এবার বাজেটের আকার আরো বড় হবে৷ অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার কিছু কম বা বেশি৷ এটা চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি৷ আসন্ন নির্বাচনের কারণেই নাকি এমন বাজেট৷
বিজ্ঞাপন
নতুন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-কে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হতে পারে৷ এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭১ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে৷ নতুন বাজেটে করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখে পৌঁছানোর বিষয়টি অবহিত করবেন অর্থমন্ত্রী৷
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ৷ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ৷
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির গড়হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশে রাখার টার্গেট নিয়েছে সরকার৷ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ৷
১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে পদ্মা সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রকল্পে বরাদ্দ বাজেটে থাকছে৷ যার টার্গেট হলো আগামী সংসদ নির্বাচন৷ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে প্রস্তাবিত এডিপি ১৭ শতাংশ বেশি৷
‘এই বাজেটে নির্বাচন বিবেচনায় রেখে যেন অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্প না নেয়া হয়’
সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০ মেগা প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ আর পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের জন্য রাখা হয়েছে যথাক্রমে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি ও ৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা৷ নতুন এডিপির ২৬ শতাংশ বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে পরিবহন খাতে৷ রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রকল্পেই সাংসদদের আগ্রহ বেশি বিধায় আগামী এডিপিতে ১ হাজার ৪৫২টি প্রকল্প রয়েছে৷ এ ছাড়া এডিপিতে বরাদ্দহীন ও অননুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৩৮টি৷
আগামী বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ এবং বাবদ সরকারের ব্যয় হবে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি৷ নতুন বাজেটে বেসরকারি খাতে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে অর্থমন্ত্রী একটি রূপরেখা দেবেন বলেও জানা গেছে৷ সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, নতুন বাজেটে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে৷ রাজস্ব বাজেট থেকে এই অর্থ জোগান দেওয়া হবে৷
নতুনবাজেটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা৷ এছাড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ১ লাখ ২০০ কোটি টাকা আয়কর এবং শুল্ক খাতে ৮৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেটে সিগারেট ও মোবাইল কোম্পানির জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স ৪৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত থাকবে৷কর্পোরেট ট্যাক্সের সর্বোচ্চ হার হবে ৩৭ দশমিক ৫শতাংশ৷ করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে তা হবে ৩ লাখ টাকা৷ বর্তমানে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা রয়েছে আড়াই লাখ টাকা৷
এবারের বাজেটে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট থেকে আয়কে করের আওতায় আনার বিষয়ে ব্যাখ্যা থাকবে৷ এসব মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের ওপর সরকারকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয় না৷
‘ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় বাজেটে থাকতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক বিশৃঙ্খলা রোধে এখন দরকার কাঠামোগত সংস্কার’
নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে প্রায় ১১ লাখ গরিব মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হচ্ছে৷ ফলে কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৬ লাখ৷ এখন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৮টি খাতে মোট ৭৫ লাখ মানুষকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে৷
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ সম্মাননা ভাতা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে সরকার৷ বাজেটে এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা থাকবে৷ জানা গেছে, ‘বিজয় দিবস ভাতা' নামে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বছরে এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন৷
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলকে বলেন,‘‘যেহেতু আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ দিকে আছি, তাই দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল থাকতে হবে বাজেটে৷'' তিনি বলেন, ‘‘এই বাজেটে নির্বাচন বিবেচনায় রেখে যেন অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্প না নেয়া হয়৷ আর বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের বুরোক্রেসির সক্ষমতা অনুযায়ী যেন পূর্ব পরিকল্পনা থাকে৷ সুশাসনের সঙ্গে যেন বাস্তবায়ন হয়৷ তাছাড়া বাজেটে এবারো আমি চাই, বড় প্রকল্পের গুরুত্ব থাকুক৷ এবং বিসনেস এনভায়রনমেন্ট উন্নয়নের জন্য যেন প্রনোদনা থাকে৷''
আসন্ন বাজেটে বিভিন্ন খাতের দাবিনামা
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আগামী ৭ জুন সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন৷ প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন শিল্প খাত তাদের দাবি পেশ করেছে৷
ছবি: bdnews24.com
তৈরি পোশাক খাত
পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আগামী বাজেটে অন্তত তিন বছরের জন্য উৎসে কর বাতিলের দাবি জানিয়েছে৷ সংস্থার প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে বলেন, উৎসে কর থেকে সরকার দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা পায়৷ ‘‘চার লাখ কোটি টাকার বাজেটে এটি খুব বড় অর্থ নয়৷ আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ আমাদের কিছু মেশিনারিজ আপডেট করতে হবে,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: bdnews24
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প
এই খাতে আরও উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনবিআর-এর কাছে ৪৩টি প্রস্তাব দিয়েছে ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন’ বা এসএমই ফাউন্ডেশন৷ এর মধ্যে আছে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির প্রধান উপকরণ পলিকার্বোনেট, প্লাস্টিক শিল্পের মৌলিক কাঁচামাল প্রাইমারি পলিমার, মেলামাইনের ছাপচিত্রে ব্যবহৃত ট্রান্সফার পেপার, পেপার ও পেপার বোর্ড ইত্যাদির উপর শুল্ক-কর হ্রাসের প্রস্তাব৷
ছবি: Mustafiz Mamun
গার্মেন্টস এক্সেসরিজ শিল্প
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল কাদের খান তৈরি পোশাকশিল্পের সরঞ্জাম ও প্যাকেজিং খাতের প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর ৩৫ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ এবং উৎসে কর ০.৭০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি
এনবিআরকে দেয়া প্রস্তাবনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আসন্ন বাজেটে সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা করার অনুরোধ করেছে৷ এছাড়া সর্বোচ্চ কর হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছ এমসিসিআই৷ এর ফলে ব্যক্তি করদাতারা তাদের সত্যিকার আয়কর প্রকাশে উৎসাহিত হবে এবং কর ফাঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের ঐ সংগঠন৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প
বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস এসোসিয়েশনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম মুন্সী কর্পোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং টার্নওভারের ওপর থাকা ০.৬০ শতাংশ কর অব্যাহতির দাবি জানিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ফ্ল্যাট নিবন্ধন কর
গৃহনির্মাণ শিল্পের সংগঠন রিহ্যাব-এর সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন ফ্ল্যাট নিবন্ধনের কর কমানোর দাবি জানিয়েছেন৷ এনবিআর এর সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, কাগজে-কলমে নিবন্ধনে ১৪ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়, যদিও কার্যকর হার হচ্ছে ১৬ শতাংশ৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
মোটরসাইকেল শিল্প
বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড মেনুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন মোটরসাইকেল উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে৷ তারা বলছে, বিগত বছরগুলোতে এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনেকে মোটরসাইকেল উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে৷ তবে এনবিআর বলছে, মোটরসাইকেল সংযোজনকারীদের ধীরে ধীরে উৎপাদনে যেতে কয়েক বাজেটে সহায়তা দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু অনেকে উৎপাদনে না গিয়ে বারবার ঐ সুবিধা বাড়ানোর আবেদন করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Abdullah
7 ছবি1 | 7
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়নশীল দেশ হতে চাই,তাই বাজেট আমাদের বড় হতে হবে৷ কিন্তু বাজেটে বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে৷ আর এজন্য সুশাসন এবং বুরোক্রেসির সক্ষমতা বাড়ানো দরকার৷ আর এনবিআর-এর সক্ষমতার কথা বলতে বলতে এটা পুরনো হয়ে গেছে৷ তার পরেও বলতে হয়, সেই সক্ষমতা আমাদের বাড়াতে হবে৷ তাই ঝুঁকি থাকলেও বাজেট বড়ই করতে হবে৷ কারণ, বড় বাজেট ছাড়া বড় উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়া যায় না৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের যে সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা এবং মধ্য মেয়াদে যে চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে বলা যায়, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে, বিনিময় হার বেড়ে যাচ্ছে৷ এগুলো সামষ্টিক অর্থনীতির বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ৷ অন্যদিকে, মধ্য মেয়াদে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, কর্মসংস্থান কমা, বেকারত্ব বাড়া৷ দারিদ্র্য কমার হার কমে যাচ্ছে৷ বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় বাজেটে থাকতে হবে৷ অন্যদিকে আর্থিকখাতে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ এই প্রাতিষ্ঠানিক বিশৃঙ্খলা রোধে এখন দরকার কাঠামোগত সংস্কার৷ অন্যদিকে মধ্যমেয়াদি কর্মসূচি, যার মাধ্যমে কর্মস্থান বাড়বে, দারিদ্র্য কমার হার বাড়বে, মূল্যস্ফীতি কমবে৷ আর এটা হলে বৈষম্য কমবে৷ আমরা বৈষম্যহীনতার দিকে এগিয়ে যাবো৷''
দশম সংসদের চার বছর পূর্তি
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সমালোচিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠন হয় দশম জাতীয় সংসদ৷ ২৯ জানুয়ারি এর চার বছর পূর্ণ হলো৷ ছবিঘরে দেখুন দশম সংসদে উল্লেখযোগ্য কী কী হলো৷
ছবি: imago/Xinhua
নির্বাচনের বছরে দশম সংসদ
২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে দশম সংসদ৷ সে হিসেবে এর মেয়াদ চার বছর পূর্ণ হলো৷ অর্থাৎ পাঁচ বছর মেয়াদি সংসদের জন্য এটি নির্বাচনি বছর৷ আগামী বছর ২৯ জানুয়ারির আগের তিন মাসের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে ‘আলোচিত’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ৷ বিএনপিসহ অনেক দল ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সাংসদ নির্বাচিত হন৷ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন এইচ এম এরশাদও৷ পরে তাঁর দল জাতীয় পার্টি (জাপা) সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে৷
ছবি: bdnews24.com
বন্ধুত্বপূর্ণ সংসদ
ঠিক যেন একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সংসদ, দশম জাতীয় সংসদ৷ সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বিতণ্ডা নেই তেমন৷ সরকারের অধিকাংশ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে সমর্থন দিচ্ছে বিরোধী দল৷ থেকে থেকে বিরোধী দলও সরকারি দলের প্রশংসা কুড়াচ্ছে৷
ছবি: imago/Xinhua
কার্যকর সংসদ
তবে প্রশ্ন থাকছে সংসদের কার্যকারিতা নিয়ে৷ অন্যান্য সংসদের তুলনায় এ সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বেশি৷ তারপরও এ সংসদ আদতে কতটা কার্যকর তা নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘‘গুণগত বিশ্লেষণে যাচ্ছি না৷ তবে দশম সংসদে সরকারি দলের সঙ্গে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ সংসদকে কার্যকর করেছে৷’’
ছবি: bdnews24.com
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
মোট ১৯টি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৪২ দিন৷ চার বছরে এই সংসদে ১৩০টি আইন পাস হয়েছে৷ ১৪টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷
ছবি: DW
বিরোধী নেতার ভাষণ
গত বছর সংসদের অধিবেশন বসেছে পাঁচটি৷ মোট কার্যদিবস ছিল ৭৬টি৷ গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে, অধিবেশনগুলোতে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের দেওয়া সমাপনী ভাষণগুলোতে কোনো নীতিনির্ধারণী বিষয়ে তাঁর শক্ত সমালোচনা, বিতর্ক বা অবস্থান ছিল না৷
ছবি: AP
বাজেট নিয়ে উত্তাপ
চলতি সংসদে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে বাজেট নিয়ে৷ বিরোধী দলও এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছে৷ সরকারি দলের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ বিশেষ করে সমাপ্ত বছরের বাজেট অধিবেশনে ব্যাংকের আমানতকারীদের ওপরে আবগারি শুল্ক ধার্য করে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি৷ এমনকি ব্যাংক খাতে লুটপাটের কারণে বিরোধী দলের সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করেছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
বিএনপি নিয়ে সমালোচনা
বাজেটে বিরোধী দল নিয়ে যতটা না আলোচনা হয়েছে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি সমালোচনা হয়েছে বিএনপির কার্যকলাপ নিয়ে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকবার সুশীল সমাজের একটি অংশেরও কড়া সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. K. Godhuly
সংসদীয় কূটনীতি
সংসদীয় কূটনীতির ক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়েছে দশম জাতীয় সংসদ৷ বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে উন্নত কয়েকটি দেশের অতি সতর্কতার মধ্য দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলোর সর্ববৃহৎ দু’টি সংস্থার সম্মেলনের আয়োজক হওয়া এবং তা সফল ও নিরাপদে আয়োজন করে সাফল্য দেখিয়েছে সংসদ৷