1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রমিকদের নিরাপত্তার কি উন্নয়ন হয়েছে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ এপ্রিল ২০১৮

রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ প্রশ্নের মুখে পড়ে৷ আর এর দায়-দায়িত্ব বায়ারদের ওপরও পরে৷ ভবন ও কাজের পরিবেশের উন্নয়নও হয়েছে৷ তাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার কি উন্নয়ন হয়েছে?

Bangladesch Näherinnen bei der Arbeit
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

ক্রেতাদের দু'টি জোট অ্যালায়েন্স এবং অ্যাকর্ড৷ অ্যালায়েন্স ১ হাজার ৬৭৬টি কারখানায় তাদের পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ করেছে৷ আর অ্যাকর্ড  ১ হাজার ৫৫০টি কারখানা পরিদর্শন করেছে৷

অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পাশাপাশি পোশাকখাত মূল্যায়নে রয়েছে সরকারের জাতীয় উদ্যোগ৷ দেশের মোট ১ হাজার ৫৪৯টি কারখানা এ উদ্যোগের আওতায় রয়েছে৷ প্রাথমিক পরিদর্শনের পর কারখানাগুলোকে ঝুঁকির মাত্রাভেদে গ্রিন, ইয়েলো, অ্যাম্বার ও রেড শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে৷ ‘ইমপ্রুভিং ওয়ার্কিং কন্ডিশন ইন দ্য রেডিমেড গার্মেন্ট সেক্টর' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র কারিগরি সহায়তায় এ কার্যক্রমে অর্থায়ন করছে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী৷

‘আমরা চেষ্টা করছি বিশ্বমানের পোশাক কারখানা পরিবেশ তৈরির এরই মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

মার্চ এবং এপ্রিল মাসে বিজিএমইএ-র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রানা প্লাজা ধসের পর থেকে আমরা ভবন, বিদ্যুৎ এবং ফায়ার এই তিনটি নিয়ে কাজ করছি৷ কর্মস্থলের নিরাপত্তার জন্য বিল্ডিং, ইলেকট্রিক এবং ফায়ার সেফটির জন্য আমরা কাজ করছি৷ আমরা চেষ্টা করছি বিশ্বমানের পোশাক কারখানা পরিবেশ তৈরির৷ এরই মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে৷ আশা করি এই বছরের শেষ নাগাদ শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে৷'' 

তিনি বলেন,‘‘ বাংলাদেশের ৮০ ভাগ পোশাক কারখানার নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ সন্তোষজনক৷'' তিনি জানান, ‘‘ইউনাইটেড গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেট অনুযায়ী, বিশ্বের সেরা ১০টি পোশাক কারাখানার ৭টি বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশের ৬৯টি  পোশাক কারখানা ইউএস-এর গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেট পেয়েছে৷ আরো ২২০টি কারখানা এই সার্টিফিকেট পাওয়ার পথে রয়েছে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রানা প্লাজা ধসের পর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স দুই হাজার দুইশ' ফ্যাক্টরি নিয়ে কাজ করে৷ এখন আমরা বলতে পারি, এই দুই হাজার দুইশ' ফ্যাক্টরিই এখন কমপ্লায়েন্স৷ আর ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের দেড় হাজার ফ্যাক্টরির মধ্যে পাঁচ-ছয়শ' ফ্যাক্টরির এখনো সংস্কার প্রয়োজন৷ বাকিগুলো সংস্কার এবং পুনর্নিমাণ করা হয়েছে৷ আমি বলতে পারি, বাংলাদেশে আগামী দুই বছরের মধ্যে কোনো নন – কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরি থাকবে না৷''

‘রানা প্লাজার পর পরিবেশ ও কারাখানা ভবনের উন্নতি হয়েছে, ভবনের ভিতরে আতঙ্ক কমেছে’

This browser does not support the audio element.

এদিকে বিজিএমইএ-র বিরোধিতার পরও সরকার অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তি তিন বছর বাড়িয়েছে৷ তবে বিজিএমইএ সভাপতি গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘আমরা এখন আর তাদের কাজের বিরোধী নই৷''

বাংলাদেশে মোট তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো৷ পোশক শিল্পের গবেষক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিউটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ-এর  অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রানা প্লাজার পর পরিবেশ ও কারাখানা ভবনের উন্নতি হয়েছে৷ ভবনের ভিতরে আতঙ্ক কমেছে৷ তবে কাজ এখনো শেষ হয়নি৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কারাখানা পরিদর্শনের দায়িত্বে নিয়োজিত পরিদর্শকের সংখ্যা মাত্র ৩১২ জন৷ আর তাঁদের মধ্যে সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ে এক্সপার্ট মাত্র ৮০ জন৷ এই জনবল দিয়ে কারখানার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি'র নিশ্চয়তা দেয়া কঠিন৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবেসিকিউরিটি শুধু কারখানা ভবন ও কারখানার নিরাপত্তা দিয়ে নিশ্চিত করা যায় না৷ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, তাঁরা কোনো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কিনা, তাঁদের আবাসস্থল এগুলো নিরাপত্তা প্রশ্নে খুবই গুরত্বপূর্ণ৷ সেদিকে উন্নয়নের কোনো প্রকল্প নাই৷ এবং উন্নয়ন হয়েছে তা বলা যাবে না৷''

‘শ্রমিককে কম মজুরি দিয়ে আধুনিক ভবন করে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘নিরাপদ কাজের অধিকার এবং অনিরাপদ কাজকে না বলার অধিকার শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটা নিশ্চিত হয়নি৷ পাঁচ হাজারের বেশি পোশাক কারখানা, কিন্তু মাত্র ৬৬১ টি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে৷ প্রতিটি কারখানায় পার্টিসিপেশন কমিটি থাকার কথা৷ কিন্তু আছে মাত্র ৮৯১টি কমিটি৷''

আর গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘‘৮৯ ভাগ পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই, যা আছে তারও একটি অংশ মালিকরা তাঁদের নিজেদের লোক দিয়ে তৈরি করিয়েছে৷ এখানে ট্রেড ইউনিয়ন করলে নির্যাতনের শিকার হয়, কাজ থেকে ছাঁটাই করা হয়৷''

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘‘শ্রমিককে কম মজুরি দিয়ে আধুনিক ভবন করে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না৷ সেফটি ও সিকিউরিটির নামে ভবনের উন্নতি হচ্ছে৷ কিন্তু শ্রমিক ভবনের বাইরে বের হলে তাঁর জীবন যাপনের নিরাপত্তা নেই৷ আর্থিক নিরাপত্তা নেই৷ বাংলাদেশের পোশাক কর্মীদের বেতন পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম৷''

রানা প্লাজার আহতরা যেমন আছেন

02:02

This browser does not support the video element.

এদিকে সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের শতকরা প্রায় ১৩ ভাগ যৌন হয়রানীর শিকার৷ শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২০ ভাগ৷ মানসিক নির্যাতনের শিকার ৭১ ভাগেরও বেশি৷

 ‘এস্টেট অব রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশন অব ওম্যান রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়াকার্স' শিরোনামের এক গবেষণা প্রতিবেদনে নির্যাতনের ওই তথ্যের বাইরে অনেক অনিয়মের ঘটনাও উঠে এসেছে৷ অস্ট্রেলিয়ান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের আর্থিক সহযোগিতায় ‘কর্মজীবী নারী' নামে একটি সংগঠন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কেয়ারের সহায়তায় ওই গবেষণাটি করে৷ বিভিন্ন ধরনের পোশাক কারখানার ১৫০ জন নারী শ্রমিকের মধ্যে গবেষণাটি পরিচালিত হয়৷ কর্মস্থলের পরিবেশ, চাকরির শর্ত এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য– গবেষণায় মূলত এই বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়৷

তাতে দেখা যায়, ৩১ দশমিক ৩ ভাগ নারী শ্রমিকের কোনো নিয়োগপত্র নেই৷ ৫৩ দশমিক ৩ ভাগের নেই সার্ভিসবুক৷ তবে ৯৮ দশমিক ৭ ভাগের হাজিরা কার্ড আছে৷ শ্রম আইনের লঙ্ঘন করে শতকরা ৫০ ভাগকে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷ আর ৫০ ভাগ ১০ ঘণ্টারও বেশি৷ ওভারটাইম করা বাধ্যতামূলক এবং তা দিনে দুই ঘণ্টারও বেশি৷ বিশ্রামের কোনো সুযোগ পান না ৭০ ভাগ শ্রমিক৷ ২৫ দশমিক ৩ ভাগ সাপ্তাহিক ছুটি পান না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ