ইলেকট্রিক গাড়িকে ভবিষ্যতের পরিবহণ ব্যবস্থার মুশকিল আসান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জার্মানি এতকাল পিছিয়ে থাকলেও নতুন উদ্যমে কাজ চলছে৷ যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে রেসিং কার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
ভবিষ্যতের পরিবহণ ব্যবস্থায় ইলেকট্রিক গাড়ি
দেখতে ডিজেল-চালিত বাসের মতো মনে হলেও পুরোপুরি বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে৷ জার্মানির মানহাইম শহরে গত জুন মাস থেকে এমন তিনটি বাস পথে নেমেছে৷ বাস স্টপেই দ্রুত ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা রয়েছে৷ যাত্রীরা টেরও পান না৷ চালকও নিশ্চিন্ত থাকেন৷
কিন্তু এখনো বড় আকারে এমন বাস চালানোর সময় আসেনি৷ শুধু বিনিয়োগের অঙ্কই ছিল ৬০ লক্ষ ইউরোর বেশি৷ তবে প্রকল্পের প্রধানের আশা, কোনো একদিন ইলেকট্রিক বাস দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠবে৷ ই-বাস প্রকল্পের প্রধান সেবাস্টিয়ান মেঙেস বলেন, ‘‘এমন বাসের দাম খুবই বেশি, এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে৷ অর্থাৎ বাণিজ্যিকভাবে অন্য বাসের সঙ্গে এর তুলনা চলে না৷ তবে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে চলেছে৷ তাছাড়া ব্যাটারি নিয়েও সমস্যা রয়েছে৷ এক্ষেত্রেও দাম অনেক কমবে বলে আমাদের আশা৷''
ভবিষ্যতের পরিবহণ ব্যবস্থায় ইলেকট্রিক গাড়ি
কার্লসরুয়ে প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট এই ইলেকট্রিক বাস প্রকল্পে জড়িত৷ তাদের এই ল্যাবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তৈরি হয়৷ ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য ব্যাটারির দাম কম রাখা এবং একবার চার্জ দিয়ে আরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করাই হলো লক্ষ্য৷ তবে এশিয়ার তুলনায় জার্মানি এখনো এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে৷
ইয়র্গ কাইসার অনেক বছর ধরে এক জার্মান ব্যাটারি কোম্পানির জন্য কাজ করেছেন৷ কিন্তু সেই কোম্পানি চলতি বছর বন্ধ হয়ে গেছে৷ রসায়নবিদ ইয়র্গ কাইসার বলেন, ‘‘২০১৫ সালে মনে হচ্ছে, যে সেল টেকনোলজির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় ইউরোপ অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷ লিথিয়াম আয়ন প্রযুক্তির গুরুত্ব বুঝতে জার্মানিতে অনেক সময় লেগেছে৷ তারপর পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি সাহায্যে অনেক প্রকল্প শুরু হয়েছে৷ তবে শুধু এই পদক্ষেপে কাজ হয়নি৷''
শহরের ভেতরে ভালো চলে ইলেক্ট্রিক কার
04:18
বিজ্ঞানী ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সেইসঙ্গে ইলেকট্রিক গাড়ির সফটওয়্যার আরও উন্নত করার চেষ্টা করছেন৷ তাঁরা ব্যাটারির অবস্থা এবং চার্জিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন, যেমনটা এতকাল সম্ভব ছিল না৷ এই প্রকল্প সার্বিকভাবে ইলেকট্রোমোবিলিটি-র অগ্রগতি ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সফটওয়্যার ডেভেলপার টোমাস কচেনরয়টার বলেন, ‘‘একদিকে এই তথ্য ক্রেতাদের জন্য প্রয়োজনীয়৷ ব্যাটারি কতটা চার্জ হয়েছে, তিনি সেটা জানতে চাইবেন৷ তিনি তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইবেন৷ জানতে চাইবেন, এক চার্জে গাড়ি কত কিলোমিটার চলবে৷ পরের দিনও চার্জ পুরো থাকা চাই৷ এছাড়া গাড়ি ভাড়া দেয় যে কোম্পানি, তাদেরও ব্যবসায়িক স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে৷''
চালকের প্রয়োজন কমছে, গাড়িই হয়ে উঠছে কর্তা
জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী আইএএ প্রতি বছর গাড়ি-ভক্তদের জন্য অনেক নতুন চমক নিয়ে আসে৷ এবার স্বয়ংক্রিয় পার্কিং ও চালকবিহীন গাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Meyer
সৌন্দর্যের প্রতীক
ইটালির হাল ফ্যাশনের লাম্বোরগিনি হুরাকান মডেল শুধু চার চাকার যান নয়, রীতিমতো ফ্যাশনদূরস্ত ডিজাইনই হলো এই কোম্পানির গাড়ির মূলমন্ত্র৷ গাড়ির ভিতরে-বাইরে প্রতিটি কোণেই পাওয়া যায় আভিজাত্যের ছাপ৷ মানুষের ‘ইনস্টিংক্ট’ বা সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী এই মডেল ডিজাইন করা হয়েছে বলে দাবি করছে লাম্বোরগিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Meyer
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ম্যার্কেল
শরণার্থী সংকট থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে ব্যস্ত জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শুধু প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকেননি, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ঘুরে দেখেছেন৷ কিছু গাড়ির স্বয়ংক্রিয় পার্কিং-এর ক্ষমতা দেখে তিনি খুব খুশি৷ বলেছেন, একমাত্র নারীরাই স্বীকার করে যে, তাঁদের পার্কিং করতে অসুবিধা হয়৷ পুরুষরাও এই সুবিধা উপভোগ করে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ডিজাইন মানেই চমক
পর্শে কোম্পানির ‘মিশন ই-কনসেপ্ট’ গাড়ি রূপে-গুণে চমকপ্রদ৷ সামনের ও পেছনের দরজা নিজস্ব ভঙ্গিতে খুলে যায়৷ ব্যাটারিচালিত এই গাড়ি চার্জ করতে নাকি মাত্র ১৫ মিনিট লাগে৷ ফলে অ্যামেরিকার ‘টেসলা’ কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা হবে এই মডেলের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
মঞ্চে অঘটন
বিএমডাব্লিউ কোম্পানির প্রধান হারাল্ড ক্র্যুগার সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন৷ শীর্ষ কর্তাদের কতটা স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়, এই ঘটনাকে তারই উদাহরণ হিসেবে দেখছেন অনেকে৷ শরীর খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ক্র্যুগার তাঁর দায়িত্ব পালন করতে এগিয়ে এসেছিলেন৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
চালকবিহীন গাড়ি
এবারের গাড়ি প্রদর্শনীতে চালকবিহীন গাড়ি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানির ডাইমলার গ্রুপ এমনই একটি প্রোটোটাইপের মডেল পেশ করেছে৷ গুগল সহ বিভিন্ন কোম্পানি ভবিষ্যতে এমন গাড়ি বাজারে আনতে চায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
স্বচ্ছ ডিজাইন
মার্সিডিস কোম্পানির ভবিষ্যতের এই গাড়ির মডেলে বসে চালক ও সহযাত্রীরা কার্যত বিনা বাধায় উপর-নীচ ও আশেপাশের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন৷ এখনো পর্যন্ত শুধু এর প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/D. Roland
গাড়ি মানেই দূষণ?
পথে যত গাড়ি, ততই যানজট ও দূষণ৷ জার্মানির পরিবেশবাদী সংগঠন প্রদর্শনীর বাইরে তাই এই নেতিবাচক দিকগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে প্রতিবাদ দেখিয়েছে৷ কার্বন নির্গমন কমাতে গাড়ি-নির্মাতাদের অনীহা তাদের রোষের কারণ৷ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও অটোমোবাইল ও পেট্রোলিয়াম কোম্পানির চাপে বিকল্প জ্বালানির গাড়ির বিকাশ থেমে রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ৷
ছবি: Maximilian Geiß / DUH
7 ছবি1 | 7
কার্লসরুয়ে প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতের ইলেকট্রিক গাড়ির ডেভেলপার হতে পারেন৷ তাঁরা একটি ইলেকট্রিক স্পোর্টস কার তৈরি করে ‘ফর্মুলা ই' আন্তর্জাতিক ছাত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন৷
শুধু মজা ও দ্রুত গতির রোমাঞ্চ নয়, ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের ইলেকট্রোমোবিলিটির জনক হিসেবে দেখতে চান৷ কনস্টানটিন গেয়ার্ৎস বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, ‘ফর্মুলা স্টুডেন্ট' ও ‘ফর্মুলা স্টুডেন্ট ইলেকট্রিক' প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরে ইলেকট্রোমোবিলিটির ক্ষেত্রে কী সম্ভব, তা পরীক্ষা করা যায়৷ অনেক স্পনসর আমাদের কাজে বিনিয়োগ করছে৷ আমাদের ও ইলেকট্রিক গাড়ির প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে৷ কে জানে, আমরাই হয়ত আগামী কয়েক দশকে জার্মানির রাস্তায় ই-কারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছি৷''
এবার রেসিং ট্র্যাকে নামার পালা৷ খুব কম চালকই এই গাড়ি চালানোর অনুমতি পান৷ কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি ইঞ্জিন বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে৷ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে পারে এই রেসিং কার৷
এই উদ্যোগ সার্থক হয়েছে৷ গত বছর তাদের ই-কার নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ‘ফর্মুলা ই' প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছেন৷ এই তো সবে শুরু!
চালকবিহীন গাড়ি
গুগল সহ কয়েকটি কোম্পানি স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি নিয়ে গবেষণা করছে৷ ফলে সামনের দিনগুলোতে রাস্তায় হয়ত চালকবিহীন গাড়ি দেখা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি
গুগলের ‘সেলফ-ড্রাইভিং কার প্রজেক্ট’-এর পরিচালক ক্রিস উর্মসন গুগল ব্লগে জানিয়েছেন, কয়েক বছরের মধ্যে স্বনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি নামানোর পরিকল্পনা করছে তারা৷
ছবি: Getty Images
গবেষণা চলছে
অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে নিজেদের সদর দফতরে পরীক্ষামূলকভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালিয়ে আসছে গুগল৷ তবে গাড়ি নিজে চললেও এখনো সবসময় একজন ড্রাইভার পাশে থাকছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্ঘটনা এড়ানো
সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ির স্তূপ এটি৷ চোখে স্পষ্ট দেখতে ব্যর্থ হওয়া সহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ তবে গুগল আশা করছে বুদ্ধিমান রোবট দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্সরযুক্ত গাড়ি
গুগল-এর স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে অনেক ধরনের সেন্সর থাকবে৷ যেমন এই লেজার সেন্সরটি রাস্তার ত্রিমাত্রিক ছবি তুলবে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
জার্মান প্রযুক্তি
একটু আগে গুগল-এর যে লেজার সেন্সরের কথা বলা হলো, সেটা জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার ইউনিভার্সিটিও তাদের স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে ব্যবহার করছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লেজার সেন্সর যে ত্রিমাত্রিক ছবি তুলেছে সেটা গাড়িতে থাকা কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিয়েছে৷
ছবি: Universität der Bundeswehr/TAS
৬ডি-ভিশন
ছবির এই বস্তুটি একটি ক্যামেরা৷ গাড়ির উইন্ডশিল্ডের পেছনে লাগানো আছে এটি৷ রাস্তায় যা কিছু ঘটে তার ছবি তোলে এই ক্যামেরা৷ ডাইমলারের একদল গবেষকের ‘৬ডি-ভিশন’ প্রকল্পের আওতায় উদ্ভাবিত এই ক্যামেরা ২০১১ সালে ‘জার্মান ফিউচার অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল৷ এর কাজ সম্পর্কে জানা যাবে পরের ছবিতে৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
আলোর খেলা
আগের ছবিতে যে ক্যামেরাটি দেখা গেছে সেটির তোলো ছবিগুলো গাড়ির কম্পিউটারে চলে যায়৷ এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে সামনে কোনো ঝুঁকি আছে কিনা – তা বুঝতে পারেন চালক৷ এই ছবিতে পথচারীকে কমলা রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আর সবুজ চিহ্নটি চলমান একটি গাড়ির৷ অর্থাৎ কোনো বিপদ নেই৷ এভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালক ছাড়াই সামনে চলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
কম্পিউটার নাকি মানুষ?
রোবট চালিত গাড়ি যদি দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে তার জন্য কাকে দায়ী করা হবে? এর নির্মাতা, নাকি সফটওয়্যার প্রোগ্রামারকে৷ নাকি গাড়ির মালিককে? রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীদের ভবিষ্যতে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
অন্য কাজে
যুদ্ধের সময় পণ্য পরিবহণ কাজে কোনো চালককে কাজে না লাগিয়ে কিংবা পরমাণু দুর্ঘটনার পর সেই বিষাক্ত অঞ্চলে কোনো মানুষকে না পাঠিয়ে সেখানে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি পাঠানো যেতে পারে৷