ডয়চে ভেলের মুখোমুখি আনু মুহাম্মদ
১০ নভেম্বর ২০১৭আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ২৩ উপলক্ষ্যে জার্মানির বন শহরে এসেছিলেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ৷ এ সময় ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক লাইভ সাক্ষাৎকারে তিনি সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে তাদের চলমান আন্দোলন সম্পর্কে নানা কথা বলেন৷
রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে তা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির মাত্রা আরো বাড়াবে বলে মনে করেন করেন মুহাম্মদ৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য যে অস্ত্রটা আছে, যে ভরসাটা আছে, তা হচ্ছে সুন্দরবন৷ এই সুন্দরবনের ক্ষতি করার বদলে সুন্দরবন যাতে আরো শক্তিশালী হয়, সুন্দরবন যাতে আরো বিস্তৃত হয়, সুন্দরবনের পুর্নোৎপাদন ক্ষমতা যাতে বাড়ে, সুন্দরবন যে প্রাকৃতিক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে সেটা যাতে বাড়ে সেটা আরো করা দরকার৷''
সুন্দরবনের কাছে কয়লাখনি নির্মাণে ভারতের স্বার্থরক্ষা হলেও বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন এই অ্যাক্টিভিস্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘রামপাল প্রকল্পতো ভারতের প্রকল্প৷ তার সঙ্গে অন্যান্য দেশের বিভিন্ন সাবকন্ট্রাক্টর জড়িত আছে৷ সেখানে ভারতের কোম্পানি এনটিপিসি প্রধান ভূমিকা পালন করছে৷ ভারতের কনস্ট্রাকশন কোম্পান কনস্ট্রাকশন করবে, ভারতের ব্যাংক সেখানে ঋণ দেবে৷ ভারতের কয়লা আসবে৷ সবকিছু মিলিয়ে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি এর দ্বারা লাভবান হবে৷ আর বাংলাদেশের জন্য লোকসান ছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে সুন্দরবন হারানো ছাড়া আর প্রাপ্তির কিছু নেই এটা থেকে৷''
প্রসঙ্গত, অতীতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে আন্দোলনে ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়া গেলেও রামপালে সেরকম সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন কেউ কেউ৷ এই প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘‘সুন্দরবনে ফুলবাড়ির মতো মানুষ নেই, সুন্দরবনে বাঘ আছে, হরিন আছে, মৌমাছি আছে৷ কিন্তু সুন্দরবনে তো মানুষ অত নেই৷
তিনি বলেন, ‘‘(অল্পকিছু) মানুষ যাঁরা ছিল তাঁদের সরকার পুলিশ ব্যবহার করে, গুণ্ডাবাহিনী ব্যবহার করে এই প্রকল্প শুরুর আগেই সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে৷ এবং তাঁদের মধ্যে ছিল গরিব কৃষক, তাঁদের দুর্বলতা ছিল দু'টো৷ একটা হচ্ছে তাঁরা গরিব, আরেকটা হচ্ছে তাঁরা নিম্নবর্ণের হিন্দু মানুষ৷ সুতরাং এই দুই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁদেরকে অনেক আগেই এলাকা ছাড়া করা হয়েছে৷''
ফুলবাড়ী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সমর্থন জানালেও তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি দলটির সঙ্গে যৌথভাবে কোন আন্দোলন করেনি বলে জানান আনু মুহাম্মদ৷ একইভাবে তিনি রামপালে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে চান না, কেননা ক্ষমতায় থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব নীতি গ্রহণ করে সেসব নীতির সঙ্গে তাদের আন্দোলন মানানসই নয় বলে৷ তবে বিএনপি চাইলে নিজেদের মতো রামপাল বিরোধী আন্দোলন করতে বলে মত দিয়েছেন বর্ষীয়ান এই অধ্যাপক৷
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির সহায়তায় পটুয়াখালীর পায়রায় এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ৷ এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য চেষ্টা না করে ভারত থেকে অনেক বেশি দামে এলএনজি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং সেই এলএনজিভিত্তিক প্রকল্প করা হচ্ছে৷'' এতে করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উপর ঋণের চাপ অনেকে বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷
আনু মুহাম্মদের সঙ্গে ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকার দেখতে ক্লিক করুন এখানে৷
বন্ধু, সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷