রোহিঙ্গাদের উপর বড় পরিসরের নির্যাতনের বিষয়ে তদন্ত করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী৷ সরকারের একটি প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে এ তদন্ত শুরু করেছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ নির্যাতনের সেই ঘটনাকে রোহিঙ্গাদের উপর ‘গণহত্যা’ বলে জাতিসংঘ মন্তব্য করলেও, অভিযোগ অস্বীকার করে দেশটির সেনবাহিনী৷ রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা ঠেকাতে এমন অভিযান চালিয়েছে বলে দাবি করে তারা৷
তবে মঙ্গলবার দেশটির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানায়, ‘‘রাখাইনে বড় আকারের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে৷’’
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
সরকারের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘২০১৬-১৭ সালের এ সময়টিতে নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে৷’’
তার আগে মিয়ানমার সরকারের একটি তদন্ত কমিশন এক প্রতিবেদনে দেশটির কিছু সেনাসদস্যকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে৷
সেনাবিহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘‘মংগদু এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি এ তদন্তে যুক্ত করা হয়েছে৷’’
তবে তদন্তের বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি তারা৷
গত সপ্তাহে মিয়ানমারের দুই সেনাসদস্যকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে হাজির করা হয়৷ গত জুলাই মাসে এ দুই সেনা এক ভিডিওতে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় গ্রামবাসীকে হত্যার সাথে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন৷ ঐ দুই সেনাসদস্যকে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের সাক্ষী হিসেবে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে হাজির করা হতে পারে৷