কিন্তু এতে খরচ বেশি হওয়ায় শিগগিরই ঘরের ফ্রিজে এই প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা কম৷

ম্যাগনেটোক্যালোরিক কুলিং প্রক্রিয়ায় ফ্রিজ ঠান্ডা করার জন্য চুম্বক ব্যবহার করা হয়৷ প্রক্রিয়াটি কার্যকর করতে ব্যবহৃত উপাদান হলো একটি ধাতব ব্লক, যা প্লাস্টিকের পিৎজা স্লাইসের ভেতর থাকে৷ এর পাশে চুম্বক রাখলে ব্লকের তাপমাত্রা প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে৷

মেটেরিয়াল ডেভেলপার ফাল্ক ম্যুনশ বলেন, ‘‘আমাদের ম্যাগনেটোক্যালোরিক্সে ম্যাগনেটিক মোমেন্ট আছে যেগুলো অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারে৷ ম্যাগনেটিক ফিল্ড প্রয়োগ করলে সেগুলো সারিবদ্ধ হয় এবং মুভমেন্টে থাকা সব শক্তি ল্যাটিসে জমা হলে এটি গরম হয়, এবং উলটোটাও ঘটে থাকে৷''

প্রক্রিয়াটি নিয়মিত পুনরাবৃত্তি করার কারণেই যন্ত্রটি শীতল হয়৷ ঘূর্ণায়মান চুম্বকগুলো পর্যায়ক্রমে বিশেষ ধাতব ব্লকগুলিকে উত্তপ্ত ও ঠান্ডা করে৷ একই সময়ে পাইপ দিয়ে লুপের মধ্যে জলের মিশ্রণ ঢোকানা হয়৷

ম্যাগনেটোক্যালোরিক কুলিং নিয়ে কাজ করা জার্মান কোম্পানি ম্যাগনোথার্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা টিমুর জিরমান বলেন, ‘‘চুম্বকীকরণের কারণে ভেতরের ধাতু গরম হলে আমরা এই ধাতব কাঠামোর মধ্যে পানি ঢুকিয়ে গরম পানি তৈরি করি৷ এরপর সেটি বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দিই, যেমনটা এখনকার ফ্রিজেও করা হয়৷ পেছনে একটা হিট এক্সচেঞ্জারও আছে৷ তারপর আমরা চুম্বক সরিয়ে নিয়ে মেটেরিয়ালটিকে ডিম্যাগনেটাইজ করি৷ তখন মডিউলটি ঠান্ডা হয়, কিংবা মেটেরিয়ালটি ঠান্ডা হয়৷ এবং তারপর আমরা জল ঠান্ডা করতে পারি, যা পরে ফ্রিজে ঢোকানো যেতে পারে৷''

ব্লকে অনেক ছিদ্র আছে, তাই দেখতে শক্ত মনে হলেও আসলে তা নয়৷

মেটেরিয়াল ডেভেলপার ফাল্ক ম্যুনশ বলেন, ‘‘ছিদ্র গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, উৎপন্ন হওয়া তাপ ও ঠান্ডা নিষ্কাশনের জন্য ব্লকের মধ্যে কয়েকটি চ্যানেলের একটি অবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক প্রয়োজন৷ আসলে এটিই মূল বাধা: ঠান্ডা থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাপ বের করে আনা৷''

তবে ব্লকের ছিদ্রগুলো কত বড় হতে পারবে তার একটি সীমা আছে৷ তা না হলে এক পর্যায়ে ব্লকটি ভেঙে পড়তে পারে৷ ম্যাগনেটিক কুলিংয়ের আরেকটি জটিল বিষয় হলো কুলিং সাইকেল ডিজাইন করা৷ আপনার একের অধিক কুলিং পিৎজা স্লাইস প্রয়োজন৷ আপনার বাড়ির ফ্রিজে শুধু একটি কম্প্রেসার আছে, কিন্তু একটিমাত্র পিৎজা স্লাইস সব কাজ করতে পারে না৷

ডেনিশ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির রাসমুস বিয়র্ক বলেন, ‘‘আপনি যদি আপনার ম্যাগনেটোক্যালোরিক উপাদানকে এমন একটি ক্ষেত্রে রাখেন, তাহলে আপনি যে তাপমাত্রার পরিবর্তন পাবেন সেটা পাঁচ কি ছয় ডিগ্রি হতে পারে৷ কিন্তু কোনো কিছু ঠাণ্ডা করার জন্য এটি যথেষ্ট নয়৷ তাই আপনাকে একটি চক্রটি তৈরি করতে হবে যাকে বলা হয় ‘অ্যাকটিভ ম্যাগনেটিক রেফ্রিজারেটর রিজেনারেশন সাইকেল'৷ এই চক্রে ‘হিট ট্রান্সফার ফ্লুইড' বা এইচটিএফ ব্যবহার করে তাপমাত্রার পরিবর্তনের পরিধি বাড়ানো যেতে পারে৷ কিন্তু এর কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে৷''

এই জটিলতার কারণে ম্যাগনোথার্ম কোম্পানি তাদের ফ্রিজগুলোকে এক লাখ ৭৫ হাজার টেস্ট ঘণ্টা ধরে চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে৷ ভালভ, পাম্প, তরল প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সব ত্রুটি দূর করতে এমনটি করা হচ্ছে৷ এসব করতে গিয়ে ছয় বছরেরও বেশি সময় চলে গেছে৷

টিমুর জিরমান বলেন, ‘‘পুরো প্রক্রিয়ায় যে বিষয়টির সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে চুম্বক৷ আমাদের চুম্বকের মান বাড়াতে হবে, কারণ, কুলিং করার জন্য এটিই মূল উপাদান৷ সে কারণে আমরা চুম্বককে যতটা সম্ভব ছোট এবং হালকা করতে চাই৷''

তাই আমাদের পক্ষে হয়ত এই প্রক্রিয়ায় ঘরের ফ্রিজ বা এসি ঠান্ডা করা সম্ভব হবে না৷ ওষুধ ঠান্ডা রাখতে এটি ব্যবহার হতে পারে৷

কাই স্টাইনএকে/জেডএইচ