নিরাপত্তার প্রয়োজনে ভবিষ্যতে যেন কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে ইন্টারনেট ও মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করা যায় সেই সক্ষমতা অর্জনে এখন থেকে নিয়মিতভাবে মহড়ার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, ভবিষ্যতে মফস্বল এলাকা সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও মহড়া হবে৷ উল্লেখ্য, গত সোমবার মধ্যরাতের পর প্রথমবারের মতো ঢাকার শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, কলাবাগান, পরিবাগসহ আশেপাশের এলাকায় অল্প সময়ের জন্য ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবা বাধাগ্রস্ত হয়৷
মহড়ার শুরুতে ইউআরএল ও ওয়েবসাইট ফিল্টারিং করা হয়৷ রাত একটার পরে ঢাকার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ আর রাত আড়াইটার পরে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় মোবাইল সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সবকিছুই বন্ধ করা হয় কিছু সময়ের জন্য৷
বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম
জানা গেছে, ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক দ্রুত বন্ধ করা গেলেও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধে বেশি সময় লাগে৷ কারণ শাহবাগ এলাকায় মোবাইল অপারেটরগুলোর ৬০টি বিটিএস তথা টাওয়ার রয়েছে৷ সেগুলো বন্ধে কারিগরি দুর্বলতার চেয়ে প্রশাসনিক জটিলতা বেশি চোখে পড়েছে৷
মহড়া শুরু হওয়ার আগে বিটিআরসি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অপারেটরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে৷ এরপরই শুরু হয় মহড়া৷
গত ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলা চলার সময় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী নির্দেশ দিলেও তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টারনেট ও টেলিকম নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি৷ কেন্দ্রীয়ভাবে রিয়েল টাইমে টেলিকম নেটওয়ার্ক বন্ধ করার প্রযুক্তি না থাকায় এ সমস্যা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবাদাতা একাধিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা৷
ডার্কনেটের ব্যবহার বাড়ছে
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন হওয়ার পরও তথ্য পাওয়া মুশকিল৷ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি যে প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করছে, তাতে সব সময় তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় পাওয়া নাও যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
ইন্টারনেটে তথ্য
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু তথ্য যোগ করেন৷ স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোও ব্যবহারকারীদের ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য নিয়ে থাকে৷
ছবি: imago/Schöning
মেটাডাটা
গুপ্তচর বিভাগ বেশি আগ্রহী ‘মেটাডাটা’ সম্পর্কে৷ নেট ব্যবহারকারী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ওয়েবভিত্তিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় মেটাডাটা৷
ছবি: Reuters
মেটাডাটার তথ্য
কে কাকে ই-মেল করছেন, সেই ব্যক্তির পরিচয়, সময় সম্পর্কে তথ্য থাকে মেটাডাটায় যা গুপ্তচর বিভাগ পেতে চায়৷ প্রেরক, ঠিকানা, তারিখ থেকে শুরু করে যে সার্ভার ব্যবহার করে ই-মেলটি করা হয়েছে, সেই তথ্যও এভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব৷
ছবি: Raigo Pajula/AFP/Getty Images
ডার্কনেটের ব্যবহার
ডার্কনেটের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে যোগাযোগ করা সম্ভব৷ প্রযুক্তিগত কারণে এখনো সরকার বা নিরাপত্তা কর্মীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডার্কনেট ব্যবহারকারীদের সনাক্ত করতে পারেন না৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
ফ্রিনেট
সবচেয়ে আলোচিত ডার্কনেটের নাম ফ্রিনেট৷ তাদের ওয়েবসাইটে গেলে বিনামূল্যে একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যায়৷
ছবি: Reuters
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য
ফেসবুক এবং টুইটারে একজন ব্যবহারকারী শুধু নিজের সম্পর্কে সাধারণ তথ্যই জানান না, তাঁরা তাঁদের পছন্দ, অপছন্দ, এমনকি বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জানান৷ ব্লগে সমাজ সচেতনতা, মানবাধিকার, সরকার বিরোধী লেখাও লেখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশে ডার্কনেট
বাংলাদেশে ডার্কনেটের ব্যবহার আগে না হয়ে থাকলেও খুব শিগগিরই যে সেটা শুরু হয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
7 ছবি1 | 7
বিটিআরসির মুখপাত্র সরওয়ার আলম জানান, ‘‘আমরা নিয়মিতভাবে এই ড্রিল করব৷ এটি আমাদের রুটিন ওয়ার্ক৷ তবে এটি কোনো বিশেষ অভিযানের মতো নয়৷ আমরা একটি ড্রিল করেছি৷ পরেরটা কবে করব তা আমরা এখনো ঠিক করিনি৷ তবে আমরা বছর ধরেই এটা করব৷ যাতে সরকার নিরপাত্তার প্রয়োজনে চাইলে ব্যবস্থা নেয়া যায়৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘আমরা একটি জিআইএস (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্টারনেট সিস্টেম) ম্যাপ করেছি, যা দিয়ে আমরা সঠিকভাবে ইন্টারনেট-এর লাইন চিহ্নিত করতে পারব৷ এর আগে কোথায় কোন জিএসপি, কোথায় ফাইবার, ওয়াইম্যাক্স এগুলো শনাক্ত করা যেতনা৷''
বিটিআরসির সচিব বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য এই ড্রিল খুবই জরুরি৷ এর মাধ্যমে আমাদের সক্ষমতা যাচাই ও অর্জনের কাজও চলছে৷''
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!