গত কয়েক দিন ধরে নানা সুরে ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন ফেসবুক প্রধান মার্ক সাকারবার্গ৷ এবার মার্কিন কংগ্রেসের দু-দুটি শুনানিতেও সেই সুর শোনা গেল৷ তবে ভাঙলেও মচকাবার পাত্র নন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
জাঁদরেল সংসদ সদস্যদের প্রশ্নবানের সামনেও নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন সাকারবার্গ৷ টি শার্ট ও জিনসের বদলে পুরোদস্তুর স্যুট পরে সংসদে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি৷ প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে ৪৪ জন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি৷ তথ্য ফাঁস থেকে শুরু করে রাশিয়ার অবৈধ প্রভাবসহ ফেসবুকের নানা ত্রুটির জন্য বার বার ক্ষমা চেয়েছেন সাকারবার্গ৷ ভুলত্রুটির দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত নন তিনি৷ কিন্তু এইসব দুর্বলতা দূর করতে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেন নি তিনি৷ শুধু প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে ভবিষ্যতে নিজের টিম নিয়ে ‘ফলো আপ' বা সংসদের কাছে ফিরে আসার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷ তবে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অপব্যবহার রুখতে তিনি প্রস্তাবিত ‘অনেস্ট অ্যাডস অ্যাক্ট' নামের আইনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন৷
সাকারবার্গ বলেন, ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করা তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল৷ তিনি অবশ্যই ভুল করেছেন৷ তবে অতীতেও অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছেন তিনি৷ বর্তমান চ্যালেঞ্জেরও সমাধান করবেন তিনি৷
সংসদে সাকারবার্গ যেভাবে প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়েও নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন, তার ফলে পুঁজিবাজারে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য গত দুই বছরে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে গেছে৷ গত মাসে তথ্য ফাঁস কেলেঙ্কারির জের ধরে শেয়ারের মূল্য পড়ে গিয়েছিল৷
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে শুধু ট্রাম্প প্রশাসন জেরবার হচ্ছে না, ফেসবুকের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে৷ নির্বাচনের আগে রাশিয়ার এজেন্টরা ভুয়া নামে অ্যাকাউন্ট খুলে ছলে-বলে-কৌশলে মার্কিন ভোটারদের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়েছে৷ খোদ ফেসবুক গত সেপ্টেম্বর মাসে এই অভিযোগ স্বীকার করেছে৷ অন্যদিকে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের কোম্পানি বিশাল সংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে সমালোচনার ঝড় তুলেছে৷ এই দুটি বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্রের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি সাকারবার্গ৷ মার্কিন ফেডারেল বাণিজ্য কমিশন বিষয়টির তদন্ত করছে৷ তাদের সঙ্গে এক চুক্তির আওতায় তথ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ ফেসবুক৷
ফেসবুকের সঙ্গ ছাড়লো যারা
তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে ফেসবুকের সাম্প্রতিক কেলেংকারির ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে #ডিলিটফেসবুক শীর্ষক একটি প্রচারণা চলছে৷ অনেকে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দিচ্ছেন৷
ছবি: Colourbox/Maxx-Studio
স্পেসএক্স ও টেসলা
ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা ও রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর উদ্যোক্তা এলোন মাস্ক টুইটারে জানিয়েছিলেন, তিনি এই দুই কোম্পানির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেবেন৷ এরপর সেগুলো মুছে দেয়া হয়৷ প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন অনুসারী ছিল৷
ছবি: Reuters/T. Baur
মজিলা
জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার ফায়ারফক্সের কোম্পানি মজিলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখবেন৷ আর তারা ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করার কথা না বললেও সেখানে নিয়মিত পোস্ট দেয়া স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে৷
ছবি: LEON NEAL/AFP/Getty Images
কমার্ৎসবাঙ্ক
জার্মানির অন্যতম বড় এই ব্যাংকও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছে৷ ব্যাংকের ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রধান জার্মান এক পত্রিকাকে বলেন, ‘‘তথ্য নিরাপত্তা ও ব্র্যান্ডের সুনাম রক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ছবি: Daniel Roland/AFP/Getty Images
হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাকটন
২০০৯ সালে ফেসবুকে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন৷ এরপর তিনি হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেন৷ সেই হোয়াটসঅ্যাপ ২০১৪ সালে ফেসবুক কিনে নিয়ে বিলিওনেয়ার হয়ে যান ব্রায়ান অ্যাকটন৷ এরপর ২০১৭ সালে হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে দিয়ে সিগন্যাল নামে আরেকটি অ্যাপে বিনিয়োগ করেন৷ ২০ মার্চ তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘এখন সময়৷ #ডিলিটফেসবুক৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gerten
সোনোস
স্পিকার তৈরির মার্কিন এই প্রতিষ্ঠান ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ তবে কোম্পানিটি ফেসবুককে একেবার ‘পরিত্যাগ’ করবে না, কারণ, এটি ‘খুবই কার্যকর’ একটি সেবা বলে মনে করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Sonos
ড. ওয়েটকার
জার্মানির খাদ্য বিষয়ক এই কোম্পানি ২১ মার্চ টুইটারে একটি পোস্ট দিয়ে বলেছিল, পোস্টটি এক হাজারবার রিটুইট হলে কোম্পানির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেয়া হবে৷ এক হাজারবার রিটুইট হতে সময় বেশি লাগেনি৷ তারপর কথা অনুযায়ী ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেয় ড. ওয়েটকার৷ কিন্তু একদিন পর আবার ফেসবুকে ফিরে আসে তারা৷ কারণ হিসেবে বলে, ফেসবুক ছাড়া ‘থাকতে পারেনি’ তারা৷
ছবি: Dr. Oetker
ফেসবুকের উত্তর
কিছু কোম্পানির ফেসবুক ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ফেসবুক বলেছে, ‘‘যত কোম্পানির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাদের বেশিরভাগই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ তারা আশ্বস্ত হয়েছে যে, আমরা বর্তমান চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে গ্রহণ করব এবং আরও ভালো কোম্পানি হয়ে উঠবো৷’’