চিন্তিত বিএনপি নেতারা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ একদিকে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে ভাঙনের আলামত৷ এর সঙ্গে সোমবারের ‘ফ্লপ' হরতাল বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলেছে৷ ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি৷ মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মীর্জা আব্বাসকে হরতালের সময় রাজপথে দেখা যায়নি৷ সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল তাঁর কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামলেও তা মাঠ গরম করার মতো কিছু না৷ তিনি সোমবার দুপুরে রাজধানীর বেইলি রোডে শ-খানেক নেতা-কর্মী নিয়ে মিছিল করেছেন মাত্র৷ সাবেক সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে মহানগরের দায়িত্ব দিয়ে যাঁরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তাঁরাও রীতিমতো স্তম্ভিত হয়েছেন মীর্জা আব্বাসের নিষ্ক্রিয়তায়৷
ঢাকার কলাবাগান এলাকার ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন বাবলু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হরতাল ডেকে নেতারা ঘরে থাকলে কর্মীদের কী করার আছে?'' তিনি বলেন, ‘‘দলীয় কর্মসূচিতে এখন আর তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা উত্সাহ পান না৷ কারণ কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে থাকেন না৷ এছাড়া তাঁরা কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনাও দেন না৷''
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবারের ‘ফ্লপ' হরতাল নিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও ক্ষুব্ধ৷ তিনি আশা করেছিলেন যে, এই হরতাল সফল হলে সামনে সরকার পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নতুন করে কর্মসূচি নিয়ে এগোবেন৷ বলা বাহুল্য, ঢাকা মহানগরের নতুন কমিটির জন্য সোমবারের হরতাল ছিল একটি পরীক্ষা৷ কিন্তু সেই পরীক্ষায় পাশ করার আগ্রহ দেখা যায়নি মহানগরের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে৷ তাই বিএনপি চেয়ারপার্সন এ নিয়ে দু-একদিনের মধ্যেই বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে৷
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্তত আটজন সদস্য এখন নিষ্ক্রিয়৷ তার ওপর দলের ভেতেরের কোন্দল এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে৷ মওদুদ আহমেদকে নিয়ে বিএনপি আছে দোটানায়৷ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আছেন বক্তৃতা আর বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ৷অন্যদিকে মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের শুরুতেই নেতৃত্ব দ্বিধাবিভক্ত৷ আহ্বায়ক মীর্জা আব্বাস কোনোভাবেই সদস্য সচিব হাবিব উন নবী সোহেলকে মেনে নিতে পারছে না৷ তাই মহানগরের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন৷
ঢাকা মহানগরের পুরান ঢাকার ওয়ার্ড নেতা আহমেদ হোসেন জানান, ‘‘আমরা বিভ্রান্ত৷ দল আসলে কী করতে চায় আমরা তা বুঝতে পারছি না৷'' তাঁর কথায়, ‘‘সোমবারের হরতালের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না৷ হঠাত্ করেই হরতাল ডাকা হয়েছিল৷''
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা সত্য যে বিএনপির ঢাকা মহানগর এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রত্যাশিতভাবে হরতালের সময় মাঠে দেখা যায়নি৷ তাঁরা মাঠে থাকলে সাধারণ নেতা-কর্মীরা উদ্বুদ্ধ হন৷ কিন্তু যেখানে পুলিশ বাহিনী সরাসরি গুলি করে, সেখানে তাঁরা মাঠে না থাকলে দোষ দেয়া যায় না৷''
অবশ্য তাঁর দাবি, ‘‘তারপরও হরতাল সফল হয়েছে৷ দেশেন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছেন৷'' তাঁর মতে, ‘‘এই হরতাল ছিল শান্তিপূর্ণ এবং রক্তপাতহীন৷ আওয়ামী লীগের হরতালের মতো নয়৷ বিএনপি কোনো সহিংসতায় বিশ্বাস করে না৷''
এ ধরণের হরতাল দিয়ে সরকারের পতন সম্ভব কিনা – জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সময় এলেই সরকার সরে গিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে৷''
ওদিকে মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ দলীয় জোটের সমাবেশে বক্তৃতা দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে এবং গুম-খুন-নির্যাতন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোট এই সমাবেশের আয়োজন করে৷ সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ঢল নেমেছিল৷