1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে উঠুক আনন্দময়তায়

ডয়চে ভেলের অতিথি লেখক রুমা মোদক৷
রুমা মোদক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একটি জাতি কেমন ভবিষ্যৎ চায়,তার শুরুর বিন্দু এই প্রাথমিক বিদ্যায়তন। যদিও আমাদের দেশে সমন্বিত কোনো শিক্ষা মাধ্যম নেই এবং এ কারণে প্রাথমিকভাবে শিশুর যাত্রা শুরু হয় চূড়ান্ত গন্তব্যহীন।

পরিবারকে বলা হয় শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র থেকে শিশুর প্রথম সামাজিক সংশ্লিষ্টতা শুরু হয়, মনে করেন রুমা মোদকছবি: Salim/Xinhua/picture alliance

মানুষ প্রতিদিন নিজেকে গড়ে আগামীর জন্য। প্রতিটি 'আগামীকাল' মানুষের 'আজ' হয়,এই বর্তমানেই মানুষ বাঁচে। আমাদের মতো রাষ্ট্রে, যেখানে রাষ্ট্র আমাদের খাদ্য-বাসস্থান-স্বাস্থ্য-শিক্ষা কোনো কিছুরই দায়িত্ব নেয় না, সেখানে সুনাগরিক আশা করে রাষ্ট্র গঠনের জন্য।রাষ্ট্রের একজন সুনাগরিক প্রথমত পরিবারের সম্পদ, দ্বিতীয়ত সমাজের সম্পদ, তৃতীয়ত রাষ্ট্রের সম্পদ। এই যে পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্র - কোনোটিই কোনোটি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কোনো একটিকে যোগ্যতর করে তুললেই চলে না। বরং প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই যোগ্যতরের স্বীকৃতি এবং প্রাপ্য নিশ্চিত হতে হয়। এবং যোগ্যতর হয়ে গড়ে ওঠাও কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়।

স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো আমরা আমাদের শিক্ষানীতি এবং চূড়ান্ত কাঙ্ক্ষিত অর্জন কী হতে পারে তা নিশ্চিত করতে পারিনি। একটি দেশে একাধিক শিক্ষাক্রম একই সমান্তরালে চলছে বছরের পর বছর। যেখানে এই শিক্ষাক্রমগুলির মান এবং ধারা একটির সাথে আরেকটি কোনোভাবেই ইভালুয়েশন সম্ভব নয়। অথচ কর্মক্ষেত্রে আমরা তাদের ঠেলে দিচ্ছি একই রকম প্রতিযোগিতার দিকে। ফলে যোগ্যতা বা মেধার চেয়ে সাফল্য কিংবা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সুযোগ। যে সমাজে সুযোগ হয়ে ওঠে সাফল্যের নিয়ামক, সেখানে অনৈতিকতাকে আটকানোর কোনো উপায় থাকে না। যেন-তেনভাবে সুযোগ নেয়ার প্রবণতা একটি জাতির মূল্যবোধ ও নৈতিকতা নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

পরিবারকে বলা হয় শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র।প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র থেকে শিশুর প্রথম সামাজিক সংশ্লিষ্টতা শুরু হয়। একটি জাতি কেমন ভবিষ্যৎ চায়, কিংবা ভবিষ্যৎ কেমন হবে তার শুরুর বিন্দু এই প্রাথমিক বিদ্যায়তন। যদিও আমাদের দেশে সমন্বিত কোনো শিক্ষা মাধ্যম নেই এবং এ কারণে প্রাথমিকভাবে শিশুর যাত্রা শুরু হয় চূড়ান্ত গন্তব্যহীন।

ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রিক মাদ্রাসা শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা- এই তিন শিক্ষা মাধ্যমের বাইরে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ছাড়া বাকি দুটি মাধ্যমের শিক্ষাক্রম সুনির্দিষ্ট। এ দেশে কিন্ডারগার্টেন নামে যে শিক্ষাক্রম, তা একটি হযবরল শিক্ষাক্রম, ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া এর কোনো দৃশ্যমান গন্তব্য সুনির্দিষ্ট করা যায় না। ব্যবসার উদ্দেশ্যে শিশুশিক্ষার এই মাধ্যমটি প্রয়োজনে গান-বাজনার উপর গুরুত্ব দেয়, প্রয়োজনে ধর্মীয় শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়,প্রয়োজনে ইংরেজি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ এদের উপরে নেই। ব্যক্তিমালিকানাধীন এই শিক্ষামাধ্যম ব্যক্তির ইচ্ছাতেই চলে। বাকি থাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশুদের মাধ্যম প্রাথমিক শিক্ষা।

তহবিল সংকটে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা

03:48

This browser does not support the video element.

কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির জনক ফ্রিডরিশ ফ্রোবেল শিশুশিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন, শিশুর হাত, মন ও হৃদয় একসঙ্গে কাজ করলে শিক্ষা পূর্ণ হয়। এজন্য তিনি খেলা, গান,  নাচ, ছড়া, অভিজ্ঞতা ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মনোবিজ্ঞানী মারিয়া মন্টেসরি বলেছেন সংগীত, অঙ্গভঙ্গি, নাটক, চিত্রকলা শিশুদের মনোযোগ, শৃঙ্খলা, সৃজনশীলতা বাড়ায়। জন ডিউই বলেন, গান, নাচ শিশুকে সামাজিকভাবে অধিকতর যুক্ত করে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "শিক্ষার মূল কথা হচ্ছে আনন্দ, যেখানে আনন্দ নেই সেখানে শিক্ষা চাপা পড়ে যায়।" যে আনন্দময় শিক্ষাকে তিনি প্রায়োগিক করে তুলেছিলেন তার নিজের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান শান্তি নিকেতনের মাধ্যমে।

শিক্ষা মনোবিজ্ঞান বহুবিধ গবেষণালব্ধ সারমর্মে বলে, গান শিশুর ভাষা, স্মৃতি ইত্যাদি আবেগীয় বিকাশ ঘটায়, নৃত্য শরীরের সমন্বয়, আত্মবিশ্বাস ও আনন্দ জন্ম দেয় এবং অভিনয় কল্পনাশক্তি, সামাজিক দক্ষতা ও যোগাযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উন্নত সকল দেশ শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে আধুনিক মনোবিজ্ঞানের সূত্রগুলোকে বিবেচনা করে। দেশজ প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনের গুরুত্ব বিবেচনায় নীতি নির্ধারণপূর্বক শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে আনন্দময় শিক্ষা পদ্ধতিকেই গুরুত্বারোপ করে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের তীব্র আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। বিপরীতে তারা দাবি করেছে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের। ব্যাপারটিতে যুক্তির চেয়ে আবেগ বেশি। বিবেচনার চেয়ে বিরোধিতা বেশি। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মীয় শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অধিক মনে করে, তবে আরো ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু এই ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সাথে গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করার সম্পর্ক যুক্তিগ্রাহ্য নয়। বরং এই বাতিল করার শর্তারোপ ভিন্ন ইঙ্গিত দেয়। দেশের রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি এই ইঙ্গিতের ভিত শক্ত করে।

আমরা জানি না এই সংগীত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরোধীদের কাছে নতি স্বীকার করা হবে কিনা। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। প্রতিরোধকারীদের প্রতিরোধের মুখে নারী কমিশন ঘুমিয়ে পড়েছে, পাঠ্যপুস্তক সংস্কার কমিটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই দাবিটির ভবিষ্যৎ জানি না৷ তবে জাতি হিসাবে আমাদের অবিমৃষ্যকারিতা আমাদের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোহীন পরিণতিই ডেকে আনছে। শিশুমনের বিকাশের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন - এমন বেশির ভাগ মানুষই মনে হয় দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের স্বার্থে এই অযৌক্তিক বিরোধিতা থেকে মুক্তি চাইবেন। প্রত্যাশা থাকবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে উঠুক আনন্দময়তায়।   

 

 

 

 

 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ