজেরা রান্না করে খেয়ে দেখেছি৷ তবে এটা প্রসেস করা কঠিন৷’’

ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘আমি শুরু থেকেই ব্যক্তিগতভাবে জেলেদের মাছটির ব্যাপারে সতর্ক করছি৷ এখন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে  জেলেদের বলা হচ্ছে৷ তবে আরো প্রচার দরকার৷’’

তিনি বাংলাদেশে অ্যাকুরিয়াম ফিশের ব্যাপারে নীতিমালারও দাবি করেন৷ তার কথা, ‘‘এটা অ্যাকুরিয়াম থেকে ছড়িয়েছে৷ কিন্তু বিদেশি কোনো মাছ, প্রাণী বা গাছ যাই এদেশে আনা হোক না কেন তার একটা নীতিমালা থাকা দরকার৷ কোয়ারান্টিনের বিধান থাকা দরকার৷ আগে দেখা দরকার ওই মাছ বা প্রাণী আমাদের পরিবেশের উপযোগী কী না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি বিদেশ থেকে আকাশমণি গাছ এনেছিলেন যা আমাদের পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর৷ আমি পিরানহা মাছের বিরোধিতা করে শোকজ খেয়েছিলাম৷ যদিও পরে সেই মাছ নিষিদ্ধ হয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ