চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, শিল্প নানা কারণে অনেকেরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে৷ কিন্তু প্রকাশ্যে বড় আকারের শিল্পকর্ম উপেক্ষা করা সহজ নয়৷ বার্লিনের দুই শিল্পী এমনভাবেই সাধারণ মানুষকে শিল্প সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করছেন৷
বিজ্ঞাপন
যে চিত্রকর্মের দর্শক সাধারণ মানুষ
02:43
ইয়াকব বার্ডু ও হলগার ভাইসফ্লোগ ‘ইনারফিল্ডস' নামের শিল্পীসংঘের সদস্য৷ প্রায় ১০ বছর ধরে তাঁরা বাড়ির দেওয়ালকে ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার করে বিশালাকার, রঙিন সব ছবি সৃষ্টি করেন৷ তাঁদের সরঞ্জামের আকারও ছোট নয়৷ ভাইসফ্লোগ বলেন, ‘‘এগুলি আমাদের প্রিয় ‘সারপ্রাইজ ব্রাশ'৷ ক্যানভাসের উপর একই কাজ করলে ছোট্ট মিনি ব্রাশের প্রয়োজন হতো৷''
বার্লিনের ‘ইস্ট সাইড গ্যালারির’ ২৯ বছর
১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের ২১টি দেশের ১১৮ শিল্পী বার্লিন প্রাচীরে আঁকতে শুরু করেন৷ সে বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ১০০-র বেশি দেয়ালচিত্র তৈরি হয়৷ আর এভাবেই জন্ম হয় ‘দ্য বার্লিন ইস্ট সাইড গ্যালারির’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Karin Kaper Film
বার্লিনের প্রতীক
এটা বার্লিনের অন্যতম প্রদর্শিত স্থান৷ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ নিয়ে অসংখ্য শিল্পী তাদের শিল্প ভাবনার অমর রূপ দিয়েছেন ১ দশমিক তিন কিলোমিটার প্রসারিত এই দেয়ালে৷ তাদের একজন দিমিত্রি ভ্রুবেল৷ মস্কোর এই অপরিচিত আর্ট শিক্ষার্থী ১৯৯০ সালে সাবেক সোভিয়েত এবং তৎকালীন পূর্ব জার্মানির প্রধান লিওনিড ব্রেজনেভ ও এরিশ হ্যনেকার-এর মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ চুমুর এই দেয়ালচিত্রটি আঁকেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ভুক্তভোগীদের স্মরণ
বার্লিন প্রাচীরের তথাকথিত ‘ডেথ স্ট্রিপ লাইন’ এবং ওয়াচটাওয়ারের কাছেই ‘দ্য ইস্ট সাইড গ্যালারির’ অবস্থান৷ সেসময় কাউকে দেয়াল পার হতে দেখলে গুলি করার অনুমিত ছিল পাহারাদার সেনাদের৷
ছবি: Fotolia/creedline
সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ
জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের আনুষ্ঠানিক দিন ৩রা অক্টোবরের কয়েকদিন আগে ৯০-এর দশকের ২৮শে সেপ্টেম্বর গ্যালারিটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়৷ তখন থেকেই সেখানকার অনেক দেয়ালচিত্র পোস্টকার্ড আকারে বার্লিনের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে৷
ছবি: DW/Frederike Müller
বিতর্কিত সংস্কার
বার্লিন প্রাচীরের রয়ে যাওয়া অংশকে সারাক্ষণ বাতাস এবং আবহাওয়া মোকাবিলার পাশাপাশি পর্যটকও স্যুভেনিয়ার প্রস্তুতকারীদের খোঁচা সহ্য করতে হয়৷ আর তাই দেয়ালের সংস্কারও জরুরি৷ ২০০৮ সালের অক্টোবরে তাই চিত্রকর্মগুলো পুনরায় পালিশ করার প্রয়োজন হয়৷ কিছু শিল্পী অবশ্য এমনটা করতে রাজি হননি৷ তবে অনেকেই সম্মতি দিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/ Sean Gallup
আর্ট ফ্ল্যাশ মব
জার্মান পপ শিল্পী জিম আভিগনওন ১৯৯০ সালে তাঁর ‘ডুইং ইট কুল ফর দ্য ইস্ট সাইড’ চিত্রকর্মটি তৈরি করেন৷ ২০১৩ সালে তিনি সেই চিত্রকর্মের উপর আনুষ্ঠানিক অনুমতি ছাড়াই কিছু আর্ট শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন করে আঁকেন৷ ফলে চরম সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি৷
ছবি: Reuters
দেয়ালের কিছুটা সরিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা
একটি বহুতল ভবন তৈরির জন্য ২০১৩ সালে ইস্ট সাইড গ্যালারির কিছু অংশ সরিয়ে প্রবেশদ্বার তৈরি করেন বিনিয়োগকারীরা৷ সেসময় বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ হলেও তা সফল হয়নি৷ বর্তমানে ভবনটি তৈরির কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে৷ ২০১৫ সালের প্রথম ছ’মাসের মধ্যে কাজ পুরো শেষ হওয়ার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সময়ের সাক্ষী
যদিও অনেক শিল্পী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের চিত্রকর্মের যত্ন নিয়েছেন, তা সত্ত্বেও কিছু শিল্পকর্ম অযত্ন অবহেলায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে৷ কোনো কোনো চিত্রকর্মের ওপর আবার গ্রাফিটি আঁকা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Hans Wiedl
রূপালি পর্দায় গ্যালারি
বার্লিন ইস্ট সাইড গ্যালারি নিয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছেন জার্মান ফিল্মমেকার কারিন কাপের এবং ডির্ক স্যুসজিস৷ শিল্পী টোমাস ক্লিঙ্গেনশ্টাইন আশা করছেন তথ্যচিত্রটি বার্লিন প্রাচীরের এই অংশটি রক্ষায় ভবিষ্যতে সহায়তা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Karin Kaper Film
8 ছবি1 | 8
মানুষের জীবনে ডিজিটাল বিপ্লবের প্রভাবই তাঁদের শিল্পের বিষয়বস্তু৷ হলগার ভাইসফ্লোগ ভবনের বিশাল দেওয়ালকে মিউরালে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করেন৷ ফ্রাইবুর্গ শহরে এমন এক দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ হলগার ভাইসফ্লোগ মনে করেন, ‘‘এমন ছবি আঁকার সুযোগ সমাজের সামনে আমাদের অভিব্যক্তি তুলে ধরার বিশাল দায়িত্বও এনে দেয়৷ অনেক মানুষের সমাগম হয়, এমন জায়গায় কিছু সৃষ্টি করার সুযোগ পেলে সমাজের উন্নতির লক্ষ্যে টেকসই কিছু করার দায়িত্ব এসে যায়৷ তা না হলে সেটি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়৷''
কয়েক সপ্তাহ আগে ফিরে তাকানো যাক৷ দুই শিল্পীই বার্লিনে বসবাস করেন ও সেখানেই কাজ করেন৷ গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে তাঁদের আলাপ হয়েছিল৷ তখন দুজনেই গ্রাফিটি স্প্রেয়ার ছিলেন৷ সবসময়ে আইন মেনে তাঁরা সৃষ্টির কাজ করেন নি৷ হলগার ভাইসফ্লোগ বলেন, ‘‘আসলে নব্বইয়ের দশকের পর থেকে আমাদের আবেগের পরিবর্তন হয় নি৷ শুধু একটি ছোট রূপান্তর ঘটেছে৷ সে সময়কার শখ ও আবেগ আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ এখন আমাদের এমন সৃষ্টির অনুমতি রয়েছে৷ কেউ আর আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করে না৷''
দেওয়ালের উপর সঠিক মাপ নিশ্চিত করতে খসড়ার উপর একটি গ্রিড বা খাঁচা বসানো হয়৷ ফ্রাইবুর্গের মিউরাল সৃষ্টি করতে ৪ দিনে ৬ লিটার রং ও ১০ ক্যান স্প্রে পেন্টের প্রয়োজন হয়েছে৷ সৃষ্টিকর্মটি এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে এর নানা ব্যাখ্যা হতে পারে৷ ইয়াকব বার্ডু বলেন, ‘‘আমরা মানুষের কাছে পৌঁছানোর আশা রাখি৷ কিন্তু আমরা শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতে চাই না৷ আমরা মানুষের চলার পথে এমন পাথর রাখতে চাই, যাতে ধাক্কা খেয়ে তাদের মন খুলে যায়৷''
আর্টিফিশিয়ার ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে মিউরালের মাধ্যমে ইনারফিল্ডস গোষ্ঠী সেই লক্ষ্যই পূরণ করতে চায়৷ বিশাল আয়তনের কারণেই মানুষের পক্ষে সেটি উপেক্ষা করা অসম্ভব৷
শিল্পীর চোখে ম্যার্কেল
বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকা প্রথম সারির একজন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ বুধবার ৬৫ বছর পূর্ণ করেছেন তিনি৷ জন্মদিনে দেখে নিন, কীভাবে শিল্পের তুলিতে ধরা পড়েছেন ম্যার্কেল৷
ছবি: Elizabeth Peyton
বিবর্তন
‘ক্ষমতার পদচিহ্ন‘ নামের সিরিজে আঙ্গেলা ম্যার্কেল, সাবেক চ্যান্সেলর গেরার্ড শ্র্যুডার ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওশকা ফিশারকে তুলে ধরেছেন আলোকচিত্রী হেরলিন্ডে কোয়েলব্ল ৷ ছবি ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রাজনীতিকদের বিবর্তন তুলে ধরেছেন তিনি৷
ছবি: Herlinde Koelbl
পপ আইকন
ভগ ম্যাগাজিনের জন্য ২০১৭ সালে ম্যার্কেলের এই চিত্রটি এঁকেছেন মার্কিন চিত্রশিল্পী এলিজাবেথ পেইটন৷ যৌবনের ছাপ রাখা ছবিতে তাঁর দৃঢ়তাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন শিল্পী৷ ম্যার্কেলের ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের কয়েকশ’ ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি আঁকা হয়েছে৷
ছবি: Elizabeth Peyton
মানবিকতা
২০১৫ সালে এভাবে টাইম ম্যাগাজিনের পারসন অব দ্য ইয়ার সংখ্যার প্রচ্ছদে স্থান পান আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ছবির শিল্পী কলিন ডেভিডসন বলেন, ‘‘তাঁকে শান্ত ও নরম মনের মানুষ হিসাবে দেখানো হয়েছে, শরণার্থীদের প্রতি তাঁর মানবিক অবস্থানের কারণে৷’’ সেসময় ইউরোপের ঋণ এবং শরণার্থী সংকটে মানবিকতার হাত প্রসারিত করেছিলেন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Time Magazine
অবসাদ
ডাচ শিল্পী এরিক ফন লিশাউটের তুলিতে এভাবে ধরা দিয়েছেন অবসাদগ্রস্ত ও বিষন্ন ম্যার্কেল৷ বন শহরের সমসায়মিক চিত্রকর্মের সংগ্রহশালা সংগ্রহ করেছে এ চিত্রটি৷ ফন লিশাউট বলেছেন, প্রতিকৃতিটি আঁকতে মাত্র এক ঘন্টা সময় নিলেও লাল লিপিস্টিকে অন্যরকমভাবে ফুটে উঠেছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
ছবি: Erik van Lieshout
জর্জ ডাব্লিউ বুশের তুলিতে
কেবল প্রখ্যাত শিল্পীদের নয়, শখের বশে চিত্রকরদের তুলিতে ধরা পড়েছেন ম্যার্কেল৷ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ তুলিতে যে ত্রিশ বিশ্বনেতার ছবি এঁকেছেন, তাঁদের একজন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. W. Smith
রাজনীতির দেয়ালচিত্র
দক্ষিণ অ্যামেরিকার রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত ম্যুরালটি এঁকেছেন ইটালিয়ান শিল্পী ইয়ুপিতারফাব৷ চিত্রটিতে গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে দেখা যায় ম্যার্কেলকে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/G. Georgiou
রম্যচিত্র
আর্ট জাদুঘরের সংগ্রহশালার অন্যতম অনুষঙ্গ রাজনৈতিক রম্যচিত্র৷ এই ছবিতে উলঙ্গ ম্যার্কেলে কোলে উঠে পড়েছেন নেপোলিয়ান হ্যাট পড়া সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি৷ এঁকেছেন ব্রিটিশ শিল্পী ও রম্যলেখক কায়া মার৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/B. Strenske
সংলাপ
বুলেগিরার স্টারো জেলেজারে গ্রামে এই দেয়ালচিত্রটি এঁকেছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের ছবি দিয়ে দেয়ালচিত্রটির সূচনা হলেও পরে ম্যার্কেলের মতো রাজনীতিকদের সেখানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে ম্যার্কেলের সংলাপ দেখানো হয় তাতে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/H. Rusev
প্রতিবাদ
প্রতিবাদী অনেক ভাস্কর্যে বিকৃতভাবে ম্যার্কেল উপস্থাপন করা হয়েছে ম্যার্কেলকে৷ ‘ইউরোপিয়ান সিটিজেনশিপ‘ শিরোনামের ভাস্কর্যে ম্যার্কেলকে তুলে ধরা হয়েছিল মুণ্ডুহীন৷ উপরের ছবিটি ‘ট্রানজিট‘ নামক ইনস্টলেশনের, যেখানে দুই হাজার ৬০০ জনের একজন ম্যার্কেল৷
ছবি: Courtesy Georg Korner
হিপস্টার
‘হিপস্টোরি’ নামের সিরিজে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তরুন হিপস্টার হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন ইসরায়েলি ইলুস্ট্রেটর আমিত শিমোনি৷ হাওয়াইয়ান শার্ট পড়া ট্রাম্প আর উঁচু খোপার ওবামার সঙ্গে ম্যার্কেল আছে সেখানে৷ কালো হ্যাট আর লিপিস্টিক পড়া ম্যার্কেলকে এভাবে হিপস্টার বানিয়েছেন শিমোনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ব্যঙ্গচিত্র
কুঁচকানো চোখ আর মুখসমেত ম্যার্কেলের ছবিও কম আঁকা হয়নি৷ জার্মানির বাইরের বহু গণমাধ্যমেও এমন সব চিত্রায়ন দেশ ছাড়িয়ে তাঁর বিশ্বনেতা হওয়ার প্রমাণ বহন করে৷