ভবিষ্যতে নগর পরিকল্পনার দিশা দেখাতে পারে সিঙ্গাপুর
১০ জুন ২০১৯ভবিষ্যতে কম জায়গার মধ্যেও আমরা কীভাবে বসবাস করতে চাই? সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় সিঙ্গাপুরে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এক গবেষণাগার গড়ে তুলেছে৷ তার পোশাকি নাম ‘ফিউচার সিটিস ল্যাব'৷
এত নির্মাণকাজ সত্ত্বেও সিঙ্গাপুর যে বিস্ময়কর রকম সবুজে ভরা, বিজ্ঞানীদের কাছেও তা অজানা নয়৷ দূরদর্শী নগর পরিকল্পনার কল্যাণেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷ নিয়ম অনুযায়ী জমিতে নির্মাণ করলে তার কিছুটা অংশে গাছপালা লাগাতেই হবে৷
সবুজ বহুতল ভবনে মানুষ কীভাবে থাকেন, গবেষকরা তা পরীক্ষা করছেন৷ বাসিন্দারা কি তাদের প্রতিবেশীদের চেনেন? শহরের পরিবেশের উপর সবুজের কতটা প্রভাব রয়েছে? জীবনযাত্রার মানই বা কী রকম?
‘ফিউচার সিটিস ল্যাব'-এর গবেষক দলের প্রধান টোমাস শ্র্যোপফার নিজেও সপরিবারে এমন এক সবুজ বহুতল ভবনে বসবাস করেন৷ বহুতল ভবনের স্থাপত্যের ক্ষেত্রে ‘ইন্টারলেস' প্রকল্পকে প্রায় আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ এই প্রকল্পের ভবনগুলি মাথাচাড়া দিয়ে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা করে নি, বরং ধাপে ধাপে পরস্পরের উপর ছড়ানো রয়েছে৷ কমিউনিটি হল, সুইমিং পুল, উঠান – সব কিছু বিভিন্ন স্তরে বণ্টন করা হয়েছে৷ টোমাস বলেন, ‘‘ঘনবসতিপূর্ণ প্রাঙ্গণের মধ্যে কীভাবে মানুষের জন্য মনোরম বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়, এ ক্ষেত্রে স্থপতিদের কাছে সেটাই ছিল চ্যালেঞ্জ৷ ঘনত্বের নেতিবাচক প্রভাব উপেক্ষা করেও কীভাবে উচ্চ মানের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব, আমার মতে ইন্টারলেস তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷''
সবুজ অংশগুলির ব্যবহার ও একাত্মবোধের ক্ষেত্রে গাছপালার অবদান নিয়ে ফিউচার সিটিস ল্যাব-এর হয়ে গবেষণা করছেন সমাজবিজ্ঞানী মিশেল জিয়াং৷ বাসিন্দারাই মূলত আবাসনের বাগানটি ব্যবহার করেন৷ যেমন অবসরপ্রাপ্ত এই ব্যক্তি প্রতিদিন সেখানে ব্যায়াম করেন৷ তিনি বেশ গর্ব নিয়ে নিজের কেনা ফ্ল্যাটটি দেখালেন৷ বিশেষ করে বারান্দা থেকে সুন্দর দৃশ্য এবং বাতাস চলাচলের প্রণালীর কারণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না বলে তিনি বেশ মুগ্ধ৷ তাঁর মতো সিঙ্গাপুরের অনেক মানুষই সরকারি আবাসনে বসবাস করেন৷
স্কাইভিল এমনই একটি প্রকল্প৷ প্রায় ৩,০০০ মানুষ সেখানে বসবাস করেন৷ যেন ছোটোখাটো গ্রামের মতো৷ গ্রামের ধারণাই এই প্রকল্পের মূলমন্ত্র৷ ৮০টি ইউনিটের সমন্বয়ে এই ‘ভিলেজ' গড়ে তোলা হয়েছে৷
সবুজ অংশগুলি সব বাসিন্দাদের ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে ছাদগুলি প্রায় খালি৷ মানুষের মধ্যে একাত্মবোধ গড়ে তোলা সম্ভবত মোটেই সহজ কাজ নয়৷ মিশেল জিয়াং মনে করেন, ‘‘বসবাসের জায়গা ও কিছু গাছপালার ব্যবস্থা করাই যথেষ্ট নয়৷ সবার আগে জানতে হবে, কাদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে, তাদের প্রয়োজন কী এবং সেখানে কী ধরনের কার্যকলাপ চলবে৷''
ছাদের এমন আকর্ষণীয় বিন্যাস সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না করলে মানুষে-মানুষে মেলবন্ধন ঘটে না৷ মিশেল বলেন, ‘‘আমাদের পরীক্ষার সময়ে বুঝতে পারলাম, মানুষের স্বাচ্ছন্দের চাহিদা কতটা জরুরি৷ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ছায়া ও শব্দের মাত্রা উপযুক্ত না হলে মানুষ কমিউনিটি এরিয়া ব্যবহার করবে না৷''
এই গবেষণা ভবিষ্যতে শহরের জীবনযাত্রা সম্পর্কে একটা ধারণা দিচ্ছে৷
মেলি জেন/এসবি