1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বড় বাজেটের টার্গেট নির্বাচন!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ জুন ২০১৮

এবার বাজেটের আকার আরো বড় হবে৷ অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার কিছু কম বা বেশি৷ এটা চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি৷ আসন্ন নির্বাচনের কারণেই নাকি এমন বাজেট৷

Bangladesch Parlament
ছবি: bdnews24.com

নতুন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-কে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া  হতে পারে৷ এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭১ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে৷ নতুন বাজেটে করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখে পৌঁছানোর বিষয়টি অবহিত করবেন অর্থমন্ত্রী৷

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ৷ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ৷

প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির গড়হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশে রাখার টার্গেট নিয়েছে সরকার৷ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে  ৫ দশমিক ৮ শতাংশ৷

১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি  (এডিপি)-তে পদ্মা সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রকল্পে বরাদ্দ বাজেটে থাকছে৷ যার টার্গেট হলো আগামী সংসদ নির্বাচন৷ চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে প্রস্তাবিত এডিপি ১৭ শতাংশ বেশি৷

‘এই বাজেটে নির্বাচন বিবেচনায় রেখে যেন অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্প না নেয়া হয়’

This browser does not support the audio element.

সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০ মেগা প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ আর পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের জন্য রাখা হয়েছে যথাক্রমে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি ও ৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা৷ নতুন এডিপির ২৬ শতাংশ বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে পরিবহন খাতে৷ রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রকল্পেই সাংসদদের আগ্রহ বেশি বিধায় আগামী এডিপিতে ১ হাজার ৪৫২টি প্রকল্প রয়েছে৷ এ ছাড়া এডিপিতে বরাদ্দহীন ও অননুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৩৮টি৷

আগামী বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ এবং বাবদ সরকারের ব্যয় হবে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি৷ নতুন বাজেটে বেসরকারি খাতে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে অর্থমন্ত্রী একটি রূপরেখা দেবেন বলেও জানা গেছে৷ সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, নতুন বাজেটে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে৷ রাজস্ব বাজেট থেকে এই অর্থ জোগান দেওয়া হবে৷

নতুনবাজেটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা৷ এছাড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ১ লাখ ২০০ কোটি টাকা আয়কর এবং শুল্ক খাতে ৮৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷

অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাজেটে সিগারেট ও মোবাইল কোম্পানির জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স ৪৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত থাকবে৷কর্পোরেট ট্যাক্সের সর্বোচ্চ হার হবে ৩৭ দশমিক ৫শতাংশ৷ করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে তা হবে ৩ লাখ টাকা৷ বর্তমানে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা রয়েছে আড়াই লাখ টাকা৷

এবারের বাজেটে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট থেকে আয়কে করের আওতায় আনার বিষয়ে ব্যাখ্যা থাকবে৷ এসব মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের ওপর সরকারকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয় না৷

‘ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় বাজেটে থাকতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক বিশৃঙ্খলা রোধে এখন দরকার কাঠামোগত সংস্কার’

This browser does not support the audio element.

নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে প্রায় ১১ লাখ গরিব মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হচ্ছে৷ ফলে কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৬ লাখ৷ এখন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৮টি খাতে মোট ৭৫ লাখ মানুষকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে৷

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ সম্মাননা ভাতা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে সরকার৷ বাজেটে এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা থাকবে৷ জানা গেছে, ‘বিজয় দিবস ভাতা' নামে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বছরে এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন৷

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলকে বলেন,‘‘যেহেতু আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ দিকে আছি, তাই দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল থাকতে হবে বাজেটে৷'' তিনি বলেন, ‘‘এই বাজেটে নির্বাচন বিবেচনায় রেখে যেন অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্প না নেয়া হয়৷ আর বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের বুরোক্রেসির সক্ষমতা অনুযায়ী যেন পূর্ব পরিকল্পনা থাকে৷ সুশাসনের সঙ্গে যেন বাস্তবায়ন হয়৷ তাছাড়া বাজেটে এবারো আমি চাই, বড় প্রকল্পের গুরুত্ব থাকুক৷ এবং বিসনেস এনভায়রনমেন্ট উন্নয়নের জন্য যেন প্রনোদনা থাকে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়নশীল দেশ হতে চাই,তাই বাজেট আমাদের বড় হতে হবে৷ কিন্তু বাজেটে বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে৷ আর এজন্য সুশাসন এবং বুরোক্রেসির সক্ষমতা বাড়ানো দরকার৷ আর এনবিআর-এর সক্ষমতার কথা বলতে বলতে এটা পুরনো হয়ে গেছে৷ তার পরেও বলতে হয়, সেই সক্ষমতা আমাদের বাড়াতে হবে৷ তাই ঝুঁকি থাকলেও বাজেট বড়ই করতে হবে৷ কারণ, বড় বাজেট ছাড়া বড় উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়া যায় না৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের যে সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা এবং মধ্য মেয়াদে যে চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে  বলা যায়, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে, বিনিময় হার বেড়ে যাচ্ছে৷ এগুলো সামষ্টিক অর্থনীতির বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ৷ অন্যদিকে, মধ্য মেয়াদে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, কর্মসংস্থান কমা, বেকারত্ব বাড়া৷ দারিদ্র্য কমার হার কমে যাচ্ছে৷ বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় বাজেটে থাকতে হবে৷ অন্যদিকে আর্থিকখাতে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ এই প্রাতিষ্ঠানিক বিশৃঙ্খলা রোধে এখন দরকার কাঠামোগত সংস্কার৷ অন্যদিকে মধ্যমেয়াদি কর্মসূচি, যার মাধ্যমে কর্মস্থান বাড়বে, দারিদ্র্য কমার হার বাড়বে, মূল্যস্ফীতি কমবে৷ আর এটা হলে বৈষম্য কমবে৷ আমরা বৈষম্যহীনতার দিকে এগিয়ে যাবো৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ