ভবিষ্যতে পুষ্টির সহজ উৎস হতে পারে তেঁতুলপানা
২৫ মার্চ ২০১৯আকারে ছোট, ছায়া পেলেই জলাশয়ের উপর ছড়িয়ে পড়ে৷ পুকুর মালিক মাত্রই ঘৃণা করেন৷ কারণ এগুলির দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটে৷ ক্ষুদিপানা বা তেঁতুলপানা নামেই এই উদ্ভিদ বেশি পরিচিত৷ ইংরেজি ভাষায় তার পোশাকি নাম ডাকউইড৷
এই ব্যক্তি কিন্তু খাদ্য হিসেবে এই উদ্ভিদের গুণাগুণ নিয়ে মুগ্ধ৷ তাঁর কাছে এই উদ্ভিদ যাকে বলে ‘মিব়্যাকল প্লান্ট' – অর্থাৎ অসাধারণ গুণসম্পন্ন এক গাছ৷ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ক্লাউস আপেনরোট বলেন, ‘‘ডাকউইড গোত্রের সব উদ্ভিদই অবহেলিত৷ অথচ মানুষের পুষ্টির ক্ষেত্রে এগুলি অভাবনীয় অবদান রাখতে পারে৷''
ক্লাউস আপেনরোট-এর কাছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ডাকউইড উদ্ভিদের সংগ্রহ রয়েছে৷ তাঁর গবেষণাগারে প্রায় ৫০০ পরিচিত প্রজাতির উদ্ভিদ বেড়ে উঠছে৷ সাধারণত সেগুলির মধ্যে এক ধরনের ফাঁপা পাতা থাকে৷ ফলে সেই উদ্ভিদ পানির উপর ভাসতে পারে৷
মাত্র এক দিনের মধ্যেই এর আকার দ্বিগুণ হতে পারে৷ ক্লাউস আপেনরোট এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন৷ তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘সব ডাকউইড প্রজাতির মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি, শুকনো অবস্থায় যা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ৷ কিন্তু তার মান আরও বিস্ময়ের কারণ৷ কারণ অ্যামিনো অ্যাসিডের মধ্যে উপাদানগুলির অনুপাত খুবই ভালো৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেমনটা পরামর্শ দিয়ে থাকে৷''
ডাকউইড-এর মাধ্যমে ভারতের খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধানের লক্ষ্যে ক্লাউস আপেনরোট সে দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছেন৷ গবেষকরা প্রোটিন-সমৃদ্ধ নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে পরিকল্পিত প্রজননের মাধ্যমে ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাতও বাড়াতে চান৷
থাইল্যান্ড ও লাওসে বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে খাদ্য হিসেবে ডাকউইড কাজে লাগানো হয়৷ জার্মানিতে না হলেও ভারতে সারা বছর ধরেই খোলা আকাশের নীচে ডাকউইড চাষ করা সম্ভব৷ ক্লাউস আপেনরোট বলেন, ‘‘এখানে একাধিক সমস্যা রয়েছে৷ প্রথমত এখানে একটাই মরসুম রয়েছে৷ অর্থাৎ মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আগস্টের শেষ, কখনো সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ডাকউইড চাষ করা যায়৷ শীতকালে খোলা আকাশের নীচে চাষ করা সম্ভব নয়৷''
তাছাড়াপার্মাকালচার বা টেকসই কৃষি মুক্ত প্রকৃতির মাঝে ডাকউইড ক্ষতিকারক পদার্থ নিঃসরণ করে এবং অনেক জায়গা দখল করে৷ ডাকউইড যেখানে গজায়, সেখানে অন্য কোনো উদ্ভিদ টিকতে পারে না৷
জার্মানির কালকার শহরের দুই বিশেষজ্ঞ এই সমস্যার সমাধান করতে চান৷ এক পদার্থবিজ্ঞানী ও এক উদ্ভিদ প্রজননকারী গ্রিনহাউসে ডাকউইড উৎপাদন করতে এক অসাধারণ প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন৷ পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে কার্ল মিশায়েল স্মিট বলেন, ‘‘তিনি বলেন, আমি গাদা করে ডাকউইড রাখতে পারি৷ পানিতে যত বেশি আয়রন চেলেট দেবো, বৃদ্ধি ততই ভালো হবে৷ সেটা অবশ্যই আয়রন, সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতি ও লো লাইট টলারেন্সের সমন্বয়ে এই প্রভাব দেখা যায়৷ এমন প্রভাবের কথা শুনে পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে আমি বিশাল উৎসাহ পেয়ে এই প্রকল্পে জড়িয়ে পড়ি৷''
আয়রন বা লোহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক পদার্থ, যা সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন হয়৷ আয়রন ডাকউইডকে এমনকি কম আলোর মধ্যেও সালোকসংশ্লেষ করতে সাহায্য করে৷ ডাকউইড ছায়ার মধ্যেও বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখে৷ কার্ল মারিয়া স্মিট ও হ্যারমান ইয়োসেফ ভিলহেল্ম এই আবিষ্কার কাজে লাগাচ্ছেন৷
তাঁরা এমন প্লান্ট তৈরি করেন, যার মধ্যে ডাকউইড উপর-নীচে বেশ কয়েকটি তলায় রাখা সম্ভব৷ ফলে মাত্র এক বর্গ মিটার জায়গায় তাঁরা ৫ থেকে ১০ বর্গমিটার পরিমাণ উপযুক্ত প্রজাতির ডাকউইড উৎপাদন করতে পারেন৷ ক্লাউস আপেনরোট বলেন, ‘‘ডাকউইডের নিজস্ব কোনো স্বাদ নেই বলা চলে৷ ফলে সুবিধা হলো সব ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগানো যায়৷''
খাদ্য হিসেবে ডাকউইড অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর৷ অমলেট বা স্মুদি হিসেবে তা খাওয়া চলে৷ হয়তো অদূর ভবিষ্যতে রেস্তোরাঁর খাদ্য তালিকায়ও এমন পদ যোগ হবে৷
বারবারা পেটারমান/এসবি