ইন্দোনেশিয়ায় মাউন্ট আগুং-এ বিস্ফোরণের পর, হাজার হাজার মিটার উচ্চতায় বাতাসে ছাই ছড়িয়ে পড়ায় প্রায় এক লাখ মানুষকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার৷ জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কবার্তাও৷
বিজ্ঞাপন
মাউন্ট আগুং-এ বিপর্যস্ত বালি
ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ বালিতে মাউন্প আগুং এ অগ্নুৎপাতের ফলে হাজার হাজার মিটার উচ্চতার বাতাতে ছাই ছড়িয়ে পড়েছে৷ সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দেশটির সরকারও সেই এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ মাউন্টর আগুং নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/Antara Foto/N. Budhiana
ছাই রঙের মেঘ
সপ্তাহ জুড়ে কয়েকবার বালির উত্তর পূর্বের মাউন্ট আগুং-এর ছাইয়ের পাতলা স্তরে কাছাকাছি থাকা রিসোর্ট ও গ্রামগুলো ছেয়ে গেছে৷ গাঢ় ধূসর রঙের ধোঁয়া পাহাড়ের চূড়া বেয়ে রাজধানী, দেনপাসার থেকে সরে পাশের দ্বীপ লম্বক এর দিকে যেতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters
লাভার প্রতিচ্ছবি
রাতের অন্ধকার সরে গেলে পাহাড়ের খাদ থেকে গাঢ় কমলা রঙের একটা আভা ভেসে ওঠে, যার একটি অংশ আকাশে ছয় হাজার মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ গত সেপ্টেম্বরে মাউন্ট আগুং-এর লক্ষণ দেখে কর্তৃপক্ষ এই আগ্নেয়গিরির প্রভাব থেকে সতর্কতা হিসেবে আশেপাশে বসবাসকারী প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে জরুরিভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেয়৷ অক্টোবরের ২৯ তারিখে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সতর্কবার্তা তুলে নেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Lisnawati/AP
ছাই দিয়ে ঘেরা স্বর্গ
বালির সার্ফিং সৈকত, মন্দির আর সবুজ প্রকৃতি টানে আকৃষ্ট হয়ে প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিয়ন পর্যটক ইন্দোনেশিয়ার এই দ্বীপটি ভ্রমণ করেন৷ কিন্তু মহাগিরি প্যানোরামিক রিসোর্ট কতৃপক্ষ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে৷ ‘‘আমরা বিপদমুক্ত এলাকাতে হলেও অন্যান্য রিসোর্টে এলাকার প্রভাব এখানেও পড়েছে৷ আগ্নেয়গিরির কারণে ভ্রমণকারির সংখ্যা অনেক কমেছে’’, জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Jilin
‘এখনও নিরাপদ’
ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলছে, পর্যটকদের জন্য বালি ‘এখনও নিরাপদ’৷ এক বিবৃতিতে তারা জানায়, সপ্তাহ শেষে আগুংয়ের জরুরি অবস্থা সর্বোচ্চ অবস্থা থেকে এক ধাপ নেমে তৃতীয়তে পৌঁছেছে৷ অবস্থা এখন অনেকটা স্থিতিশীল৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Tumbelaka
ফ্লাইট সতর্কতা নেমেছে
বেসামরিক বিমান কতৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে এই কয়েকদিন ফ্লাইট স্ট্যাটাস কমলা রং এর করে রেখেছিলো৷ তবো রবিবার তা আবারও লাল রঙের করা হয়৷ এই সময়ে শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়৷ লাম্বক বিমানবন্দর বন্ধ করার কথা ভাবা হলেও কর্মকর্তারা জানান, যতক্ষণ সম্ভব বালির প্রধান বিমানবন্দরটি খোলা থাকবে৷
ছবি: REUTERS
বর্জন এলাকা
সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাতের সময় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়৷ আগ্নেয়গিরির সাড়ে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা প্রত্যেককে এলাকা ছাড়ার পরামর্শ দেয় কর্তৃপক্ষ৷ ইন্দোনেশিয়ার ১২০টির বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে মাউন্ট আগুং একটি৷ সবশেষ ১৯৬৩ সালের এক অগ্ন্যুত্পাতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Lisnawati/AP
লাভা ও ছাই
এত বড় অগ্ন্যুৎপাতের ধোঁয়ার কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের শারীরিক প্রভাব পড়তে পারে বলে মন করছেন অগ্ন্যুৎপাত বিশেষজ্ঞরা৷ অতিরিক্ত গরম ও ভূগর্ভস্থে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে এর প্রভাব পড়বে৷ তবে রবিবার কর্মকর্তারা বলেছেন যে ছাই ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটি ম্যাগমেটিক অগ্ন্যুৎপাতের দিকে অগ্রসর হতে পারে৷
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ইন্দোনেশিয়ান সরকারের আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ গেদে সু্য়ান্তিকা বলেন, ‘‘মাউন্ট আগং এখনও ছাই ছড়াচ্ছে৷ বড় ধরনের বিস্ফোরণের জন্য আমাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে’’৷ সেনা ও পুলিশ সদস্যরা আশপাশের গ্রাম ও রিসোর্টের মানুষদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করছে৷
ছবি: Reuters/Antara Foto/N. Budhiana
8 ছবি1 | 8
সোমবার বালিতে সর্বোচ্চ এ সতর্কতা জারি করেছে ইন্দোনেশিয়ার সরকার৷ আগ্নেয়গিরির ১০ কিলোমিটার এলাকার আশেপাশের প্রায় ১ লাখ মানুষকে এলাকা ছাড়তে বলা হযছে৷ দেশটি ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলছে, সম্ভাব্য দুর্যোগ ও ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷
বিমান চলাচল বিপর্যস্ত
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছাই ভরা মেঘের কারণে বালির এনগুরাহ রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২৪ ঘণ্টার জন্য সব ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে৷ এর আগে, রোববার সন্ধ্যায় পূর্বের আরেক দ্বীপ লম্বোকের ছোট আরেকটি বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷
ফাঁদে পড়েছেন পর্যটকরা
সপ্তাহজুড়ে এই ফ্লাইট বাতিলের কারণে হাজার হাজার পর্যটক বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে৷ রবিবার এয়ার এশিয়া তাদের ৩০টি ফ্লাইট বাতিল করে৷ এছাড়া ভার্জিন, কেএলএম এবং এয়ার এশিয়া মালয়েশিয়াও শনিবার বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করেছিল৷
বড় ধরনের আগ্নেয়গিরির আশংকায় সেপ্টেম্বরে দেশটির সরকার প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে সেই এলাকা ছাড়ার কথা বলেছিল৷ এর আগে ১৯৬৩ সালের বড় এক অগ্ন্যুত্পাতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল৷ ইন্দোনেশিয়ার ওপর দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অফ ফায়ার' অতিক্রম করেছে এবং এখানে ১২০টিরও বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে৷