টঙ্গীর শিল্প এলাকায় ট্যাম্পাকো লিমিটেড নামের একটি প্যাকেজিং কারখানায় বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ ওদিকে বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় বয়লার ব্যবহার ও তার তদারকি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. M. Ahad
বিজ্ঞাপন
শুরুতে ট্যাম্পাকোর বয়লার বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস দাবি করলেও, পরে বয়লার ইন্সপেক্টর প্রকৌশলী শরাফাত আলী দাবি করেন যে, বয়লার দু'টি অক্ষত আছে৷ তাই বিস্ফোরণ এবং আগুনের কারণ নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে এ ঘটনায় বাংলাদেশের শিল্প-কারখানায় বয়লারের ব্যবহার নিয়ে ভয়াবহ সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷
বাংলাদেশের শিল্পকারখানাগুলোতে প্রধানত শক্তি উৎপাদনের জন্য বয়লার ব্যবহার করা হয়৷ মূত এই শক্তি উৎপাদন করা হয় পানিকে বাষ্পে পরিণত করে৷
শিল্পমন্ত্রণালয়ের অধীনে কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে এই বয়লারের অনুমতি দেয়া হয় এবং বাংলাদেশে বয়লারের আলাদা পরিদর্শন অধিদপ্তরও রয়েছে৷ কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে সাড়ে পাঁচ হাজার নিবন্ধিত বয়লারের জন্য পরিদর্শক আছেন মাত্র ছ'জন৷ জানা গেছে, এই বয়লারগুলো প্রায় তিন হাজার কারখানায় ব্যবহার করা হয়৷
ট্যাম্পাকোয় আগুন নেভাচ্ছেন দমকল কর্মীরাছবি: picture-alliance/AP Photo/A. M. Ahad
বয়লার ইন্সপেক্টর শরাফত আলী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা বছরে একবার করে বয়লারগুলো পরিদর্শন করি৷ পরিদর্শনের সময় বয়লারের সার্বিক অবস্থার সঙ্গে বয়লার অপারেটরসহ বয়লারের কার্যকারিতাও পরীক্ষা করি আমরা৷''
উল্লেখ্য, আসলেই যদি বয়লারগুলো বছরে একবার পরীক্ষা করা হয় তাহলে একজন ইন্সপেক্টরকে বছরের ৩৬৫ দিনে মোট ৯১৬টি বয়লার পরীক্ষা করতে হবে৷ মাসে পরিদর্শন করতে হবে ৫৫৮টি বয়লার৷ এখানে বলা প্রয়োজন, বয়লার ব্যবহারকারী শিল্প-কারখানাগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছড়িয়ে আছে৷ তাই বাস্তবে এই পরীক্ষা সম্ভব নয়৷
এই পরিস্থিতির কারণে প্রধান বয়লার পরিদর্শকের অফিস থেকে আগেই ২০০ বয়লার ইন্সপেক্টরসহ মোট সাড়ে তিনশ' জনবলের প্রস্তাব দেয়া হয়৷ অবশ্য এখনো এর জন্য অনুমোদন দেয়া হয়নি৷
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের তৃতীয় বার্ষিকীতে (২৪.৪.১৬)ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
ইন্সপেক্টর শরাফাত আলী বলেন, ‘‘ঠিকমত বয়লারগুলো পরিদর্শন করতে হলে ২০০ জন ইন্সপেক্টর প্রয়োজন, কারণ এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার৷'' তবে সামনেই মানে নতুন চারজন বয়লার ইন্সপেক্টর যোগ দেবেন বলে খবর৷
এ ব্যাপারে প্রধান কারখানা পরিদর্শক আব্দুল মান্নান ছুটিতে থাকায় তাঁর কোনো বক্তব্য জানা যায়নি৷
একধিক সূত্র জানায় যে, এখনকার জনবল দিয়ে হিসেবের খাতায় মাসে ৭০টি বয়লার পরিদর্শন করা হয়৷ কিন্তু বাস্তবে তা করেন না ইন্সপেক্টররা৷
অন্যদিকে অভিযোগ যে, আইন অমান্য করেই ভবনের দোতলায় বয়লার স্থাপন করেছিলেন ট্যাম্পাকোর মালিকপক্ষ৷ ১৯৪০ সালের বয়লার আইন অনুযায়ী, বয়লার মেশিন অবশ্যই ভূপৃষ্ঠের লাগোয়া করে স্থাপন করতে হবে৷ এরপরও কল-কারখানা পরিদর্শন পরিদপ্তর ট্যাম্পাকোকে ছাড়পত্র দিয়েছে৷ জানা গেছে, এই দু'টি বয়লার আগামী ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত নবায়ন করা আছে৷
xxx
This browser does not support the audio element.
বয়লার ইন্সপেক্টর শরাফত আলী দুর্ঘটনার দিন শনিবার বিকেলেই দাবি করেন, ‘‘বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে ট্যাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ তবে বয়লার দু'টি অক্ষত আছে বলে দাবি করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা পরিদপ্তরের বয়লার পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার শরাফত আলী৷ শনিবার সন্ধ্যায় ট্যাম্পাকো কারখানা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান৷ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যাম্পাকো কারখানায় দু'টি বয়লার রয়েছে৷
উল্লেখ্য, শনিবার দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল মোশাররফ হোসেন জানিয়েছিলেন, ‘‘বয়লার বিস্ফোরণের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে৷''
বাংলাদেশে অনুমোদনের বাইরেও স্থানীয়ভাবে তৈরি করা বয়লার ব্যবহারের অভিযোগ আছে৷ বিশেষ করে রাইস মিলে প্রায়ই এ ধরনের অননুমোদিত বয়লার বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়৷
'ফাস্ট ফ্যাশন': প্রদীপের নীচেই অন্ধকার
ফ্যাশনের নেশা আর জাদু চিরকালে, তা সত্ত্বেও জামাকাপড় আজ ফেলে দেওয়ার জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ড্রেসডেন শহরের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সংগ্রহশালায় আয়োজিত একটি প্রদর্শনীতে গার্মেন্টস শিল্পের অন্ধকার দিকটাও দেখানো হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Christians
বিশেষ মূল্য ছাড়ের মূল্য
সব ধরনের পছন্দ আর সবরকম দামের জামাকাপড় সরবরাহ করার জন্য ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি এমন সব দেশে গার্মেন্টস তৈরি করাচ্ছে, যেখানে পরিবেশ সুরক্ষার মান ও পারিশ্রমিক, দুই-ই নীচের দিকে৷ ড্রেসডেনের ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ প্রদর্শনীতে ফ্যাশন নামের বিগ বিজনেসের যবনিকার আড়ালে উঁকি মারা হয়েছে৷ প্রদর্শনীটি চলবে ২০১৬ সালের ৩রা জুন অবধি৷
ছবি: anna.k.o.
গ্ল্যামারের অপর পীঠ
শুরু থেকে ‘শ্রেডিং’ বিশেষ দূর নয়৷ পশ্চিমের মানুষ নিত্যনতুন পণ্য চায় ও কেনে – প্রয়োজনের অনেক বেশি৷ ড্রেসডেনের প্রদর্শনীতে দেখতে পাওয়া যাবে এর অর্থনৈতিক, নৈতিক ও পরিবেশগত ফলশ্রুতি৷ পশ্চিমি জীবনধারার ফলে বাংলাদেশের মানুষ কতটা প্রভাবিত হচ্ছেন?
ছবি: Tim Mitchel/lHygienemuseum Dresden
রিসাইক্লিং, নাকি সস্তায় আবর্জনা সরানো?
ইউরোপে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা যে সব পুরনো জামাকাপড় সংগ্রহ করেন, তার ৬০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পাঠানো হয়৷ ধরন, রং ও ফ্যাশন অনুযায়ী বড় বড় গাঁট বেঁধে, জাহাজে করে সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করা হয়৷ ভারতের পানিপথে পুরনো গরম জামাকাপড় আবার রং অনুযায়ী ভাগ করা হয় – তার ফলে নাকি তার দাম বাড়ে৷
ছবি: Tim Mitchel/lHygienemuseum Dresden
বাঁচাও যায় না, মরাও যায় না
ফাস্ট ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে যেভাবে প্রোডাকশন চলে, তা ইউরোপেও এককালে ছিল৷ ধীরে ধীরে তা পুবদিকে ‘রপ্তানি’ করা হয়েছে: প্রথমে পূর্ব ইউরোপে, তারপর এশিয়ায়৷ মাইনেপত্র এক হিসেবে দারিদ্র্যসীমার নীচে৷ বাংলাদেশে একজন গার্মেন্টস কর্মীর পরিবারের ১১ জন মানুষ একটি ঘরে বাস করছেন, এমনও দেখা যায়৷
ছবি: Taslima Akhter/Hygienemuseum Dresden
হাজার স্বপ্নের সমাধি
রিনার মা কাঁটাতারের বেড়ার সামনে বসে তাঁর মেয়ের ফেরার অপেক্ষা করছেন – অনর্থক৷ বেড়ার পেছনে সাভারের সেই গার্মেন্টস ফ্যাক্ট্রি, রানা প্লাজা, যা ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল ধসে পড়ে ১,১৩৪ জন মানুষের জীবন নেয়৷ ছবিটি তোলেন তসলিমা আখতার৷
ছবি: Taslima Akhter/Hygienemuseum Dresden
সোয়েটশার্টেই তার প্রমাণ
সস্তায় উৎপাদন আর কাজের পরিবেশের মধ্যে সংযোগসূত্র শুধু ছবি আর ডায়াগ্রামের মাধ্যমেই নয়, গার্মেন্টসের মধ্যে দিয়েও ফুটিয়ে তোলা যায়৷ জার্মান শিল্পী মানু ভাসহাউস চীনে এমন সব সোয়েটশার্ট তৈরি করিয়েছেন, যার উপর রানা প্লাজা বিপর্যয়ের ছবি ছাপানো রয়েছে৷
ছবি: Manu Washaus/Hygienemuseum Dresden
স্লো ফ্যাশন
ফ্যাশন কথাটার সঙ্গে ‘ফেয়ার’ – মানে ন্যায্য – কথাটাও যে যোগ করা যায়, তার প্রমাণ এই ধরনের ফ্যাশন৷ এই সব ডিজাইনাররা শ্রমিকদের শোষণ, পরিবেশের পক্ষে হানিকর অথবা জন্তুজানোয়ারের পক্ষে কষ্টদায়ক, এমন কোনো পন্থায় ফ্যাশন সৃষ্টি করতে চান না৷
ছবি: Daniel Bark/Deutsches Hygiene-Museum
এথিক্যাল ফ্যাশন শো
এ বছর বার্লিন ফ্যাশন উইকে টেকসই ফ্যাশন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল৷ ড্রেসডেনের প্রদর্শনীতে তা-ও দেখানো হয়েছে৷ পশ্চিমে এখন ‘সবুজ’ ফ্যাশন আর ‘ফেয়ার ট্রেড’-এর প্রবণতা বেড়েছে৷
ছবি: Getty Images/Thomas Lohnes
কিন্তু ‘পেপে’?
পাওলো উডস-এর তোলা এই ছবিটি যে ব্যঙ্গাত্মক, তা কাউকে বলে দিতে হবে না৷ ‘আমাকে চুম্বন করো, আমি ব্লন্দিনী’, লেখা রয়েছে টি-শার্টটিতে৷ অথচ যে মেয়েটি এই সেকেন্ড হ্যান্ড টি-শার্ট পরে রয়েছে, সে হাইতির, ইউরোপ বা অ্যামেরিকার নয়৷ দাতব্য হয়ে এই ধরনের সব টি-শার্ট হাইতিতে আসে৷ সেখানে তাদের বলা হয় ‘পেপে’৷