তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় রিমান্ডে থাকা আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের রিমান্ড স্থগিত চেয়ে শুনানিতে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন বলেন, ‘‘আরে রাখেন, ভাগ্য ভালো যে উনাকে গুম করেনি৷''
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা' প্রচারের অভিযোগে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় রিমান্ডে থাকা আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজত থেকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট৷
সেই সঙ্গে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শহিদুলের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷
শহীদুলকে রিমান্ডে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর আবেদন জানিয়ে তাঁর স্ত্রী রেহনুমা আহমেদের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন৷ রিট আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন ও সারা হোসেন৷ এছাড়া আইনজীবী শাহদীন মালিক, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও তানিম হোসেইন শাওন আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার৷
কী ঘটেছিল ৫ আগস্ট?
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনটি এখন ন্যায়বিচারের আন্দোলনের পরিণত হয়েছে৷ ৫ আগস্ট আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ ও ‘সরকারি’ ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা৷ বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে৷
ধানমন্ডিতে ৪ আগস্টের হামলার প্রতিবাদে পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দু’টি মানববন্ধন কর্মসূচি দেয়া হয়৷ মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হন৷
ছবি: Nasirul Islam
জিগাতলা যাওয়ার সিদ্ধান্ত
শাহবাগ থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জিগাতলা মোড়ের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: Nasirul Islam
জিগাতলার উদ্দেশে মিছিল
দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব হয়ে জিগাতলার দিকে মিছিল নিয়ে এগোয়৷ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ জিগাতলা মোড়ে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে দিয়ে ফিরছিল, অন্য অংশটি দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশের মুখোমুখি৷ আন্দোলনকারীরা পুলিশের উদ্দেশে চিৎকার করছিল৷
ছবি: Nasirul Islam
টিয়ার শেল
এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের দিকে টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়তে শুরু করে৷ শিক্ষার্থীরাও দূর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়ে ও টিয়ার শেলের ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে আগুন জ্বালায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
লাঠিসোঁটা হাতে ওরা কারা
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, টিয়ারশেল থেকে বাঁচতে ধানমন্ডি লেকের পাশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশ বেরিয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে যুবকেরা শিক্ষার্থীদের তাড়া দেয়৷ একই সময়ে ঢাকা কলেজ থেকে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়৷ এ সময় অনেকেই রক্তাক্ত হন৷
ছবি: Nasirul Islam
সায়েন্স ল্যাবরেটরিতেও টিয়ারশেল
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগ হাজির হলে বেলা দেড়টার পর পুলিশ সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিক থেকে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া শুরু করে৷ তারপরই লাঠিসোঁটা, রড, পাইপ, রামদা হাতে মাথায় হেলমেট পরা একদল যুবক শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে কাঁটাবনের দিকে তাড়িয়ে দেন৷ ধাওয়ার সময় তাঁরা কয়েকজনকে মারধর করেন৷
ছবি: Nasirul Islam
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
সাংবাদিকেরা যখন আহতদের ছবি তুলছিলেন, তখন অতর্কিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে তাঁদের শাসান৷ পুলিশের সামনেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে বলেন, সাংবাদিকদের কেউ যদি ছবি তোলেন তাহলে সবাই ‘রক্তাক্ত’ হবেন৷ ছবি তুলতে গিয়ে মারধরের শিকার হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক৷ তাদের ক্যামেরাও ভেঙ্গে ফেলা হয়৷
ছবি: Nasirul Islam
পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
হেলমেট পড়া, রাম দা, কিরিচ, লাঠি, রড হাতে যুবকরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলেও সে সময় পুলিশ ছিল নীরব৷ তাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পুলিশের ভূমিকা৷
ছবি: Nasirul Islam
ন্যায়বিচার চাই
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের ওপর বার বার হামলার পর দাবি পরিবর্তিত হয়ে স্লোগান হয়ে ওঠে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বা ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই’৷
সারাহ হোসেন শুনানিতে শহীদুলের রিমান্ড স্থগিতের জন্য যুক্তি দেখানোর সময় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন বলেন, ‘‘আরে রাখেন, ভাগ্য ভালো যে উনাকে গুম করেনি৷'' আগামী বৃহস্পতিবার বিষয়টি আবার শুনানির জন্য আসবে বলে আদালতের আদেশে জানানো হয়৷
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইসবুক লাইভে আসেন শহীদুল আলম৷ ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন৷ এরপর রোববার রাতে শহীদুলকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ৷ এ সময় বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে তারা হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়৷ সিসি ক্যামেরায় টেপ মেরে দেয়৷ নিরাপত্তারক্ষীকে আটকে রাখা হয়৷
সোমবার রমনা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করে হাজির করা হয় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে৷ গোয়েন্দা পুলিশ শহীদুলকে দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাইলে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷