সাভারে বুধবার ভবন ধসে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ অথচ রানা প্লাজা নামের ভবনটি ধসে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল আগেই৷ তবুও বাঁচতে পারেনি শ্রমিকরা৷ এদিকে, ভবন ধস নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া৷
বিজ্ঞাপন
সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় শোকে মুহ্যমান গোটা বাঙালি জাতি৷ সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে এই বিষয়ে মন্তব্য করছেন অগুনতি মানুষ৷ ভবনটিতে আটক পড়া মানুষের ছবি শেয়ার করছেন অনেকে৷ এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বেরিয়ে আছে রক্তাক্ত পা, চুড়ি পরা হাত, মাথা বা শরীরের অংশ বিশেষ৷ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া অনেক মানুষ বেঁচে থাকলেও তাদের উদ্ধার করা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে, এই নিয়েও ফেসবুক, ব্লগে হয়েছে আলোচনা৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
তবে বুধবার রাতে এসব ছাপিয়ে ভবন ধস নিয়ে আরেকটি বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে৷ ব্রিটিশ সম্প্রচার কেন্দ্র বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর জানিয়েছেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷''
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷''
বলাবাহুল্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য শোকে মুহ্যমান জাতিকে তীব্র আঘাত দিয়েছে৷ অসংখ্য মানুষ এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্লগ, ফেসবুকে৷ ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতায় জুরি অ্যাওয়ার্ড ও ইউজার প্রাইজ জয়ী ব্লগার আলী মাহমেদ তাঁর ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত নিবন্ধের একাংশে লিখেছেন, ‘‘আমাদের মন্ত্রী বাহাদুরদের কথাবার্তা শুনে এই মুহূর্তে যেটা আমার মনে হচ্ছে, ‘হে পরম করুণাময়, এই গ্রহে এতো দেশ থাকতে এই দেশেই পাঠালে কেন...'!''
কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগে ব্লগার কাজী মামুন হোসেনের নিবন্ধের শিরোনাম, ‘‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমার ভাই-বোনের লাশ নিয়ে তামাশা বন্ধ করুন, দয়া করে আমাদের ‘ক্ষেমা' করুন৷''
হোসেন নিজে বুধবার সাভারে ধসে পড়া ভবনটির কাছে গিয়েছিলেন৷ তিনি সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন৷ এই বিষয়ে হোসেন লিখেছেন, ‘‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, গাড়ী থেকে নেমে আপনার হেলেদুলে চলা দেখে আমি ধারনা পেয়েছি, রানা প্লাজা ট্রাজেডি সামান্য নিছক একটি দুর্ঘটনা মাত্র, এতে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই৷''
ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতায় ইউজার প্রাইজ জয়ী ব্লগার আরিফ জেবতিক তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘‘সে এক দেশ ছিল রে ভাই৷ সেই দেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মী এমন মুশকো জোয়ান ছিল যে খালি হাতে টানাটানি করেই একটা ৮ তলা দালান ধসিয়ে দিতে পারত, গার্মেন্ট কর্মীরা এত বড়লোক ছিল যে তাদের কর্মস্থলে রেখে দেয়া সম্পদ আনতেই দুইদিন কারখানায় যেতে হতো৷ খালি সরকারই ছিল খাঁটি গরীব৷ ৫০টা টর্চলাইট কিনতেও চাঁন্দা তোলা লাগছে!''