1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বয়কট দিলে কি ফ্রান্স দমবে?

২৭ অক্টোবর ২০২০

ফ্রান্সের পণ্যের বড় বাজার ইউরোপ, অ্যামেরিকা কিংবা চীন৷ তাই পণ্যের রপ্তানি নিয়ে তারা খুব বেশি চিন্তিত বলে মনে হয় না৷ তাই এখানে শঙ্কা ভিন্ন৷ শঙ্কা সামাজিক বিভাজনকে পেলে পুষে আরো বড় করার এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক খেলার৷

ফিলিস্তিনে বিক্ষোভছবি: Mohammed Salem/Reuters

অনুমিতই ছিল৷ অবশেষে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানও৷ এর আগে আরব বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়৷

কুয়েত, জর্ডান ও কাতারের অনেক সুপারমার্কেট থেকে ফ্রেঞ্চ পণ্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে এরই মধ্যে৷ লিবিয়া, সিরিয়া ও গাজায় প্রতিবাদ দেখা গেছে৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও টুইট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ বাংলাদেশেও প্রতিবাদ হয়েছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, অন্য দেশগুলোও প্রতিবাদ করবে৷ এসবই হয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর কয়েকটি বক্তব্যের পর৷

এদিকে, মাক্রোঁর মানসিক পরিচর্যা দরকার, এরদোয়ানের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছে জার্মানি৷ ইটালি, স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারাও মাক্রোঁর পাশে রয়েছেন৷ ফলে স্পষ্টতই বিভাজন দেখা যাচ্ছে৷
এর আগে নজিরবিহীন সমাবেশ দেখা গেল শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে৷ ফ্রান্সের মানুষ ‘আমি স্যামুয়েল প্যাটি' লিখে রাস্তায় নামলেন৷ তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে তাদের জোরালো সমর্থন দেখালেন৷
তাহলে কী দাঁড়ালো? আমরা স্পষ্টতই একটি বিভাজনের রেখা দেখছি৷ এই রেখা অন্তর্নিহিত ছিল৷ এখন প্যাটি হত্যাকে কেন্দ্র করে বের হয়ে এসেছে৷ প্রশ্ন হল, সেই বিভাজনের ভিত্তি কী? ধর্ম? অবশ্যই নয়, একে সাংস্কৃতিক বিভাজন বলা ভাল৷

দীর্ঘদিন যাবৎ ফ্রান্সসহ অনেক ইউরোপীয় দেশ তাদের দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা করে এসেছে৷ সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে ফ্রান্স তার মূলনীতি থেকে সরে আসবে বলে মনে হচ্ছে না৷ এদিকে, আল্লাহ ও নবীকে নিয়ে মুসলিমরা বরারবই সংবেদনশীল৷ তাই এ দু'টি বিষয় উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে তারা সবসময়ই প্রতিবাদ জানিয়েছেন, এবারও জানিয়েছেন৷ এই দুই সমাজের যে সাংস্কৃতিক ভেদ, তা স্পষ্ট ও জোরালো৷
বিভাজনের যে দ্বিতীয় রেখাটি, তা স্পষ্টতই ভূ-রাজনৈতিক, আধিপত্য বিস্তারের৷ তুরস্কের এরদোয়ান ও ফ্রান্সের মাক্রোঁ দু'জনই মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কিয়দংশের আধিপত্য নিয়ে দ্বিমূখী অবস্থানে৷ এরদোয়ান আধুনিক মুসলিম বিশ্বের নেতা হবার বাসনা রাখেন সৌদি আরব ও মিশরের প্রভাবকে হটিয়ে৷ আর মাক্রোঁ ইউরোপের অন্যতম নেতা৷ সিরিয়া ও লিবিয়া নিয়ে বিতর্ক কিংবা আজারবাইজান-আর্মেনিয়া ইস্যু এসব নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান দুই দেশের৷
তারওপর সামনে (২০২২ সালের এপ্রিল) ফ্রান্সের নির্বাচন৷ কিছুদিন আগেই হয়ে গেল ‘ইয়েলো ভেস্ট' আন্দোলন৷ অনেক বিশ্লেষকদের মত, দেশের অর্থনীতি নিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে থাকা মাক্রোঁ এই ইস্যুতে একটা পাকা জায়গা করে রাখতে চাইছেন৷ সেক্ষেত্রে সেন্ট্রাল ইউরোপের দেশটির ৮-১০ ভাগ মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে খুব ভাবছেন বলে মনে হচ্ছে না৷

প্রশ্ন হল, যদি ফ্রান্স ও তুরস্কের মধ্যকার বিভাজন এখানে অন্যতম ইস্যু হয়, তাহলে আরবের অন্যান্য দেশগুলো কেন সরব? এর কারণ মাক্রোঁর বেশ কিছু বক্তব্য৷ এখানে বলে রাখা উচিত, প্যাটির নির্মম হত্যাকে এসব রাষ্ট্র সমর্থন করে না। অসংখ্য মুসলিম এর বিরোধিতা করেছেন৷ কিন্তু মাক্রোঁ যখন একটি আইনের কথা বলেন, যা দ্বারা ইসলামিস্ট ‘সেপারিটিজম’ বা বিচ্ছিন্নতাবাদকে রুখতে ব্যবহৃত হবে৷ তখন বিরোধিতা আসে যে তিনি কেন শুধু বিচ্ছিন্নতাবাদ না বলে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতাবাদের কথা বলছেন৷ এতে করে ফ্রান্সের আরেক মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেন তিনি৷ তারওপর মাক্রোঁ বলেন, ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা সারাবিশ্বে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ ‘আমরা এমন রাজনৈতিক ইসলামে বিশ্বাস করি না, যা স্থিতিশীলতা ও শান্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷’

যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলে

এখানে লক্ষ্যনীয়, ইসলামিস্ট সেপারেটিসিজম বলতে মাক্রোঁ জোর দিয়ে এমন একটি ‘কাউন্টার সোসাইটি' বা সমান্তরাল সমাজের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানকার শিক্ষা, নিয়ম, আচার, খেলাধুলা কোন কিছুই তিনি যে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ এই বিশ্বাস আসলে যে শুধু মাক্রোঁর তা কিন্তু নয়৷ এই বিশ্বাস সব ইউরোপীয় সমাজের৷ এই ধারণা অমূলকও নয়৷ কিন্তু একজন রাষ্ট্রনায়কের মুখ থেকে যখন এমন কথা বের হয়, তখন স্বভাবতই তা জনসমাজকে আতঙ্কিত করে৷ এতে করে ‘ইসলামোফোবিয়া' যেমন তৈরি হয়, তেমনি মুসলিম সমাজেও আশঙ্কা দেখা দেয়৷ এতে লাভ হয় এরদোয়ানের মত যারা এসবের রাজনৈতিক ফায়দা নেবার অপেক্ষায় থাকেন৷

তবে ফ্রান্সের প্রতিনিধি হিসেবে নৈতিকভাবে মাক্রোঁ মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে যে জায়গায় এক পায়ে দাঁড়ানো, সেখান থেকে সরে আসার সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না৷ বরং এ জায়গায় তাকে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলো সমর্থন যোগাবে৷ তাই পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে মাক্রোঁর দুই পা মাটিতে নামানোর যে চেষ্টা আরব ও অন্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোর, সেটিও কতটা সফল হবে তা বলা মুশকীল৷ কারণ, ফ্রান্সের রপ্তানির বড় বাজার আরব দেশগুলো নয়৷ সব মিলিয়ে ৩ শতাংশেরও কম৷ তুরস্কে আরো ১.২৭%৷ তাদের বড় বাজার ইউরোপ, প্রায় ৬০%৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনও তাদের বড় বাজার৷ বাংলাদেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করে ফ্রান্স৷ আর রপ্তানি করে ৩০.৭ কোটি ডলারের পণ্য৷ এরদোয়ানের তুরস্কের কাছ থেকে রপ্তানির প্রায় সমপরিমাণ অর্থের পণ্য আমদানি করে মাক্রোঁর ফ্রান্স৷ এমনকি রপ্তানি সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদেরও অনেকে রাষ্ট্রপ্রধানের পাশে দাঁড়াবেন বলে ঘোষণাও দিয়েছেন৷ সবমিলিয়ে পণ্য বয়কট করে ফ্রান্সকে দমানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না৷ আর হলই বা, ধরুন মাক্রোঁ বয়কটের ভয়ে চুপসে গেলেন, তাতে কি সামাজিক বিভেদ কেটে যাবে? সেজন্য দুইপক্ষকেই একে অন্যের বিশ্বাসের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ