চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটে চললেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানুষ যেন তেমন সাফল্য পাচ্ছে না৷ এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করতে পারে নতুন এক ওষুধ, যা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে তাকে অকেজো করে তোলে৷
ছবি: Reuters
বিজ্ঞাপন
ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি বন্ধ করতে নতুন ওষুধ
03:40
This browser does not support the video element.
শতাব্দীর শুরুতে বিশেষজ্ঞরা লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলেন৷ এশিয়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল ফুসফুসের রোগ সার্স৷ এক অজানা করোনা-ভাইরাস ছিল তার উৎস৷ ২০০৩ সাল পর্যন্ত এই রোগে প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়, ৮,০০০-এরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হন৷ সার্স নিরাময়ের উপায় আজও জানা যায়নি৷
জার্মানির বন ও মিউনিখ শহরের ভাইরোলজিস্টদের এক দল এবার এমন এক ওষুধ আবিষ্কার করেছে, যা শুধু সার্স-এর বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে না৷ সাইক্লোস্পোরিন নামের এই ওষুধ নানা রকমের করোনা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে৷ ভাইরাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে এমনটা আগে সম্ভব হয়নি৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের ড. মার্সেল ম্যুলার বলেন, ‘‘সাইক্লোস্পোরিন বিভিন্ন ধরনের করোনা ভাইরাসকে কাবু করতে পারে৷ একদিকে রয়েছে সার্স ও ম্যার্স-এর মতো বিপজ্জনক ভাইরাস, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক৷ আছে নানা রকমের সর্দির ভাইরাস, শীতকালে যা ছড়িয়ে পড়ে৷ তাছাড়া বিড়াল ও শুয়োরের মতো জন্তু-জানোয়ারদের জন্য বিপজ্জনক ভাইরাসও রয়েছে৷ সাইক্লোস্পোরিন সেগুলিকেও পরোক্ষভাবে কাবু করতে পারে৷''
রোগের নাম ‘চিকুনগুনিয়া জ্বর’
ডেঙ্গু জ্বরের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি৷ চিকুনগুনিয়া জ্বর অনেকটা তার মতোই৷ নতুন এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, কারণ আফ্রিকার এই জ্বর ইতিমধ্যে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মশাবাহিত রোগ
এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস এজিপটি নামক মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে থাকে৷ তবে কেবল নারী এডিস মশাই এই জ্বরের জন্য দায়ী৷
ছবি: picture-alliance/AP
লক্ষণ
মশার কামড় খাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে শরীরে এই রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে৷ এক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া ও শরীর বেঁকে যেতে পারে৷ জ্বর উঠতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত৷ থাকতে পারে ২ থেকে ১২ দিন৷ তবে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেঙ্গু নয়
অনেকে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর মনে করতে পারেন৷ কারণ এদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে৷ তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার মূল পার্থক্য হলো, এই জ্বরে হাড়ের জোড়াগুলো ফুলে যায়, ডেঙ্গু জ্বরে যেটা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিকিৎসা
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়৷ এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তাই চিকুনগুনিয়া সারাতে সাধারণ জ্বরের চিকিত্সা নিলেই চলবে৷ বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার ও প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে৷ তবে চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DW
ঢাকায় চিকুনগুনিয়া
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর গত বছর এই রোগের উপর একটি সমীক্ষা চালায়৷ এ সময় ঢাকার মোট ৬০১ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ এদের মধ্যে ২০৭ জনই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় জানা যায়৷ সে হিসেবে ঢাকার প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইতিহাস
১৯৫২-৫৩ সালে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় প্রথম এই রোগের আবির্ভাব ঘটে৷ বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকার দোহার ও কেরানীগঞ্জে৷ পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে নতুন করে পাবনার সাঁথিয়ায় আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ আর ঢাকায় প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালের আগস্টে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
ভাইরাসের উপর সাইক্লোস্পোরিন-এর যে প্রভাব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে, গবেষণাগারে তা হাতেনাতে দেখানো সম্ভব৷ ড. ম্যুলার বলেন, ‘‘সংক্রমিত যে কোষগুলি রয়েছে, তাতে ভাইরাসের উপর সবুজ রং লাগানো হয়েছে৷ সাইক্লোস্পোরিন যোগ করলে কোষগুলির রং ফিকে হয়ে আসে৷ অর্থাৎ কোষে আর সংক্রমণ ঘটে না৷''
এটা কী ভাবে ঘটে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তবে একটি বিষয় জানা গেছে৷ ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে তার বাহকের শরীরের নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন ব্যবহার করে৷ এখানে তার রং নীল৷ তাদের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন হলো সাইক্লোফেলিন৷ মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আলব্রেশ্ট ফন ব্রুন বলেন, ‘‘সাইক্লোফেলিন-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অন্য প্রোটিনকে ঠিকমতো ভাঁজ হতে সাহায্য করা৷ মজার কথা হলো, ভাইরাল প্রোটিন ঠিকমতো ফোল্ড না হলে ভাইরাস বাড়তে পারে না৷''
ত্বকের কয়েকটি রোগ
চর্মরোগে কম-বেশি সবাই ভোগেন৷ গরমকালেই এ জাতীয় রোগ বেশি দেখা দেয়৷ এছাড়া অপরিষ্কার ও ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস চর্মরোগের একটা অন্যতম কারণ৷ নিয়ম মেনে চললে রোগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
একজিমা
একজিমা হলো ত্বকের এমন একটি অবস্থা যেখানে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়৷ একেক ধরনের একজিমার লক্ষণ একেক রকম হয়৷ তবে সাধারণভাবে লালচে, প্রদাহযুক্ত ত্বক; শুষ্ক, খসখসে ত্বক; ত্বকে চুলকানি; হাত ও পায়ের ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি ইত্যাদি হলো একজিমার লক্ষণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একজিমার কারণ
ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পু থেকে একজিমার সংক্রমণ হতে পারে৷ অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়াও একজিমার কারণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সোরিয়াসিস
এটি ত্বকের একটি জটিল রোগ৷ তবে সোরিয়াসিস কেবল ত্বক নয়, আক্রমণ করতে পারে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও৷ সাধারণত ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়৷ সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷ ত্বকের কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেয়৷
ছবি: Fotolia
আজীবন চিকিৎসা
সোরিয়াসিস রোগ যত পুরোনো হয়, ততই জটিল হতে থাকে৷ তাই দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার আওতায় আসা জরুরি৷ আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়৷ সোরিয়াসিস বংশগতভাবে হতে পারে৷
ছবি: Fotolia
আর্সেনিকের কারণে চর্মরোগ
আর্সেনিক যুক্ত পানি খেলে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যেমন ত্বকের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ কিংবা পুরো ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে, হাত ও নখের চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যেতে পারে৷ এছাড়া ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা-কালো দাগ দেখা দেয়াসহ হাত ও পায়ের তালুর চামড়ায় শক্ত গুটি বা গুটলি দেখা দিতে পারে৷
ছবি: DW
চরম পর্যায়
আর্সেনিক যুক্ত পানি পানের শেষ পরিণতি হতে পারে কিডনি ও লিভারের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়া; ত্বক, ফুসফুস ও মূত্রথলির ক্যানসার হওয়া; কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দাদ
শরীরের যে-কোনো স্থান ফাংগাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একে দাদ বলে৷ এই আক্রমণ মাথার চামড়ায়, হাত-পায়ের আঙুলের ফাঁকে কিংবা কুঁচকিতে হতে পারে৷ এটা ছোয়াঁচে রোগ৷ আক্রান্ত স্থান চাকার মতো গোলাকার হয় এবং চুলকায়৷ মাথায় দাদ দেখতে গোলাকার হয় এবং আক্রান্ত স্থানে চুল কমে যায়৷ প্রতিকার পেতে সাবান ও পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান প্রতিদিন ধুতে হবে৷ এছাড়া আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখা জরুরি৷
ছবি: MEHR
পাঁচড়া
শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়৷ পরিষ্কার কাপড়-চোপড় ব্যবহার ও নিয়মিত গোসল করলে খোসপাঁচড়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়৷
ছবি: MEHR
ঘামাচি
গরমের সময় ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা৷ এটি সাধারণত তখনই হয় যখন ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ঘাম বের হয় না এবং ত্বকের নীচে ঘাম আটকে যায়৷ এর ফলে ত্বকের উপরিভাগে ফুসকুড়ি এবং লাল দানার মতো দেখা যায়৷ কিছু কিছু ঘামাচি খুব চুলকায়৷ ঘামাচি সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়৷ তবে ঘামাচি সারানোর জন্য ত্বক সবসময় শুষ্ক রাখতে হবে এবং ঘাম শুকাতে হবে৷
ছবি: imago stock&people
ব্রণ
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে এই রোগটি দেখা দেয়৷ তাই একে টিনএজারদের রোগও বলা যেতে পারে৷ ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এ রোগটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবারসহ চকলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে৷ এছাড়া বেশি করে পানি ও শাক-সবজি খেতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
সাইক্লোস্পোরিন-এর মতো ওষুধ যদি সাইক্লোফেলিন আটকে দেয়, তখন তা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে না৷ আক্রান্ত কোষে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়৷ মানুষ বা পশু সুস্থ থাকে৷ তবে ওষুধ যখন, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তো থাকবেই৷ ড. ম্যুলার বলেন, ‘‘সাইক্লোস্পোরিন-এর ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো ইমিউন সিস্টেম-এর উপর চাপ৷ ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে৷ ভাইরাস সংক্রমণের সময় এটা ঘটলে তার প্রভাব থেকে যায়৷''
এর পরের ধাপ হলো সাইক্লোস্পোরিন-এর অণু এমনভাবে পরিবর্তন করা, যাতে তা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে গিয়ে ইমিউন সিস্টেমের উপর চাপ সৃষ্টি না করে৷ এক্ষেত্রে প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হয়েছে৷ ড. ব্রুন বলেন, ‘‘সাইক্লোস্পোরিন ডেরিভেটিভ সত্যি মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে৷ প্রথমে অবশ্যই পরীক্ষামূলকভাবে, হেপাটাইটিস সি-র ক্ষেত্রে৷ দেখা গেছে, ডেরিভেটিভ প্রয়োগ করে তার বংশবৃদ্ধি হয় আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে৷''
নতুন এই চিকিৎসা সব রোগীর নাগালে আনতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে৷ নতুন ও বিপজ্জনক ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নতুন এই প্রক্রিয়া বিপ্লব আনতে পারে৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷